ঢাকা, বুধবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

কুষ্টিয়ায় বাড়ছে সূর্যমুখীর চাষ

মো. জাহিদ হাসান জিহাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৩
কুষ্টিয়ায় বাড়ছে সূর্যমুখীর চাষ

কুষ্টিয়া: সূর্যমুখীর নতুন ফুল দেখে খুঁশি কৃষকরা। তাদের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে হাঁসছে সূর্যমুখীও।

ভোজ্য তেলের দাম বাড়ার কারণে কুষ্টিয়ায় বাড়তে শুরু করেছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ। সয়াবিন তেলের তুলনায় কম কোলেস্টেরল এবং সহজেই চাষ উপযোগী হওয়ায় সূর্যমুখী আবাদে বেশ আগ্রহী কৃষকরা। মাঠে আবাদের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায় ও পতিত জমিতেও চাষ হচ্ছে এই তেলবীজের।

ভোজ্য তেল হিসেবে সয়াবিনের একক অধিপত্তের কাছে প্রায় হার মেনে কৃষকরা বিকল্প তেল উৎপাদনের পথে কিছুটা অগ্রসর হয়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলে আগামীতে ভোজ্য তেল সয়াবিনের ওপর নির্ভরর্শীলতা কমবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূর্যমুখী চাষ সম্প্রসারণের পাশাপাশি কৃষক পর্যায়ে তেল উৎপাদনের জন্য কল-কারখানা ও সরকারকে পাশে দাড়ানোর দাাব জানিয়েছেন কৃষকরা।

এদিকে আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছেন। তেল জাতীয় অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখীর চাষ অনেক সহজ ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা এতে উৎসাহিত হয়ে উঠছেন। সেই সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২০২২-২৩ অর্থবছরে কুষ্টিয়ায় সরকারি প্রণোদনার আওতায় ১ হাজার ৪শ কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার বিতরণ করেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, এবছর সারা কুষ্টিয়া জুড়েই বেড়েছে সূর্যমুখীর আবাদ। ২০২১-২২ মৌসুমে কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলায় সূর্যমুখীর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ছিল মাত্র ৩০ হেক্টর জমিতে। তবে তেলের দাম বাড়ার ফলে তা বেড়ে আবাদ হয়েছিল ১১২ হেক্টর জমিতে। এবছর কুষ্টিয়ায় সূর্যমুখী আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ১৫২ হেক্টরে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৮ হেক্টর কম। তবে গত বছরের তুলনায় এবার ৪২ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে ।

এর মধ্যে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ৬০ হেক্টর, মিরপুরে ৩৪ হেক্টর, ভেড়ামারায় ২২ হেক্টর, সদরে ২০ হেক্টর, কুমারখালীতে ১০ হেক্টর এবং খোকসায়৬ হেক্টরের সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে।  

মিরপুর উপজেলার মহদীপুর এলাকার চাষী মারজুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ বছর আমি ১ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাকে বীজ ও সার দিয়েছিল। তাছাড়া তারা সব সময় আমাকে চাষে পরামর্শ দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, অন্য ফসলের তুলনায় সূর্যমুখীর চাষ সহজ এবং খরচও কম। তেলের যে দাম তাই আমি এ ফসল চাষ করেছি। এটি আমাদের জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া এক বিঘায় আমার ৩-৪ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। আশা করছি ২০-২২ হাজার টাকার সূর্যমুখী বিক্রি করতে পারব। সেই সঙ্গে নিজের জমিতে আবাদ করা তেলও খেতে পারব।

কৃষক তারজুল হক বাংলানিউজকে জানান, তামাক তো বিদেশি ফসল। চাষ করি আমরা, আর বাইরের দেশে চলে যায়। সূর্যমুখী চাষ করে দেশের ফসল দেশেই থাকবে। এবছর ফলনও বেশ ভালো হবে। আগামীতে অনেকেই এটা চাষ করবে।

একই এলাকার কৃষক বিশারত আলী বাংলানিউজকে জানান, সূর্যমুখির চাষ তো প্রায় উঠেই গিয়েছিল। কিন্তু এ বছর মাঠে কয়েকজন চাষ করছে। সয়াবিন তেলের দাম, সরিষার তেলের দাম কৃষক খাবে কী? তাছাড়া সূর্যমুখীর তেল সয়াবিনের চেয়ে উপকারী। তাই আস্তে আস্তে এরর চাষ বাড়তে পারে।

সদরপুর এলাকার শিক্ষার্থী মধু কুমার বাংলানিউজকে জানান, বিকেলে সূর্যমুখীর ক্ষেত দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। তাছাড়া ছবি তুলতেও বেশ ভালো লাগে। সচারচর সব এলাকায় এ ফুল দেখা যায় না। এটি ব্যাপক হারে চাষ হলে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে এবং মাঠেরও পরিবেশ সুন্দর হবে।

মিরপুরের কৃষক ইউনুস আলী বাংলানিউজকে জানান, বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর তেল উৎপাদন করার সু-ব্যবস্থা থাকলে এর চাষ আরও বাড়বে। বীজ উৎপাদন করে যদি তেল তৈরি করতে না পারে তাহলে তো কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।  

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন বাংলানিউজকে জানান, সূর্যমুখীর চাষ খুবই সহজ এবং এর রোগবলাই অন্য ফসলের তুলনায় অনেক কম। সূর্যমুখীর খৈল গরু ও মহিষের উৎকৃষ্টমানের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর বীজ ছাড়ানোর পর মাথাগুলো গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেন কৃষকরা।

তিনি বলেন, বিশেষ করে সয়াবিন তেলের দাম বেশি হওয়ার পর থেকে কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল বাংলানিউজকে জানান, সূর্যমুখীর গুণাগুণ অন্য ফসলের তুলনায় বেশি। কুষ্টিয়া অঞ্চলের মাটি সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য বেশ উপযোগী। বিগত বছরের তুলনায় কৃষকরা এবছর সূর্যমুখী চাষে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে। কৃষি প্রণোদনার আওতায় আমরা বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে সূর্যমুখীর বীজ ও সার বিতরণ করেছি। সেই সঙ্গে তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সরিষা-সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করছি।

এদিকে গত মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার খয়েরপুর এলাকায় ‘সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ এবং সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা’  নিয়ে মাঠে কৃষকদের সঙ্গে দিনব্যাপী মতবিনিময় এবং চাষাবাদ সম্পর্কে আলোচনা করে ‘কৃষকের বাতিঘর’ নামে কৃষিভিত্তিক একটি লাইব্রেরির সদস্যরা।

ওই লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক হোসাইন মোহাম্মদ সাগর বাংলানিউজকে জানান, মৌসুম ভিত্তিক ফসলের চাষাবাদ সম্পর্কে কৃষকদের জানাতে এবং চাষাবাদের বিভিন্ন কলাকৌশল সম্পর্কে কৃষকদের সচেতনতা বাড়াতে আমরা কাজ করছি। তারই অংশ হিসেবে এবছর আমরা সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ এবং সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনায় কৃষকদের মাঠে গিয়ে উদ্বুদ্ধ করছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, সরকারি প্রণোদনায় আমরা কৃষকদের সার-বীজ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করছি। সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সূর্যমুখী চাষে তাদের আগ্রহী করে তুলছি। আশা করি আগামীতে এর চাষ জেলাজুড়েই বাড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, ১৭ মার্চ, ২০২৩
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।