ঢাকা : আধুনিক নারীদের একটু বেশিই কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। দিনের বেলা কর্মক্ষেত্রে খাটুনি।
আমাদের দেশের কর্মজীবী পুরুষদের এখনও পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অর্থ উপার্জনটাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। তাই তাদের এ মানসিকতার পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত নারীকেই অনেক দায়িত্ব নিতে হচ্ছে।
আপনারা মনে করুন যুগসন্ধিক্ষণের নারী। যে সময়টা আপনারা পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছেন। যার কারণে আপনার উত্তরসূরিরা পাবে সুন্দর একটি পরিবেশ। যেখানে নারীর পাশাপাশি পুরুষও একই রকম কাজ করবে।
তাই এমন সময়ে নিজেকে ফিট রাখতে প্রয়োজন সচেতনতা। তাই পরিবারের সদস্যদের প্রতি যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি নিজের যত্নে একটু সচেতন হোন।
পরিবারের কর্ত্রী হিসেবে নারীকেই পরিবারের সদস্যদের ভাল-মন্দ দেখতে হয়। আবার কর্মক্ষেত্রেও নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হয়।
সারাদিন ঘরে-বাইরে কর্মময় জীবনের পরে শরীর ও মনের উপরে যে চাপ পড়ে তা কাটানোর জন্য নিয়মিত ঘুম ও খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু কয়জনই বা পারে সবকিছু ঠিক রেখে নিজের প্রতি যত্নশীল হতে ।
বেশিরভাগ সময়েই কর্মজীবী নারীরা সময়ের অভাবে নিজেদের খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে পারে না যা তাদের পরবর্তী স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ । কাজের চাপ ও অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়ার কারণে অনেক নারীই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
সুস্থ জীবন-যাপনের জন্য প্রয়োজন সঠিক পুষ্টি উপাদান । নারীদের বিভিন্ন বয়সে পুষ্টি চাহিদা বিভিন্ন হয়। তাই প্রতিটি কর্মজীবী নারীকে প্রয়োজনীয় চাহিদা অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করতে হবে।
সঠিক পুষ্টি উপাদান যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, অ্যালার্জি, আর মাথাব্যথার মতো রোগকে দূরে ঠেলে দেয় তেমনি সুন্দর চুল, ত্বক ও স্বাস্থ্য উপহার দেয়।
একটু সচেতন হলেই কিন্তু যে কোনো কর্মজীবী নারী শত ব্যস্ততার মধ্যেও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারেন ।
নিচে এ সম্পর্কে কিছু টিপস দেয়া হল:
সারাদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে । পানির মাধ্যমেই অক্সিজেন ও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সম্পূর্ণ শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং দূষিত বর্জ্য পদার্থ শরীর থেকে বের হয়ে যায়।
সারাদিনে অতিরিক্ত ক্যাফেইন যুক্ত খাবার যেমন চা, কফি, চকোলেট খাওয়া উচিৎ নয়।
সকালের নাশতা কখনও বাদ দেয়া উচিৎ নয়।
সকালের নাশতা খুব বেশি ভারি হওয়াও উচিৎ নয়। এতে হজমের জন্য শরীরে প্রচুর শক্তির অপচয় হয়। ফলে ঝিমুনি ও দুর্বল বোধ হয়।
সকালের নাশতায় যে কোনো একটি ফল খাওয়া যেতে পারে। ফল হজমশক্তি বাড়িয়ে মস্তিষ্কে গ্লুকোজ সরবরাহ করে যা সারাদিন মানুষকে কর্মক্ষম রাখে।
খাবারের তালিকায় শর্করা জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটির পরিমাণ কম রেখে শাকসবজি ও সালাদের পরিমাণ বেশি রাখতে হবে।
প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় আমিষ জাতীয় খাবার থাকতে হবে। আমিষের সবচেয়ে ভালো উৎস হচ্ছে ডাল, ডিম, মাছ, মাংস, বাদাম। যারা নিরামিষভোজী তারা আমিষের ঘাটতি পূরণের জন্য কয়েক প্রকারের ডাল একসঙ্গে মিশিয়ে রান্না করে খেতে পারেন।
প্রতিদিন আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। আঁশযুক্ত খাবার রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণ করে, হৃদরোগ ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। আঁশযুক্ত খাবার হচ্ছে তাজা ফলমূল, শাকসবজি, লাল চাল ও লাল আটা।
খুব বেশি প্রক্রিয়াজাত ও ভাজা পোড়া খাওয়া উচিৎ নয়।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারের খুব ভালো উৎস হল দুধ, শাকসবজি ইত্যাদি।
রাতের খাবার খুব হালকা হওয়া উচিৎ।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে দু’ঘণ্টা আগে রাতের খাবার শেষ করা উচিৎ।
সারাদিনে অন্তত ৩০ মিনিট যে কোনো হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাচলা করার অভ্যাস করতে হবে । শারীরিক ব্যায়াম যেমন শরীরকে সুস্থ রাখে তেমনি মনে প্রশান্তি আনে।
লেখক : ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট, লেজার মেডিক্যাল সেন্টার
বাংলাদেশ সময় : ১২৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১২