জুলাই অভ্যুত্থানে তরুণরা সংস্কারের জন্য প্রাণ দিয়েছে উল্লেখ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক এস্টাবলিশমেন্টের (প্রতিষ্ঠিত বলয়) প্রকৃত সংস্কারের কোনো ইচ্ছা নেই।
ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
নাহিদ বলেন, যে সংস্কারের জন্য তরুণরা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিল, সেই সংস্কারে তাদের (রাজনৈতিক এস্টাবলিশমেন্ট বা বলয়) আগ্রহই নেই। আমাদের ওপর দায়িত্ব বর্তেছে সেই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের, যা আমরা গণঅভ্যুত্থান এবং তার পরবর্তী সময়ে দিয়েছিলাম। তাই আমরা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিই।
বাংলাদেশে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। অনেকের মতে, পুরনো রাজনৈতিক দল বিএনপির এই নির্বাচনে জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি।
নাহিদ মনে করেন, তার দল যদি সরকার গঠন না করতেও পারে, তবুও এটি আগামী কয়েক দশক ধরে দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের আন্দোলন রূপ নেয় শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আন্দোলনে। ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সমাবেশে হাসিনার পদত্যাগের এক দফা ঘোষণা করেন নাহিদ ইসলাম। এর দুদিনের মাথায় তীব্র জনরোষের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। ওই আন্দোলনে দেড় সহস্রাধিক মানুষের প্রাণ ঝরে। আহত হন হাজার হাজার ছাত্র-জনতা।
৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকারে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে উপদেষ্টা পদে শপথ নেন নাহিদ ইসলাম। প্রায় সাত মাস দায়িত্ব পালনের পর সম্প্রতি তিনি উপদেষ্টার পদ ছেড়ে আসেন এবং আত্মপ্রকাশ করা এনসিপির আহ্বায়কের দায়িত্ব নেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, কেউ ভাবেনি যে অভ্যুত্থান ঘটবে, কিন্তু সেটি ঘটেছে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা এবার জিতব। তবে এই নির্বাচনই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়... আমাদের উদ্দেশ্য হলো এই আন্দোলনের চেতনাকে ৫০, ১০০ বা তারও বেশি বছর ধরে টিকিয়ে রাখা।
নির্বাচনের সময় নিয়ে এনসিপি এবং বিএনপির মধ্যে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। বিএনপি চায় দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, যাতে জনগণের প্রকৃত ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত সরকার ক্ষমতায় আসতে পারে।
নাহিদ বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়, কিন্তু সেটি সত্য নয়। তবে দেশে এখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল নয়, তাই এই অবস্থায় নির্বাচন সম্ভব নয়।
তার দল (এনসিপি) সংবিধানের আমূল সংস্কারের জন্য একটি গণপরিষদ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে, যা বাংলাদেশে দীর্ঘস্থায়ী গণতন্ত্র নিশ্চিত করবে বলেও উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম।
এনসিপি গঠনের পর থেকেই দলের ভেতরে কিছু অন্তর্দ্বন্দ্ব ও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। যেমন, একজন সমকামী অধিকার কর্মীকে দলের নেতৃত্ব কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। নাহিদ এ বিষয়ে বলেন, আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিতে বিশ্বাস করি, তবে এখানে কিছু নির্দিষ্ট সীমারেখা রয়েছে, যা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি দ্বারা নির্ধারিত।
তিনি দাবি করেন, তার দল বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করছে। এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আমরা নারীদের নেতৃত্বে এনেছি এবং সব জাতি ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করেছি। আমরা চেষ্টা করব যাতে সব নাগরিক তাদের অধিকার উপভোগ করতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২৫
এমএম/এইচএ/