পঞ্চগড় থেকে: বাউল জীবনের শুরুটা কখন নিজেও জানেন না। তবে ক্ষেত-খামারে কাজ করার সময় গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠতেন ‘সাঁইজি তোমার বাইরাম খানা...’।
লালন প্রেমে মজে তিনি এখন দেশীয় বাদ্য খমক বাজিয়ে সুর তুলেন গানে গানে। আউল-বাউল-লালনের দেশে প্রায় বেশির ভাগ লোকজ শিল্পীরই এমন একটি সাধারণ গল্প রয়েছে।
গান শেখা বিষয়ে বাউল মানিক বলেন, ‘শিল্পীদের সঙ্গে মিশতে মিশতেই শিখেছি, তবে ওইরকমভাবে কোনো উস্তাদ ধরি নাই। রাতে কিংবা দিনে গানের আসরে ডাকলেই খমক নিয়ে যাই গান করতে। সেখানে আমরা ভাবের বা দেহতত্ত্বের গান গাই। ’
সব ধরনের শ্রোতারা এসব গানের আসরে বসে গান শুনে আনন্দ পায় বলেও জানান এই শিল্পী।
শ্রোতাদের গান শোনানোতেই শিল্পী হিসেব তার আত্মতৃপ্তি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি টাকা পয়সার কথা ভাবি না। ডাক পেলেই গান করি। তবে কেউ টাকা না দিলেও মর্ম দিয়ে গানটা শোনে। এটাই তৃপ্তি!’
‘তবে যাওয়া-আসার গাড়ি ভাড়া তো দেয়-ই,’ যোগ করেন পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার বাউল মানিক। লালনের গানে মজে যার আর ঘর-সংসার করা হয়নি, রয়ে গেছেন চিরকুমার।
কৃষি কাজের ব্যস্ততা শেষে উত্তর জনপদের কৃষকদের ঘরে ঘরে কিংবা উঠানে বাউল গানের আয়োজন সাধারণ ব্যাপার। এসব আসরে বাদ্য হিসেবে বেহালা, হারমোনিয়াম, তবলা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আগে ঢোলক, দোতরা ও একতারার ব্যবহার থাকলেও এখন তেমন একটা নেই।
দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কারিগর আছে, তবে খুবই কম। খোঁজ নিলে হাতে-গোণা দু’একজন পাওয়া যাবে। তবে তাদের অবস্থাও নাজুক।
শিল্পী মানিক তার বাউল জীবন প্রসঙ্গে আলাপ করতে গিয়ে এক পর্যায়ে বলেন, ‘আগে গ্রামের লোকজন পাগল বলতো, বলতো কি রে তুই নামাজ-রোজা নাই, শুধু গানই করিস! এখন তারাই গান শুনতে আসে। ’
লালন সঙ্গীতের পাশাপাশি বিচ্ছেদী গানও গান বলে জানান মানিক। তবে বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা বিচ্ছেদী গান তেমন একটা শোনেন বলে আক্ষেপ করেন তিনি। মানিক বলেন, ‘বর্তমানে খুব কম-ই আছে যে তরুণরা বিচ্ছেদী গান শুনছে। এ সংখ্যা এক থেকে দু’জনেই সীমাবদ্ধ। ’
শুধু উত্তর জনপদের পঞ্চগড় জেলাতেই নয়, লোকজ সংগীতের বেশ সমৃদ্ধ এ ধারা পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে। দেশের আনাচে-কানাচে দেহতত্ত্বের গান গেয়ে অধ্যাত্মপিপাসা নিবৃত করেন উদাস বাউলরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৬
এমএ/এমজেএফ/