আজ ১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহ দেওয়া এবং নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন নিশ্চিত করাই এ দিবসের উদ্দেশ্য।
অস্ট্রিয়ার বংশোদ্ভূত জীববিজ্ঞানী কার্ল ল্যানস্টেইনার ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের জনক ১৮৬৮ সালের ১৪ জুন তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯০০ সালে মতান্তরে ১৯০১ সালে ব্লাড গ্রুপ সিস্টেম আবিষ্কার করেন তার এই আবিষ্কার উন্মোচন করে দিয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক বিশাল অধ্যায় এর আগে রক্তদানের বিষয়টি মোটেও সহজ ছিল না তার জন্মদিনে তাকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানাতে ১৪ জুন উদযাপন করা হয় বিশ্ব রক্তদাতা দিবস।
এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো জনগনকে রক্তদানে উৎসাহিত করা, স্বেচ্ছায় রক্তদানে সচেতন করা, ভয় দূর করা, নতুন নতুন রক্তদাতা তৈরি করা এবং নিরাপদ রক্ত ব্যবহারে উৎসাহিত করা এ দিবস পালনের আরও উদ্দেশ্য দেশের জনগনকে প্রাণঘাতী রক্তবাহিত রোগ হেপাটাইটিস্ বি, হেপাটাইসিস্ সি, এইডস্, সিফিলিস এবং ম্যালেরিয়া রোগ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য স্বেচ্ছা রক্তদান ও রক্তের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।
দেশে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ৯ লাখ ব্যাগ রক্ত লাগে এর কেবল ৩২ শতাংশ আসে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে বাকি ৬৮ শতাংশ আসে রক্তগ্রহীতার স্বজন ও অপরিচিতদের কাছ থেকে রক্তের চাহিদা থাকায় অবৈধ ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত নিচ্ছে মানুষ। এতে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনে বাড়ছে ঝুঁকি রক্তদান কতটা নিরাপদ এটা নিয়ে কারো কারো মধ্যে সংশয় রয়েছে দৈহিকভাবে রক্তদানে কোনো ঝুঁকি নেই পুরুষ ও নারীর (প্রাপ্ত বয়স্ক) শরীরে প্রায় ৬ লিটার রক্ত থাকে বলে ধরে নেওয়া হয় একজন মানুষ এখান থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত রক্ত একবারে দান করতে পারেন রক্ত সাধারণভাবে সংগ্রহ করা হয় ৪৫০-৫শ মিলিলিটার সেই হিসাবে রক্ত দান করলে শরীর থেকে বড় পরিমাণ রক্ত চলে যায় না রক্ত পরিসঞ্চালন আইন অনুযায়ী, ৫০ কেজির ওপরে থাকলেই একজন মানুষ রক্ত দান করতে পারেন ৪৫০-৫শ মিলি আর ৪৫ কেজি হলে ৩৫০মিলি ফলে রক্তদানে শারীরিক ক্ষতি হওয়ার কোনো আশঙ্কাই নেই।
রক্ত মানব দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পূর্ণমাত্রায় রক্ত থাকলে মানব দেহ থাকে সজীব ও সক্রিয় আর রক্তশূণ্যতা বা এনিমিয়া দেখা দিলেই শরীর অকেজো ও দুর্বল হয়ে প্রাণশক্তিতে ভাটা পড়ে আর এই অতি প্রয়োজনীয় জিনিসটি কারখানায় তৈরি হয় না বিজ্ঞানীদের যথাসাধ্য চেষ্টা সত্ত্বেও এখনও রক্তের বিকল্প তৈরি করা সম্ভব হয়নি, নিকট ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে এমনটাও আসা করা যায় না মানুষের রক্তের প্রয়োজনে মানুষকেই রক্ত দিতে হয়, জীবন বাঁচানোর জন্য রক্তদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দেশে পুরো রক্ত না দিয়ে কম্পোনেন্ট আলাদা করে সরবরাহ করাতে এখনো ঘাটতি রয়েছে যেমন, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য প্লাটিলেট আলাদা করা কিংবা অন্য রোগীর জন্য প্লাজমা আলাদা করে দেওয়ার ব্যবস্থা এখনো সীমিত এখন বিভাগীয় শহরগুলোতে অল্প পরিসরে চালু হয়েছে এ বিষয়টিতে জোর দিতে হবে নয়তো প্রয়োজন না থাকলেও এক উপাদানের সঙ্গে অন্য দুই উপাদানও রোগীর শরীরে প্রবেশ করছে এটা আলাদা করতে পারলে আরো দুজন রোগীকে সেবা দেওয়া যাবে।
রক্তস্বল্পতা, ওজন কম, অস্বাভাবিক রক্তচাপ, ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তি, হেপাটাইটিস বি ও সি, ম্যালেরিয়া, এইডস অথবা কোনো যৌনরোগাক্রান্ত, ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য গ্রহণকারী ব্যক্তিরা রক্তদান করতে পারেন না কম ঝুঁকিপূর্ণ রক্তদাতা থেকে রক্ত সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং পরীক্ষার মাধ্যমে যে রক্ত পরিসঞ্চালন করা হয়, তাকে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন বলে নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে একজন রক্তদাতা শারীরিক সুস্থতার পাশপাশি হৃদরোগ, স্ট্রোকের মতো প্রাণহরণকারী রোগ থেকেও নিরাপদ থাকতে পারে এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলেও অনেকে এ বিষয়ে অবগত নয় সাধারণত কম ঝুঁকিপূর্ণ রক্তদাতা নির্বাচন ও রক্ত সংগ্রহ, সব রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রে বাধ্যতামূলক হেপাটাইটিস বি ও সি, এইচআইভি, ম্যালেরিয়া ও সিফিলিস এই পাঁচটি স্ক্রিনিং করা, অপ্রয়োজনে রক্ত পরিসঞ্চালন না করা এবং রক্তের সঠিক ও যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করাই নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কৌশল।
রক্ত যারা স্বাভাবিকভাবে প্রদান করে তার বাইরে রক্তদাতার সংখ্যা বাড়ছে না, ফলে সংকট কাটছে না রক্ত যেহেতু রোগীর স্বজনদেরই সংগ্রহ করে দিতে হয়, তাই নিকট আত্মীয়, সহকর্মী, বন্ধুসহ অনেকেই রক্তদান করেন তাদের বলা হয় টার্গেটেড বা পার্টি ডোনার।
রক্তদানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
ডা. এ জেড এম মোস্তাক হোসেন
উপাচার্য, রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ সময় ১৪৩০ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২২
এসআইএস