ঢাকা: ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন।
তিনি বলেন, ১০০টি ডেঙ্গু কেসের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই খুবই মাইল্ড (হালকা ধরনের) হয়ে থাকে এবং আক্রান্তরা বাসাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক সেবা নিয়ে সুস্থ হতে পারেন।
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন ভবনের সভাকক্ষে বর্ষাকালীন জরিপ প্রকাশ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন।
অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, যখনই থেমে থেমে বৃষ্টি হবে, তখনই বেশি ডেঙ্গু হবে। এই সময়ে যদি কারো শরীর ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, বা শরীর কিছুটা লাল হয়ে যায়, যেটাকে অনেকে র্যাশ বলে, তাহলে যেন সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। প্রথম দিনেই যদি শনাক্ত করে ফেলা যায়, তাহলে সব থেকে ভালো হয়। কিছু সাধারণ রক্তের পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু নির্ণয় করা যায়। এই পরীক্ষাগুলো প্রায় প্রতিটা উপজেলা পর্যায়েই করা যায়। এ জন্য আমি বলবো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু শনাক্ত হলেই আমাদের মধ্যে একটা প্রবণতা থাকে হাসপাতালে যাব কিনা। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করে বলতে চাই, ১০০টি ডেঙ্গু কেসের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই খুবই মাইল্ড ( হালকা ধরনের) হয়ে থাকে এবং তারা বাসাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক সুস্থ হতে পারেন।
ডেঙ্গু হলে সতর্কতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারও যদি ডেঙ্গু শনাক্ত হয়, তখন দেখতে হবে দিনে চার-পাঁচবার অথবা বারবার বমি হচ্ছে কিনা, তীব্র ঘাম হচ্ছে কিনা, শরীরের কোনো স্থান থেকে রক্তপাত হচ্ছে কিনা, কোনো অসংলগ্নতা দেখা দিচ্ছে কিনা। যদি এরকমটা হয়, তাহলে দ্রুত যে কোনো চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
সবার কাছে বিনীত অনুরোধ, দেশের সব স্থানে ডেঙ্গু চিকিৎসার সুবিধা আছে। সুতরাং ডেঙ্গু হলেই কাউকে যেন শহরমুখী হতে না হয়। ডেঙ্গুর জন্য সাধারণ চিকিৎসাই যথেষ্ট। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর যারা চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় থাকবেন, তাদের কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। ডেঙ্গু চিকিৎসায় আমাদের চিকিৎসকদের সামর্থ বেড়েছে।
অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর বলেন, যারা বাসায় থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন, যাদের কোনো ওয়ার্নিং সাইন নেই, তাদেরকে শুধু প্যারাসিটামল খেতে বলতে হবে, কোন রকম এন্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন হবে না। তাদের অনেক জ্বর থাকতে পারে, তারা যেন প্যারাসিটামলের পাশাপাশি লিকুইড খাবার খায়। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ দিনে ৬ থেকে ৮ গ্লাস স্যালাইন, জুস, ডাবের পানি, স্যুপ খেলে, এটাই তার জন্য পর্যাপ্ত। যদি শিশু হয়, ক্ষেত্র বিশেষে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক কতটুকু লিকুইড খাওয়াতে হবে, তা জেনে নিতে হবে। সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ৭ দিনে রোগী সুস্থ হয়ে যাবেন। আমাদের মনে রাখতে হবে এটা পাঁচ থেকে সাত দিনের একটা রোগ।
তিনি আরও বলেন, কোনো রোগীর ওয়ার্নিং সাইন থাকলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হবে। বাংলাদেশে ডেঙ্গুর জন্য নিবেদিত হাসপাতাল ছাড়াও সব হাসপাতালেই ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। ডেঙ্গুর জন্য নিবেদিত হাসপাতালেই যেতে হবে তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, বাড়ির কাছের যে কোনো হাসপাতালে গেলেই হবে। সেখানে ডাক্তারদের চিকিৎসার নির্দেশিকা দেওয়া আছে, ফ্লুইড ম্যানেজম্যন্ট ওয়াল চার্ট করা আছে।
রোবেদ আমিন আরও জানান, ক্ষেত্র বিশেষে আমরা দেখতে পাই, রোগীদের অনেক দামী দামী স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। অকারণেই বলা হচ্ছে, তাদের প্লাটিলেট লাগবে। ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা খুবই রেয়ার। কারও প্লাটিলেট রেট যদি পাঁচ হাজারের নিচে না নামে, কিংবা তীব্র রিস্ক ফ্যাক্টর না থাকে তাকে প্লাটিলেট দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং অপ্রয়োজনে প্লাটিলেট দিলে রোগীর ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২
আরকেআর/এমএমজেড