গাজীপুর: গাজীপুর জেলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষের চিকিৎসার ভরসা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। কিন্তু সেই হাসপাতালে রোগীরা পাচ্ছেন না তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা।
চিকিৎসার জন্য আসা রোগীরা পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বিশেষ করে দুপুর ১২টার পর থেকে রোগ নির্ণয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর কারণে রোগীদের বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে।
ওই হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, প্রতিদিন গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার শত শত রোগী সেবা নিতে আসে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখানে আসা রোগীদের অবস্থা বুঝে চিকিৎসা দেওয়া হয়, কোনো কোনো রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়। আবার কোন রোগীকে ভর্তি রাখা হয় এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিভিন্ন ওয়ার্ডে থাকা ভর্তি রোগীদের রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা করতে বলেন চিকিৎসকরা। পরে রোগী ও তার স্বজনদের পরীক্ষার নাম লিখে ছোট একটি টোকেন দেন নার্সরা। তখনই বেজে যায় প্রায় ১২টা। আর তখন রোগীরা ওইদিন কাউন্টারে টাকা জমা দিতে গিয়ে জানতে পারেন রোগ নির্ণয় পরীক্ষা সেদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পরের দিন সকালে টাকা জমা দিয়ে রোগ নির্ণয় পরীক্ষা করানো হলে তার পরের দিন রিপোর্ট পাওয়া যাবে। এতে চিকিৎসককে রিপোর্ট দেখাতে দুই দিন সময় বেশি লাগে। ফলে বাধ্য হয়ে বেশির ভাগ রোগী প্রাইভেট হাসপাতালে রোগ নির্ণয় পরীক্ষা করছেন।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টাকায় সেবা পেলেও বাধ্য হয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে রোগ নির্ণয় পরীক্ষা করতে হাজার হাজার টাকা গুনতে হয় রোগীদের।
অসহায় ও দরিদ্র রোগীরা অপেক্ষা করে ওই হাসপাতালে রোগ নির্ণয় পরীক্ষা করলেও তারা পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এছাড়াও রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ সকালে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চিকিৎসকরা গিয়ে ভর্তি রোগীদের সাথে ভালোমতো কথা বলেন না। দায়সারা চিকিৎসাসেবা দিয়ে চলে যান চিকিৎসকরা। নার্সরাও অবহেলা করেন রোগীদের। আর নতুন করে কোন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে তাদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। আর অসহায়ের মতো কাঙ্ক্ষিত সেবা নিতে হয় তাদের।
রাব্বী আহমেদ নামে একজন জানান, তার মাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি। সেখানে তার মাকে ভর্তি করা হয়। সকালে চিকিৎসক এসে তার মাকে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা এবং কিছু ওষুধ দেন। পরে নার্সরা তাকে দুপুর ১২টার দিকে রোগ নির্ণয়ের নাম লিখে একটি টোকেন দেন পরীক্ষা করাতে। পরে সে কাউন্টারে টাকা জমা দিতে গেলে সেখান থেকে তাকে বলে ওই দিনের জন্য রোগ নির্ণয় পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। দুই দিন সময় বেশি লাগবে বলে তিনি বাধ্য হয়েই প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করান। দুইদিন পর চিকিৎসক আবার নতুন করে অন্য পরীক্ষা করতে দেন। সেক্ষেত্রে একই অবস্থা হয়।
সিরাজ মিয়া নামে একজন জানান, প্রতিদিন সকালে চিকিৎসকরা যখন রোগী দেখতে বেডে বেডে যান তখন আনসার সদস্যরা ওই রোগীর কোন স্বজনকে কাছে যেতে দেয় না। ফলে ওই রোগীর কী সমস্যা হয়েছে তা জানা যায় না।
পরে নার্সদের কাছে জানতে চাইলে তারাও খারাপ আচরণ করেন। এতে রোগীর স্বজনরা বিভ্রান্তিতে পড়েন। এছাড়া কিছু কিছু ডাক্তার ও নার্স অসৌজন্যমূলক আচরণ ও ব্যবহার করে রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে ভালো মতো কথা বলা যায় না।
রাহেলা বানু নামে এক নারী বলেন, এ হাসপাতালে নতুন কোনো রোগী ভর্তি হলে রোগী কোনো বেডে থাকবে নার্সরা তার কোনো খোঁজ-খবর নেন না। রোগীকেই বেড খোঁজে নিতে হয়। এতেও ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগী ও স্বজনদের।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক তপন কান্তি সরকার বলেন, যে পরিমাণ রোগী আসে সে হারে শতকরা ১০ শতাংশ পরীক্ষা করতে পারি। এর কারণে অনেক রোগীদের অন্য হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পরীক্ষা করতে হয়। এছাড়া আমরাও চেষ্টা করছি রোগীদের সমস্যার সমাধান করতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২২
আরএস/এএটি