ঢাকা : দেশের ১১৭ জন দরিদ্র রোগীর বিনামূল্যে গ্লুকোমা ও ছানি (ফ্যাকো) অপারেশন করলেন লন্ডনের কিংস্টন হাসপাতালের বিশিষ্ট চক্ষু চিকিৎসক ও সার্জন ডা. হোমান শেরাফাত।
এমন মহৎ উদ্যোগই দরিদ্র মানুষগুলোর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে এনেছে।
বাংলাদেশ আই কেয়ার সোসাইটির ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় ঢাকার বনানীস্থ এমএমআর আই ফাউন্ডেশন ও রিসার্চ সেন্টারে ২৫শে ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত বিনামূল্যে গরীব রোগীদের সর্বাধুনিক ফ্যাকো মেসিনের মাধ্যমে গ্লুকোমা ও ছানি অপারেশন করা হয়।
লন্ডনের গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট এর আর্থিক সহযেগিতায় এই চক্ষু চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে মোট ১১৭ জন দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে গ্লুকোমা ও ছানি (ফ্যাকো) অপারেশন করা হয়।
এছাড়াও ঢাকার বাইরে থেকে আগত রোগীদের বিনামূল্যে থাকা-খাবার ব্যবস্থা ও ওষুধ দেয়া হয়েছে।
এই অপারেশন দলে ছিলেন, লন্ডনের কিংস্টন হাসপাতালের বিশিষ্ট চক্ষু চিকিৎসক ও সার্জন ডা. হোমান শেরাফাত, গ্লুকোমা রিসার্চ এন্ড আই হসপিটালের ডাইরেক্টর ও চিফ কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. মো. মুস্তাফিজুর রহমান, কিংস্টন হাসপাতালের চক্ষু চিকিৎসক ও সার্জন ডা. জিয়াউল হক, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাবনীন রহমান, গ্লুকোমা রিসার্চ এন্ড আই হসপিটালের জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট ডা. সাহেদারা বেগম এবং অন্যান্য সহকারীবৃন্দ।
গ্লুকোমা রিসার্চ এন্ড চক্ষু হাসপিটালের ডাইরেক্টর ও চিফ কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, গ্লুকোমা চোখের এমন একটি মারাত্মক রোগ যা বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে অন্ধত্বের দ্বিতীয় প্রধান কারণ। বাংলাদেশ আই কেয়ার সোসাইটির দেশব্যাপী একটি জরিপে দেখা গেছে ৩৫ বৎসর বয়স ও তার উর্ধ্বে শতকরা ৩.১ ভাগ মানুষ গ্লুকোমা রোগে ভুগছে। শতকরা ১০ ভাগ লোক গ্লুকোমা রোগ আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। শতকরা ৯৬ ভাগ মানুষ গ্লুকোমা রোগের নামই শুনেননি।
যাদের গ্লুকোমা রোগ আছে তাদের মধ্যে শতকরা মাত্র ছয় জন লোকের গ্লুকোমা রোগটি আছে বলে সনাক্ত করা হয়েছে এবং চিকিৎসা পাচ্ছে। বাকি শতকরা ৯৪ জন জানেই না যে তারা এই রোগে ভুগছে। তাদের স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে সনাক্ত করে চিকিৎসা না করলে অন্ধত্ব অনিবার্য। বিশেষ করে গ্লুকোমা পরীক্ষার জন্য ৩৫ বছর বয়সের পর থেকে বৎসরে একবার চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে চোখ পরীক্ষা করা উচিৎ।
তিনি আরো জানান, আমাদের দেশে বহু লোক গ্লুকোমা রোগে ভুগে নিজের অজান্তেই সারা জীবনের জন্য অন্ধ হয়ে যান। অথচ এটি কোনো দুরারোগ্য ব্যাধি নয়। একবার গ্লুকোমা রোগ নির্ণয় হলে নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করলে অন্ধত্বের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
নীরব অন্ধত্বের কারণ চোখের উচ্চচাপ। এ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
গ্লুকোমা রোগী তার রোগ ও চিকিৎসার অভিজ্ঞতা আশপাশের লোকজনকে জানালে অন্যরাও অন্ধত্বের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। গ্লুকোমা রোগ থেকে চোখের যে দৃষ্টিশক্তি হারায় তা আর ফিরে পাওয়া যায় না।
গ্লুকোমা রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করে এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতাই পারবে অন্ধত্বের হাত থেকে বাঁচাতে।
চোখের ছানি রোগ সম্পর্কে অধ্যাপক রহমান জানান যে, বাংলাদেশের পূর্ণ বয়স্কদের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ অন্ধত্বের প্রধান কারণ হল চোখের ছানি। সাধারণ মানুষ ছানিকে চোখে পর্দা পড়া বলে থাকে। ছানি হলে চোখের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে যাবে, ছানি পরিপক্ক হলে চোখ দিয়ে দেখা যাবে না এবং চোখের মনির রং কালোর পরিবর্তে ধূসর বা সাদা দেখা যাবে। ছানির একমাত্র চিকিৎসা হল অপারেশন। সময়মত অপারেশ না করে দেরি করলে বিভিন্ন ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং পরবর্তীতে চোখ সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বর্তমানে ছানি অপারেশনের পর একটি কৃত্রিম লেন্স ভিতরে লাগিয়ে দেওয়া হয় যাতে রোগী চশমা ছাড়াই পূর্বের মত দেখতে পায়।
উল্লেখ্য, গ্লুকোমা রিসার্চ এন্ড আই হসপিটাল বাংলাদেশ আই কেয়ার সোসাইটি একটি অলাভজনক স্বাস্থ্য সেবামূলক প্রকল্প। এখানে রোগীদের অত্যন্ত কম খরচে চোখের যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অপারেশন করা হয় এবং গরীব রোগীদের বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়।
নর্থ আমেরিকান বাংলাদেশি ইসলামিক কমিউনিটি (নাবিক) এর আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবিত হাসপাতালের ৯তলা ভবনের প্রথম দফার (ব্যাজম্যান্ট, গ্রাউন্ড ও ফার্ষ্ট ফ্লোর) কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে যা আগামী ২০১২ সালের জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এবং অন্যান্য দাতা প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা পেলে হাসপাতালের ৯তলা ভবনের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে এবং এতে সমগ্র বাংলাদেশের জনগণ সুলভমূল্যে গ্লুকোমাসহ চোখের যাবতীয় রোগের চিকিৎসাসেবা পাবে বলে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময় : ১০০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১২