ঢাকা : শরীরের অঙ্গগুলোকে সচল রাখতে পারলেই সুস্থ থাকবে মানবদেহ। আর এর জন্য প্রয়োজন খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখা এবং নিয়মিত কিছু শারীরিক অনুশীলন।
আকুথেরাপিস্টদের মতে, কেবল এ পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে মানবদেহের শতকরা ৮০ ভাগ রোগ নিরাময় সম্ভব। অর্থ খরচ কমানোর পাশাপাশি অনেক জটিল রোগের হাত থেকেও মুক্তি মিলতে পারে।
শনিবার সকালে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর স্বাস্থ্য বিভাগের আয়োজনে এক কর্মশালায় দেশের বিশিষ্ট আকুথেরাপিস্টরা এসব তথ্য জানান।
ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের কনফারেন্স কক্ষে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
`আপনার স্বাস্থ্য আপনার হাতে` শীর্ষক এ কর্মশালায় দেশের আকুথেরাপিস্ট আলাউদ্দিন বিশ্বাস, রুহুল আমীন, সিরাজুল মুনীর, আলমগীর আলম ও ফারুক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালার প্রথম পর্বে ওষুধের বিকল্প এ চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
আকুথেরাপিস্টরা বলেন, মানবদেহের প্রত্যেকটি অঙ্গ আরেকটি অঙ্গের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। এই অঙ্গগুলো ঠিকমতো সচল রাখতে পারলে শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ থাকবে।
তারা বলেন, আকুথেরাপি হল শরীরের ব্যবহারিক বিষয়। মানবদেহের রোগ নির্ণয়, রোগ নিরাময় এবং রোগ প্রতিরোধ বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন আকুথেরাপি। শরীরে সুচের মতো চাপ প্রয়োগ করে আকুথেরাপি দেওয়া হয়।
আকুথেরাপিস্টদের মতে, মানবদেহ হল সুপার কম্পিউটার। কম্পিউটার যেমন কমান্ড ছাড়া কাজ করে না। ঠিক তেমনি দেহের প্রত্যেকটি অঙ্গ কমান্ডের মাধ্যমে কাজ করে। আর মানবদেহের হাত ও পায়ের তালুর সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সম্পর্ক বিদ্যমান। এক্ষেত্রে হাত এবং পায়ের তালুতে সামান্য চাপ প্রয়োগ করে সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, কোমর ব্যথা, মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথাসহ বিভিন্ন হাইপার টেনশনজনিত রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। এমনকি ক্যান্সার থেকেও মুক্তি দিতে পারে আকুথেরাপি।
তবে এই অনুশীলন নিয়মিত ও ঠিকমতো করতে হবে।
আকুথেরাপিস্টরা বলেন, খাদ্যগ্রহণ এবং লাইফ স্টাইল ঠিক রাখার মধ্য দিয়ে শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ রাখা যায়। খাদ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে শরীরে জৈব শক্তি অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এই জৈব শক্তি শরীরে শক্তি জোগায়।
উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, যে কোনো কঠিন খাদ্য একটু চিবিয়ে খেলে তাতে মুখের লালা মিশ্রিত হয়। এতে খাদ্য দ্রুত হজম হবে।
এছাড়া সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন হলে শরীরের ভারসাম্য বজায় থাকবে। তাতে রোগ বালাই থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে। এর জন্য প্রয়োজন লাইফ স্টাইল ঠিক রাখা। হাত-পায়ের ছোটখাট কিছু ব্যায়াম হতে পারে শরীরে ভারসাম্য রক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় উপায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আকুথেরাপি বর্তমানে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিকের মতো ওষুধের ব্যবহার অনেক কমে গেছে। তারা এখন আকুথেরাপির দিকেই মনোনিবেশ করছেন।
কর্মশালায় উপস্থিত আকুথেরাপিস্টরা জানান, বাংলাদেশে ২০০৩ সাল থেকে আকুথেরাপির বিষয়ে কাজ করছেন তারা। তাদের প্রচেষ্টায় ‘সুচিকিৎসা জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠনও গড়ে উঠেছে।
ফাইন্ডেশনের সভাপতি রুহুল আমীন বলেন, ‘জীবন ধারার সঙ্গে শরীর কিভাবে সুস্থ রাখা যায় আকুথেরাপি তারই একটা পদ্ধতি মাত্র। আকুথেরাপি মানবদেহের রোগ নিরাময়ে শরীরকে সাহায্য করে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও অনালগ্রন্থি যথাযথ সক্রিয় রাখে। যার ফলে আমরা নিখুঁত স্বাস্থ্যের অধিকারী হই। ’
তিনি বলেন, লাইফ স্টাইল এবং খাদ্য গ্রহণ পদ্ধতি ঠিক থাকলে শরীর শতভাগ সুস্থ রাখা সম্ভব।
ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘আজীবন শরীর সুস্থ রাখতে হলে আকুপ্রেসার দরকার। এর মাধ্যমে শরীরের ৮০ ভাগ রোগ নিরাময় সম্ভব। ’
বর্তমানে এই চিকিৎসা পদ্ধতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি এটাকে সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে বলে মন্তব্য করেন।
কর্মশালায় অংশ গ্রহণকারীদের শারীরিক বিভিন্ন কসরতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক কিছু সমস্যারও সমাধান পাওয়া যায়।
পরে বাংলানিউজের পাঠকদের পাঠানো নানা প্রশ্নের উত্তর প্রদান পর্ব পরিচালনা করা হয়।
কর্মশালায় বাংলানিউজের হেড অব নিউজ মাহমুদ মেনন খান, কান্ট্রি এডিটর সাইফুল ইসলাম, হেলথ এডিটর তানিয়া আফরিন, কালচারাল এডিটর রবাব রসাঁ, লাইফ স্টাইল এডিটর শারমীনা ইসলাম ছাড়াও সংবাদ মাধ্যমটির বিভিন্ন সেকশনের কর্মীরা অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময় : ১২৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১২