ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

সোলার সেচ পাম্পে কৃষকের মুখে হাসি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩
সোলার সেচ পাম্পে কৃষকের মুখে হাসি

বরিশাল: জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দামের ঊর্ধ্বগতিতে সৌর সোলার সেচ পাম্পে স্বল্প মূল্যে জমিতে পানি দিতে পেরে কৃষকদের মুখে হাঁসি ফুটতে শুরু করেছে।

কৃষকরা জানান, ডিজেল ও বিদ্যুৎ চালিত পাম্পের চেয়ে বর্তমানে অর্ধেক ব্যয়ে জমিতে পানি দিতে পারছেন তারা।

জানা যায়, বরিশালের আগৈলঝাড়ায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় একটি ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)’র আওতায় একটি সৌর সোলার চালিত সেচ পাম্প রয়েছে। সৌর সোলার চালিত সেচ পাম্পের আওতায় দুইটি ইরি-বোরো ব্লকে ৫০ একরের অধিক জমিতে শতাধিক কৃষক বর্তমানে যুক্ত রয়েছেন।

কৃষি বিভাগ ও বিএডিসি সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে উপজেলার যসার সোলার সেচ স্কিমে ৩০ একর কৃষিজমিতে বিএডিসি ৪২টি সৌর প্যানেলের মাধ্যমে প্রায় ১৬ হাজার ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প স্থাপন করে। বর্তমানে এখানে ৩০ একর জমিতে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

ব্লকের ম্যানেজার হেমায়েত হোসেন বলেন, আমরা সৌর সোলার সেচের মাধ্যমে চাষিদের জমিতে পানি দেওয়া বাবদ প্রতি শতাংশে ২০ টাকা হারে নিচ্ছি। আমাদের পাশেই অন্য ইরি-বেরো ব্লকে বিদ্যুতের মাধ্যমে মটর দিয়ে পানি সেচে শতাংশ প্রতি ৩৫ টাকা করে নিচ্ছে। অপর দিকে ডিজেল চালিত ইরি-বোরো ব্লকে শতাংশ প্রতি ৪০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। কাজেই আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি আমাদের এলাকায় কৃষকের কথা চিন্তা করে আরও বেশি সৌর সোলার সেচে ব্লক তৈরি করা হোক।

অপরদিকে, উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের পশ্চিম কোদালধোয়া গ্রামে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় সৌর শক্তি ও পানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের (পাইলট) আওতায় সৌর সোলার চালিত ইরি-বোরো ব্লকে ২০ একর জমিতে পানি সরবরাহ করে আসছে। কোদালধোয়ার এই সৌর সোলার পাম্পে অতিমাত্রার ক্ষমতা সম্পন্ন ২৬টি সোলার প্যানেল রয়েছে।

ওই ব্লকের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য গনেশ পাণ্ডে জানান, সৌর সোলার সেচে ইরি-বোরো ব্লকে প্রতি জন চাষি তার জমিতে ফলানো ধান থেকে পানির খরচ বাবদ ২০ ভাগের ১ ভাগ ব্লক ম্যানেজারকে দিচ্ছে। অথচ পাশের ডিজেল চালিত ইরি-বোরো ব্লকের ফলানো ধান থেকে ম্যানেজারকে ১০ ভাগের ১ ভাগ ধান দিতে হয়।

কৃষকের উন্নতি মানে দেশের উন্নতি জানিয়ে সৌর সোলার সেচে চালিত ইরি-বোরো ব্লকের চাষি শহীদ ফকির বলেন, এই ব্লকে আমার ৪০ শতাংশ চাষযোগ্য জমি রয়েছে। বিদ্যুৎ ও ডিজেল চালিত ইরি-বোরো ব্লকের চেয়ে অর্ধেক মূল্যে জমিতে পানি দিতে পেরে আমরা খুশি।

সেচ ব্লকের একাংশ জমির মালিক নরেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ডিজেল ও বিদ্যুৎ চালিত ইরি-বোরো ব্লকের চেয়ে অর্ধেক খরচ হয় সৌর সোলার সেচ প্রকল্পে। আরও বেশি করে সৌর সোলার সেচ প্রকল্প চালু করলে আমরা কৃষকরা উপকৃত হবো।

এদিকে ডিজেল চালিত সেচ পাম্পের মাধ্যমে ব্লকে ৪০ টাকা হারে প্রতি শতাংশ জমিতে পানি দেওয়া বাকালের নওপাড়া ইরি-বোরো ব্লকের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, আমার এখানে ৬৭ শতাংশ জমি রয়েছে, যদি সৌর সোলার স্কীম পাম্পে পানি দিতে পারতাম তাহলে অর্ধেক টাকা কম খরচ হতো।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় বলেন, আগৈলঝাড়ার কৃষকদের কথা ভেবে স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্-এমপি সৌর সোলার সেচ স্কীম প্রকল্পটি আগৈলঝাড়ায় আনেন। এভাবে আরও বেশী প্রকল্প চালু হলে অত্র এলাকার কৃষকেরা সল্প খরচে ইরি-বোরো চাষাবাদ করতে পারবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ থেকে উঠানো পানি ৩০-৫০% সাশ্রয়ী হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে প্রকল্পটি পরিবেশ দূষণ রোধ, বিদ্যুতের ওপর চাপ কমানো, পানির অপচয় রোধ করে প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে পানি সরবরাহ করে আসছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকৌশলী (বরিশাল অঞ্চল) জিএম আবদুর রহমান।

আগৈলঝাড়া উপজেলার দ্বায়িত্বে থাকা বিএডিসি’র (ক্ষুদ্র সেচ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ সিকদার বলেন, যসার সৌর সোলার স্কীম ইরি-বোরো ব্লকে সোলার প্যানেলে প্রতিদিন ১৫ হাজার ৩৩০ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। ৫ হাজার ৫০০ ওয়াট সেচ পাম্পে খরচ হয়।

আর বাকী বিদ্যুৎ মানুষ তার দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করা কিংবা জাতীয় গ্রিডেও যোগ করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২৩
এমএস/এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।