সুনামগঞ্জ: টানা ১৫ দিনের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জে নিম্নাঞ্চল এলাকার প্লাবিত হলেও গেল গত পাঁচদিনে রোদে তা কমতে শুরু করেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে পানি কমে গেলেও দুর্গন্ধ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সঙ্গে থাকতে হচ্ছে মানুষদের।
বৃহস্পতিবার (২৬ মে) সরজমিনে সুনামগঞ্জের পৌর শহরের নতুনপাড়া, মরাটিলা, পশ্চিম হাজিপাড়া ও উত্তর আরপিন নগর এলাকা ঘুরে দেখা যায় এলাকাগুলোতে নেমে গেছে বন্যার পানি। তবে পানির সঙ্গে আসা ড্রেনের ময়লা আবর্জনা। এছাড়া টানা পানিতে থাকায় ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ।
তেঘরিয়া এলাকার আব্বাস ফয়েজ বলেন, পানি কমলেও ড্রেনের সব ময়লা রয়ে গেছে। পানির সঙ্গে টানা ৭দিন যুদ্ধ করেছি এখন আমার স্ত্রী জ্বরে আক্রান্ত ছেলে মেয়ের ডায়রিয়া।
বড়পাড়া এলাকার সিদ্দিকা বেগম বলেন, ‘আমরার বাসাত কমর পানি আছিল এই পানি নামছে ৪ দিনে আমার ৫ বছরের ছেলেটা এই পানি নাড়ছে এখন দুইদিন ধরি জ্বর কিচ্ছু খাইতে পারের না শিশু ডাক্তার দেখাইয়া ওষুধ খাওয়াইরাম’।
অন্যদিকে বন্যার পরে কোনো উদ্যোগ নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ এমন দাবি করে স্থানীয়রা বলেন, ‘পৌরসভা খালি নামেই পৌরসভা ত্রাণ দিসে দেখছি দেরিতে এখন এলাকা জুড়িয়া দুর্গন্ধ আবর্জনা এইগুলো কে দেখতো তারা কোনো নাড়াছড়া নাই’।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বাংলানিউজকে বলেন, ঢলের সঙ্গে আসা ময়লা আবর্জনা এখনও ভাসছে সেটা আমি নিজেও জানি, কাউন্সিলরদের নিয়ে আমরা সভা করেছি। ময়লা আবর্জনা দ্রুত সরানোর কাজ শুরু হবে। যেখানে ব্লিচিং পাউডার দেওয়া প্রয়োজন, সেখানে সেটিও করা হবে।
হাসপাতালে নেই রোগী
বন্যার পর সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়া খবর পাওয়া গেলেও সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের চিত্র ভিন্ন। কর্তৃপক্ষ বলছে বন্যা পরবর্তী রোগের প্রকোপ তারা যেভাবে আসবে বলে ধারণা করেছিলেন এবার ঠিক তেমনটা হয়নি।
সর্বশেষ গেল বুধবার পর্যন্ত পেটের অসুখ নিয়ে ৪১ জন রোগী ভর্তি ছিলেন।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বন্যার পর আমরা যেমনট ভেবে ছিলাম এমনটা হয়নি, ওয়ার্ডে ৪১ জন রোগী পেটের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ভর্তি হলেও সেগুলোর সব যে বন্যা পরবর্তী সেটা বললে ভুল হবে, এটা সদর হাসপাতাল বিভিন্ন উপজেলা থেকে মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে আসে তাই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এবার কম।
অন্যদিকে বন্যার পানি নামলেও সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ হোসেন বললেন, বন্যার পানি কমলেও পানিবাহিত রোগের সংখ্যা বাড়তে পারে। গ্যাংরিংসহ মারাত্মক রোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এখনও অনেক জায়গায় বন্যার পানি আটকে রয়েছে। যে টিউবওয়েলগুলো পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল সেখান থেকে পানি খাওয়া যাবে না, টিউবওয়েলের পানি জীবাণুযুক্ত থাকতে পারে। যারা গোসলের জন্য পানি ব্যবহার করবেন, তারা যেনো ফিটকিরি দিয়ে ব্যবহার করে। খাবার পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে উপজেলা হাসপাতাল, ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিকে বিশুদ্ধকরণের ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২২
এসআইএস