পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ে গত এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ শুরু করেছে। প্রতিদিন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।
তবে চিকিৎসকরা বলছেন আবহাওয়া পরিবর্তন ও রমজান মাসে মানুষ তেলে ভাজা ইফতার সামগ্রী বেশি খাওয়ায় ডায়রিয়া শুরু হয়েছে। এসব রোগীদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা বেশি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮ জন শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এর আগে গত মার্চ মাসে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৯৫ জন। চলতি মাসে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ শতাধিক রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা যায়।
এদিকে সপ্তাহ জুড়ে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্তের হার বাড়তে থাকায় বর্তমানে প্রতিদিনই হাসপাতাল ভর্তি হচ্ছে রোগীরা। তবে বেডের অভাবে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের।
রোববার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায় চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা।
জানা যায়, পঞ্চগড় জেলায় আবহাওয়া পরিবর্তন ও খাদ্যভাসের পরিবর্তনের কারণে দিন দিন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার ৫ উপজেলায় প্রতিদিনই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলার প্রধান চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রোগীরা ভর্তি হচ্ছে। তবে ডায়েরিয়ায় বয়স্কের তুলনায় শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে দিন দিন বহিঃবিভাগ ও হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১০০ শয্যা হাসপাতালে শিশু শয্যা/বেড রয়েছে মাত্র ১৬টি কিন্তু প্রতিদিনি তার দ্বিগুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। ফলে বেডের অভাবে হাসপাতালে মেঝেতে বিছানা করে রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে৷
আবার অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরছেন। তবে জানা গেছে পুরো পঞ্চগড় জেলায় একজন মাত্র শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা৷ এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এছাড়া বাকি চারটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তেমন কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই।
এছাড়া সময় মতো চিকিৎসক ও নার্সদের ডাকলে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রোগী ও স্বজনদের। বেশির ভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসতে হয় রোগীর স্বজনদের। অনেকেই চিকিৎসা না পেয়ে ভাল চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে ২৫০ শর্য্যা নির্মাণাধীন হাসপাতালে ভবনের কাজ শেষের দিকে, ভবনের কাজ শেষ হলে সেবার মান আরও বাড়বে।
অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে আসা পঞ্চগড় সদর উপজেলার জগদল এলাকার বসিরুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, মেয়ে হঠাৎ বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হলে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। কিন্তু হাসপাতালে এসে যে সেবা পাওয়ার দরকার সেই অনুযায়ী সেবা পাচ্ছি না।
একই কথা বলেন সদর উপজেলার আরেক বাসিন্দা ফাতেমা বেগম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালে ছেলেকে ডায়রিয়ার কারণে ভর্তি করেছি রাতে আর চিকিৎসক আসে সকালে। বেড না পেয়ে মেঝেতে থেকে ছেলের চিকিৎসা করাচ্ছি। এখনও কিছু বুঝতেছি না, বমি বন্ধ হলেও পায়খানা বন্ধ হচ্ছে না৷
তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর এলাকার ফারুক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, হঠাৎ করে আমার মেয়ের পাতলা পায়খানা ও বমি। বাড়িতে চিকিৎসা করেছি কিন্তু সুস্থ না হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে আসছি। আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ হয়েছে৷ ডাক্তার বলেছে মেয়ে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসাল্টেন্ট (শিশু বিশেষজ্ঞ) ডা. মনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গরম ঠাণ্ডা মিলে আবহাওয়ার যে বিরুপ প্রভাব তৈরি হয়েছে তা শিশুরা ধারণ করতে পারছে না। এছাড়াও খাদ্যাভাস একটি বড় বিষয়, রমজান মাসে মানুষ তেলে ভাজা ইফতার সামগ্রী খাচ্ছে এসব নানা কারণেই বিভিন্ন পেটের পীড়া দেখা দিচ্ছে। ফলে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন বহিঃবিভাগ থেকে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যারা বেশি অসুস্থ তাদের হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আমরা আমাদের সাধ্য মতো সেবা দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি মানুষকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. কাওসার আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সেবা প্রধানের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কাজ প্রায় শেষের দিকে। কাজ শেষ হলে রোগীরা আরও বেশি সেবা পাবেন। তবে বর্তমানে রোগীদের পুরো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২২
আরএ