খুলনা: খুলনার তেরখাদার ভূতিয়ার বিলে সবজি চাষাবাদে আমূল পরিবর্তন এনেছে ভাসমান পদ্ধতি। এলাকায় নতুন এ পদ্ধতিতে সবজি ও মসলা জাতীয় ফসলের চাষ করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা।
২১ হাজার একরের এই বিলে কচুরিপানা, হোগলাপাতা ও শ্যাওলা দিয়ে তৈরি ভাসমান বিছানার ওপর ফলতে শুরু করেছে প্রায় সবধরনের সবজি ও মসলা। কীটনাশক ও সারবিহীন এসব সবজি বেশ চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধ এলাকার মধ্যে অন্যতম ভূতিয়ার বিল। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে উপজেলার ‘দুঃখ’ বলে পরিচিত এই বিল। বছরের অধিকাংশ সময়ে এখানে ফসলাদি হয় না। সরকারের ‘ভাসমান সবজি ও মসলা চাষ’ প্রকল্পের আওতায় গত ৩ বছর ধরে এ এলাকায় ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে। বর্তমানে এলাকার ১০ হাজার হেক্টর জমি এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ৮০টি ভাসমান বেড। আর এই প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন শতাধিক ভূমিহীন কৃষক। ফলানো হচ্ছে লাউ, কুমড়া, ঝিঙে, শিম, বরবটি, করল্লা, কাঁকরোল, লালশাক, পুঁইশাক, পালংশাক, কলমিশাক, আলু, পটোল, তরমুজ, বাঙ্গি, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, হলুদ, আদা ইত্যাদি।
কৃষক মো. আকতার শেখ বলেন, ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে খরচ অনেক কম। একটা বেড তৈরিতে তিনটা বাঁশ লাগে যার দাম বড়জোর ৬০০ টাকা। খালে বাঁশের ভেলা ফেলে তার ওপরে প্রয়োজন মতো কচুরিপানা দিলেই হলো। আর একটা বেডে ৭ থেকে ৮ মাস অনায়াসে চাষাবাদ করা যায়। এখন আমরা খাওয়া ছাড়াও সপ্তাহে সাত-আটশ টাকার সবজি বাজারে বিক্রি করি।
কৃষক মোশেখ মফিজুল বলেন, ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদের বড় সুবিধা হলো সার-কীটনাশক কিছুই লাগে না। আর বেডে উৎপাদন করা সবজির চাহিদা বেশি, দামেও কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা বেশি পাওয়া যায়।
তেরখাদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার একর জমিতে কচুরিপানা রয়েছে। এই বিশাল পরিমাণ কচুরিপানা কাজে লাগানোর উপায় বের করতে গিয়েই মূলত ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু। ‘ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি ও মসলা চাষ’ প্রকল্পের ফলে এখন খালেও বেড তৈরি করে চাষাবাদ হচ্ছে। ফলে এলাকার ভোক্তারা পাচ্ছেন রাসায়নিক সার ও বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৩
এমআরএম/এসআইএস