ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মেহেরপুরে ৩২৪ ডায়রিয়া রোগী ভর্তি, ঘণ্টা ঘণ্টা বাড়ছে সংখ্যা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২২ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২২
মেহেরপুরে ৩২৪ ডায়রিয়া রোগী ভর্তি, ঘণ্টা ঘণ্টা বাড়ছে সংখ্যা

মেহেরপুর: মেহেরপুরে ডায়রিয়া মারাত্মক আকার ধারণ করেছে । ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে মেহেরপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০৮ জন রোগী।

ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে নতুন রোগীর সংখ্যা।

মেহেরপুর হাসপাতালটির ডায়রিয়া ওয়ার্ডের নার্স ইনচার্জ নিপু আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ডাইরিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন ১০৮ জন। এ নিয়ে চারদিনে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন ৩২৪ জন। আর চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৩১ জন।

রোগী ভর্তির সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এসব রোগীদের অধিকাংশই পুরুষ এবং বয়সে তরুণ। রোগীর চাপ সামলাতে ২৫ জন সেবিকা (নার্স) ছাড়াও অন্যান্য ওয়ার্ড থেকে নার্স এনে সেবা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এপ্রিল মাস থেকে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ভর্তি থাকছেন ১০০-১২০ জন রোগী। এছাড়া প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছেন আরও ১০০-১১০ জন।

হাসপাতালে ডাইরিয়া রোগীদের জন্য ১০টি শয্যা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় হাসপাতালের তিনতলা বিশিষ্ট একটি আবাসিক ডরমেটরিকে ডাইরিয়া ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও সেখানে জায়গা পাচ্ছেন না রোগীরা। ওয়ার্ডের প্রতিটি রুমে চারজন ও হাসপাতালের বারান্দাসহ বিভিন্ন স্থানে গাঁদা-গাঁদি করে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের।

রোগীরা জানান, হাসপাতাল থেকে স্যালাইনসহ বেশ কিছু ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। তবে বাইরে থেকেও কিছু ওষুধ কিনতে হচ্ছে। নার্সরা ভালোভাবে দেখভাল করছেন।  

চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভিড়ে অনেক স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ।

এদিকে, হঠাৎ করে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (আইইডিসিআর) জানানোর পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে বাড়তি ব্যবস্থা। স্যালাইনসহ অন্যান্য ওষুধপত্র ও চিকিৎসাসেবা ভালো করা হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক জমির মো. হাসিবুস সাত্তার।

তিনি বলেন, ডায়রিয়া মূলত পানিবাহী রোগ। এছাড়া রাস্তার খাবার, বাসি-পচা খাবার খেলেও ডায়রিয়া হতে পারে। তবে ডায়রিয়া হওয়ার মূল কারণ দূষিত পানি। খাবার পানিসহ নিত্য ব্যবহার্য কাজে বিশুদ্ধ এবং নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে হবে।

মেহেরপুর শহরে গতবারও ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল। কিন্তু এ সময়ে দেশের কোথাও ডায়রিয়া রোগী পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র মেহেরপুর জেলাতে আক্রান্তের বিষয়টি ওপর মহলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি মেহেরপুর পৌরসভার মেয়রকে তাদের সাপ্লাইয়ের পানি পরীক্ষা করারও অনুরোধ করা হয়েছে।

হাসিবুস সাত্তার আরও জানান, আক্রন্তের বিষয়টি আইডিসিআরকে জানানো হয়েছে। আগামী কয়েকদিনে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়লে মেহেরপুর জেলাকে ডায়রিয়া মহামারি স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হবে।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) মো. মোকলেচুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ মেহেরপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা। পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে বাকিরাও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন।
গত ২০-২৫ দিনের ব্যবধানে ডায়রিয়ার প্রকোপ অস্বাভাবিক বেড়েছে। এ জন্য ভাজাপোড়া খাবার না খাওয়া, মৌসুমি ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা, খাবার আগে-পরে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করাসহ বাসি ও বাইরের খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

আইইডিসিআরের সহকারী মাঠ গবেষক রেজাউল করীম বলেন, আমরা বাংলাদেশের মেহেরপুরসহ ২২টি জেলাতে কলেরার গবেষণা কাজ করছি। গত চারদিনে হঠাৎ এ জেলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। ২৭ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর স্যাম্পল পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৭ জনের শরীরে কলেরার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে।

বাংলাদেশের অন্য কোনো জেলাতে এমন না হাওয়ায় বিষয়টি উদ্বেগজনক। আর যাদের শরীরে কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে, তাদের অধিকাংশই শহরের বাসিন্দা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২২
এফআর/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।