ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

জিনগত বিরল সব রোগ নির্ণয় এখন দেশেই সম্ভব

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪১ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২২
জিনগত বিরল সব রোগ নির্ণয় এখন দেশেই সম্ভব

ঢাকা: ইলার্স-ডানলোস সিন্ড্রম, মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিজিজেস বা উশ্যার সিন্ড্রম এই রোগ গুলোর নাম কি কখনো শুনেছেন? যদি শুনে না থাকেন তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই কারণ এই রোগগুলো জিনগত ত্রুটি জনিত রোগ আর এগুলোয় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল যার কারণে উপরে উল্লেখিত তিনটিসহ আরও বেশকিছু রোগ আছে যেগুলোকে রেয়ার জেনেটিক ডিজঅর্ডার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

রেয়ার জেনেটিক ডিজঅর্ডার বা বিরল জিনগত ত্রুটি জনিত রোগ হচ্ছে এমন একটি রোগ যা প্রতি ১০ হাজারে সর্বোচ্চ পাঁচ জনের মধ্যে থাকতে পারে।

এই বিরল রোগগুলোর ৮০ শতাংশই জিনগত ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে। তাই এসব রোগকে বিরল জেনেটিক রোগ বলা হয়। এসব রোগের লক্ষণগুলো ৮৩ শতাংশ ক্ষেত্রে শুরু হয় ১৬ বছরের আগেই। ৮৯.৬ শতাংশ বিরল রোগই মানুষের বিকাশকে বিশেষ করে স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশকে প্রভাবিত করে। সারাবিশ্বে বিরল জিনগত রোগ আছে মূলত সাত হাজার, যেগুলি প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে বিস্তার করছে।  

জিনের ভেতর যখন কোনো ক্ষতিকারক পরিবর্তন/ত্রুটি ঘটে তখন তা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে প্রভাবিত করে আর জেনেটিক রোগের সৃষ্টি করে বিরল বিভিন্ন জেনেটিক রোগ নিয়ে সারাবিশ্বে প্রচুর পরিমাণে গবেষণা হয়ে থাকে এবং এসব রোগের সম্ভাব্য চিকিৎসা নিয়েও প্রতিনিয়ত কাজ চলছে।
 
জানা যায়, জেনেটিক টেস্টের মাধ্যমে একটি পারিবারিক প্ল্যানিং দেওয়া সম্ভব। দক্ষ জেনেটিক কাউন্সেলিং দ্বারা ভবিষ্যতে একটি পরিবার সম্ভাব্য কী কী জেনেটিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে তা জানা সম্ভব ও পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশে মানুষের বিরল রোগগুলোর জেনেটিক ডায়াগনোসিস করার পর্যাপ্ত ফ্যাসিলিটি এবং সচেতনতার অভাব থাকায় সঠিকভাবে রোগগুলো নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছেনা। এছাড়াও, বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের সাধারণ মানুষের জন্য জেনেটিক টেস্ট যথেষ্ট ব্যয়বহুল।

হোল এক্সম সিকোএন্সিং নামক জেনেটিক টেস্ট করার প্রয়োজনে অনেকেই দেশের বাইরে চলে যান। সে ক্ষেত্রে শুধু টেস্টের খরচসহ অন্যান্য পারিপার্শ্বিক সকল খরচ মিলিয়ে একটি পরিবারের কমপক্ষে এক থেকে দেড় লাখ টাকার প্রয়োজন পড়তে পারে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী জেনেটিক টেস্টের রিপোর্ট ডেলিভারিতে সময় লাগে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ।

এক সময় দেশে কিছু ল্যাব ছিল যেখানে শুধুমাত্র সিঙ্গেল জিন এনালাইসিসের কাজ হতো, তবে ২০১৬ সালে ঢাকার পান্থপথে চালু হওয়া ‘নিউরোজেন হেলথকেয়ার’ হল বাংলাদেশে প্রথম জিনোমিক বায়োটেক কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত একটি হিউম্যান জেনেটিক ল্যাবরেটরি।

নিউরোজেন থেকেই সর্বপ্রথম বাংলাদেশি নিউরোডেভলোপমেন্টাল রোগে আক্রান্ত রোগীদের বিরল জেনেটিক ত্রুটির রেফারেন্স ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে এবং এমন বিরল রোগের মিউটেশন ল্যান্ডস্কেপও তৈরি করেছে ।

এই ল্যাব প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্যোক্তা ড ডেফিল।  বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান সায়েন্টিস্ট ডক্টর মোহাম্মদ উদ্দিন ডেফিল দুবাইয়ের মোহাম্মদ বিন রাশিদ ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক এবং বর্তমানে কানাডার সিককিড হাসপাতালের এসোসিয়েট ইনভেস্টিগেটর পদে নিযুক্ত আছেন।

২০১৫ সালের শেষের দিকে, ডক্টর ডেফিল জেনেটিক পরীক্ষা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সহযোগিতায় কাজ করার চেষ্টা করেছেন এবং অনুধাবন করেছেন যে বাংলাদেশে তখন পর্যন্ত অত্যাধুনিক জেনেটিক ল্যাব এবং প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল নেই। এরপরেই তিনি নিজ উদ্যোগে একটি প্রাইভেট ল্যাব স্থাপনের কাজ শুরু করেন।

দেশে এই প্রতিষ্ঠান থেকেই সর্বপ্রথম বিরল রোগ ট্রি-ম্যান সিনড্রোম এর জেনেটিক ত্রুটি নির্ণয় করা সম্ভব হয়। এছাড়াও, বেশ কিছু বিরল রোগসহ অন্যান্য রোগের জেনেটিক ত্রুটি উন্মোচিত হয়েছে যেগুলো বিভিন্ন সময়ে দেশি-বিদেশি মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। জিনোম এনালাইসিসের সময় নিউরোজেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিএসএমএমইউ, ঢাকা মেডিক্যালের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও সহযোগিতা পেয়েছে নিউরোজেন।

এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৭০০টিরও বেশি জিনোম এনালাইসিস করেছে প্রতিষ্ঠানটি। নিউরোজেন হেল্থকেয়ারে বিরল জেনেটিক রোগ শনাক্তের জন্য জেনেটিক টেস্টগুলির খরচ বিদেশের তুলনায় প্রায় ৩ ভাগের এক ভাগ। টাকার অংকে যেটা প্রায় ১০ হাজার টাকা থেকে ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। সঠিকভাবে জেনেটিক টেস্টে রোগ শনাক্তের পর চিকিৎসার পদক্ষেপ নেওয়া হলে চিকিৎসা সংক্রান্ত অন্যান্য অপ্রাসঙ্গিক খরচ কমে আসবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪১ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২২
কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।