বাংলাদেশের অর্থনীতি গতিশীল করার জন্য বেসরকারি খাতে আর্থিক সহায়তা ও বিশেষ প্রণোদনা প্রয়োজন। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামষ্টিক অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা মোকাবিলা করার জন্য বেসরকারি খাতকে সহায়তা করার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
তাঁরা বলেন, তিনভাবে বেসরকারি খাতকে সহায়তা করা যেতে পারে। সেগুলো হলো- আর্থিক সহায়তা, আর্থিক প্রণোদনা ও অবকাঠামো উন্নয়ন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, আর্থিক সহায়তার আওতায় বেসরকারি খাতকে স্বল্প সুদে ঋণ অথবা গ্যারান্টি প্রদান করা হলে বাজারে নগদ টাকার সরবরাহ বাড়বে এবং বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি হবে।
ঋণ পরিশোধেও সুবিধাজনক সময় দেওয়ার পাশাপাশি ডাউন পেমেন্ট ছাড়া অথবা সর্বনিম্ন ডাউন পেমেন্টে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠনের ব্যবস্থা করা হলে বেসরকারি কোম্পানিগুলো ঘুরে দাঁড়াবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুত হবে। দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক মানের উদারনীতির প্রবর্তন করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানের ব্যাংকিং চর্চায় কম জামানতের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা, আমদানিতে কম বিধিনিষেধ আরোপ, ঋণের মধ্যম বাজার ইত্যাদি চালু করা গেলে বেসরকারি খাত এবং ব্যাংক খাত উভয় ক্ষেত্রেই উপকৃত হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করতে উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। এজন্য অপরিহার্য পণ্য, কাঁচামাল এবং জ্বালানি আমদানিতে ভর্তুকি প্রদান করতে হবে। অনেক প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনুদান দেওয়া হলে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারে এবং এ প্রক্রিয়ায় আমদানিনির্ভরতা, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি হ্রাস করতে পারে। আর্থিক প্রণোদনার আওতায় সহায়তার বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের জন্য সাময়িকভাবে করছাড় ও অব্যাহতি প্রদান করা হলে ব্যবসার ওপর আর্থিক বোঝা কমবে এবং বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে।
উৎপাদন এবং প্রযুক্তি খাতের মতো নির্দিষ্ট খাতকে সর্বনিম্ন করপোরেট ট্যাক্স সুবিধা দেওয়া হলে প্রবৃদ্ধি এবং বিদেশি বিনিয়োগ বাড়তে পারে। প্রধান শিল্প খাতের জন্য সাময়িক করছাড় বা কর অব্যাহতি সুবিধা ব্যবসার ওপর আর্থিক বোঝা কমাতে এবং বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে। উৎপাদন এবং প্রযুক্তির মতো নির্দিষ্ট খাতের জন্য করপোরেট করহার কমানো প্রবৃদ্ধিকে উজ্জীবিত এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে।
মূলধন বিনিয়োগ এবং গবেষণা এবং উন্নয়নের জন্য ট্যাক্স ক্রেডিট প্রদান উদ্ভাবন এবং সম্প্রসারণকে উৎসাহিত করতে পারে। অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে এবং বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে। এ বিষয়ে পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উল্লিখিত বিষয়গুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের মুদ্রানীতি আরও কঠোরভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হবে। ধীরে ধীরে রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ ধরে রেখে রিজার্ভকে শক্তিশালী করতে হবে। আমদানি বিধিনিষেধ পুরোপুরি তুলে দিতে হবে। এতে বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, দুর্বল ব্যাংকের মধ্যে যেগুলো মরে যাবে সেগুলোর আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। আর যেগুলো মোটামুটি আছে সেগুলোকে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে বাজারভিত্তিক ব্যবস্থায় একীভূত বা অধিগ্রহণ করানোর দিকে যেতে হবে।
এ ছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক এবং আইনিভাবে স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক যাতে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সুপারভিশনটা স্বাধীনভাবে করতে পারে। উল্লেখ্য, ১৯৯৭-১৯৯৮ সালে আর্থিক সংকট পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে তীব্র অর্থনৈতিক সংকোচন, মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্থান-পতন ঘটে। তখন ঠিক একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনের মতো দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০২৫