ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাংলার প্রাণের কাছে

‘আয়সাই আব্বাস গাইলেন হাঁকাও গাড়ি চিলমারী’

মাহবুব আলম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৬
‘আয়সাই আব্বাস গাইলেন হাঁকাও গাড়ি চিলমারী’ ছবি:নূর

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) ঘুরে: উত্তর জনপদের কুড়িগ্রামসহ বৃহত্তর রংপুরের লোকজ সংস্কৃতির প্রধান অনুষঙ্গ ‌ভাওয়াইয়া। আর আবহমান বাংলার এ অকৃত্রিম সুরকে বৈশ্বিকভাবে পৌঁছে দিয়েছেন পল্লী গায়ক আব্বাস উদ্দিন।

বিখ্যাত এ সুর স্রষ্টাকে কাছ থেকে দেখেছেন এমন একজন কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার বায়োবৃদ্ধ আবদুল কায়উম।
 
যিনি আব্বাস উদ্দিনের কণ্ঠে তার কালজয়ী গান ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই/হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দর এ রে…’ শুনেছেন। সচক্ষে দেখেছেন এই গুণী শিল্পীকে, এমনকি কথাও বলেছেন।
 
ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী জোড়গাছ পুরান বাজারের গরুহাট সংলগ্ন নিজ বাড়িতে বসে স্মৃতি আওড়াচ্ছিলেন কায়উম।

বলছিলেন, আব্বাসকে আমি দুইবার দেখেছি। উনি নামাজ পড়তেন, কপালে দাগ পড়েছিলো।

‘উনি চিলমারী রেজিস্ট্রি অফিসে আয়সাই, হাঁকাও গাড়ি চিলমারি… গান শুরু করলো। পানির কল নিয়ে ‘সলিম-উদ্দিন-কলিম উদ্দিনের’ও একটা গান গাইলেন। ’

তিনি বলেন, এর আগে কখনও এই গান শুনিনি। তবে আব্বাসের গান অনেকে গাইছে। এই গান উনার মুখেই প্রথম শুনি ওইদিন।

স্মৃতির ঝাঁপি মেলে বলতে থাকেন, ওইদিন আব্বাস দার্জিলিং থেকে চিলমারীতে আসবেন, তখন চিলমারী বন্দর এখান (বতর্মান গরুহাট) থেকে দেড় মাইল পূবে, ১০৪ বিঘা জমির মধ্যে বন্দরটা। এখন নদীতে ভেঙে গেছে।
 
‘জিপে নিয়ে উলিপুরের পর আর আসতে পারে নাই। আটক হয়ে (গরুর গাড়ির জট) গেছিলো, তখন এই সড়কটায় (উলিপুর টু জোড়গাছ বাজার) মারোয়ারি, বাঙালি মুসলমান বেপারীরা গরুর গাড়ি নিয়ে পাট নেয়। ’

তিনি বলেন, জ্যামে পইড়া আব্বাস জিজ্ঞেস করে, এ সমস্ত গাড়ি কোথাকার, কী করে, কোথায় যায়? অনেকে বললো পাট নিয়ে বন্দরে যায়। সে পাট জাহাজে করে যায় কলিকাতায় (কলকাতা), আসামে, ঢাকার কোনো কথাই নাই।  

হাস্যোজ্জ্বল মুখে প্রায় আশি বছরের কায়উম বলেন,  আমি তার (আব্বাস উদ্দিন) সঙ্গে কথাও বলেছি। আমি মুরখ্য, কিন্তু মুরখ্য কারও সাথে মিশি নাই। ব্রিটিশ পিরিয়ডে ফোর কেলাশ (ক্লাস) পাশ করেছি। চলাফেরা করতাম পড়াশোনা জানা মানুষের সঙ্গে।

তখন আমার বয়স ১৫-১৬ বছর (১৩৫২ বাংলা)। চিলমারী মাদ্রাসা বন্দরে ব্যবসা করি আর সুযোগ পেলে আড্ডা দেই।

কথাগুলো বলতে গিয়ে স্মৃতিরপটে যেনো ভাসছিলেন আট ছেলে-মেয়ের জনক কায়উম। যার মূল বাড়ি বহু আগেই বিলীন হয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্রের পেটে। ভাঙতে ভাঙতে সর্বশেষ গরুহাটায় এসে থিতু হয়েছেন, এরপরও পিছু ছাড়েনি ব্রহ্মপুত্র। ঢল এলেই উঠানে চলে আসে পানি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আব্বাসের ছেলে আব্বাসীর সঙ্গে দেখা হয়েছে। কিন্তু কথা বলার সুযোগ পাইনি। তারা স্ট্যান্ডার্ মানুষ, আমি মুরখ্য। তবে তার মেয়েকে (ফেরদৌসী রহমান) কখনও দেখিনি।

ওকি গাড়িয়াল ভাই গানের গীতিকার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের গীতিকার মুক্তিযোদ্ধা দেবব্রত দাশ বকশী বুলবুল বলেন, গানটি মূলত আব্বাস উদ্দীনের। তিনি এর সুরকার ও গীতিকার।

তবে অনেকে এটিকে প্রচলিত বা সংগৃহীত মনে করেন বলে জানান কুড়িগ্রামের অন্যতম এই সাংস্কৃতিক সংগঠক।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৬
এমএ/জেডএম

** আহা! সেকি সুর শিরিষের সারিন্দায়! (ভিডিও)
** হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দর এ রে...
** বাংলার প্রাণের কাছে বাংলানিউজ, সঙ্গী হোন আপনিও
** শেকড়ের সন্ধানে উত্তর জনপদে বাংলানিউজের মাহবুব ও নূর

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বাংলার প্রাণের কাছে এর সর্বশেষ