ঢাকা : ঘর সাজানোর মত অতিথির সামনে টেবিল ভর্তি খাবার সাজিয়ে দিতে কার না ভালো লাগে। আবার সেই খাবার যদি হয় মুখরোচক তাহলে তো কথাই নেই।
রন্ধনপদ্ধতি খাবারকে যেমন আকর্ষণীয়, সুগন্ধযুক্ত ও সহজপাচ্য করে তুলে তেমনি রান্নার আরও একটি বিশেষ গুণ হলো এতে অনেক ক্ষতিকারক জীবাণু ধ্বংস হয়।
খাবারকে আকর্ষণীয় করার জন্য আমরা রান্নায় কত উপাদানই না ব্যবহার করি। কিন্তু খাবার শুধু মুখরোচক ও আকর্ষণীয় হলেই তো হবে না, খেয়াল রাখতে হবে এতে পুষ্টিগুণ কতটুকু বজায় থাকল। রান্না করার আগে ও রান্নার সময় আমরা জেনে না জেনে খাবারের অনেক পুষ্টির অপচয় করি।
যেমন রান্নার সময় আমিষ বা চর্বি জাতীয় খাবারের থেকে ভিটামিন ও মিনারেল এর অপচয় বেশি হয়। ভিটামিন এ, ডি, ই ও কে পানিতে দ্রবীভূত না হলেও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও ভিটামিন সি খুব সহজেই পানিতে দ্রবীভূত হয় এবং এই দু’টো ভিটামিন আলো, বাতাস ও তাপেও খুব দ্রুত নষ্ট হয়।
একটু সতর্ক হলেই কিন্তু এই অপচয় রোধ করা যায়। আসুন জেনে নেই খাবারের পুষ্টিগুণ অপচয় রোধে আমাদের কি কি করণীয়:
• আমিষ ও চর্বি জাতীয় খাবার অতিরিক্ত তাপে নষ্ট হয়। তাই এসব খাবার খুব বেশি সময় ধরে রান্না করা উচিৎ নয়।
• শাকসবজি কাটার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
• শাকসবজি খুব ছোট ছোট টুকরা না করে যতটা সম্ভব বড় করে কাটতে হবে কারণ তাতে বাতাসের সংস্পর্শে ভিটামিনের অপচয় কম হয়।
• ফলমূল ও সবজির খোসার নিচেই ভিটামিন বেশি থাকে, তাই খুব মোটা করে খোসা কাটা উচিৎ নয়।
• কাটা শাকসবজি খুব বেশি সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখা উচিৎ নয় তাতে পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিনের অপচয় হয়।
• শাকসবজি অনেকক্ষণ কেটে না রেখে রান্না করার আগমুহূর্তে কাটলে ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘সি’ এর অপচয় রোধ করা যাবে।
• শাক রান্না করার সময় অবশ্যই পরিমাণমত তেল দিতে হবে। তা না হলে তেলে দ্রবণীয় ভিটামিন যেমন ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যাবে না।
• আপেল, পেয়ারা, কামরাঙ্গা জাতীয় ফলমূলের কখনও খোসা ফেলে দেয়া উচিৎ নয়। কারণ খোসার নিচেই প্রধান পুষ্টি উপাদান এবং আঁশ থাকে।
• রান্নার আগে চাল খুব বেশি সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখা উচিৎ নয় কিংবা বারবার ধোয়া উচিৎ নয়। এতে পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন যেমন ভিটামিন ‘বি১’ বা ‘থায়ামিন’ এর অপচয় হয়।
• ভাত রান্নার সময় ভাতের মাড় ফেলে না দিয়ে পরিমাণ মতো পানিতে রান্না করা উচিৎ।
• মাছ, মাংস বা ডিম রান্না করার সময় কম পানিতে দ্রুত আঁচে রান্না করুন। এতে ভিটামিন ‘বি১২’ এর অপচয় রোধ করা যাবে।
• ভিটামিন সি এর অপচয় রোধে শাকসবজি রান্না করার সময় অতিরিক্ত পানিতে সিদ্ধ না করে পরিমাণমত পানিতে রান্না করা উচিৎ।
• শাকসবজি সিদ্ধ পানি ফেলে দেয়া উচিৎ নয়।
• মূল জাতীয় সবজি যেমন আলু, কচু, মিষ্টি আলু খোসাসহ সিদ্ধ করে তারপর খোসা ফেলে দিলে ভিটামিন ‘সি’ এর অপচয় রোধ করা যাবে।
• রান্নার সময় ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায় তাই গাজর, শসা, টমেটো জাতীয় সবজি কাঁচা খাওয়া যেতে পারে।
• শাকে প্রচুর পানি থাকে তাই শাক রান্না করার সময় অতিরিক্ত পানি দেয়ার প্রয়োজন নেই।
• শাকসবজি ঠাণ্ডা পানিতে সিদ্ধ না করে পানি গরম করে তাতে সবজি ছেড়ে দিয়ে রান্না করলে পুষ্টিমান অনেকটাই বজায় থাকবে।
• রান্নার সময় খাবার সোডা ব্যবহার করলে ভিটামিন বি ও সি এর অপচয় হয়।
• মাইক্রোওয়েভ এবং প্রেসার কুকারে রান্না করলে খাবারের পুষ্টি উপাদান অনেকটাই বজায় থাকে কারণ এতে যেমন খুব তাড়াতাড়ি রান্না হয় আবার তেমন খুব বেশি পানিও দিতে হয় না ।
তাই এখন থেকেই পুষ্টিগুণ মেনে রান্না করুন। আর পরিবারসহ আপনাকে রাখুন সুস্থ এবং স্বাভাবিক।
লেখক : ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট, লেজার মেডিক্যাল সেন্টার
বাংলাদেশ সময় : ১৪২৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১২