ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

দিনাজপুরে জমে উঠেছে লিচুর বাজার, দিনে কোটি কোটি টাকার লেনদেন

মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০২ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২৩
দিনাজপুরে জমে উঠেছে লিচুর বাজার, দিনে কোটি কোটি টাকার লেনদেন

দিনাজপুর: উত্তরের জেলা দিনাজপুর। লিচুর রাজ্য হিসেবে দেশ জুড়েই নাম ডাক রয়েছে এ জেলার।

মে মাসের শেষ দিক থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত লাল রঙে ঢাকা থাকে জেলার লিচু বাগানগুলো।  

জেলার সবচেয়ে বড় লিচুর বাজার বসে শহরের কালিতলা নিউমার্কেট। বাজারে উঠতে শুরু করেছে জেলায় উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের লিচু। মাদ্রাজি, বোম্বাই, বেদানা, কাঁঠালি, চায়না-থ্রিসহ বিভিন্ন জাতের লিচুর দেখা মিলছে এ বাজারে। জেলার গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে এসব লিচু।

শহরের কালিতলা নিউমার্কেট ঘুরে দেখা যায়, আকার ভেদে প্রতি হাজার মাদ্রাজি লিচু এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকায়, বোম্বাই লিচু দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকায়, বেদানা লিচু আকার ভেদে সাড়ে চার হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকায় এবং চায়না-থ্রি লিচু আট হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।  

বাজারে লিচু কিনতে আসা জান্নাত ফেরদৌসী সুমাইয়া বলেন, দিনাজপুরে থাকায় আত্মীয়-স্বজন সবাই লিচু খেতে চায়। আজ কিছু লিচু কিনেছি। বেদানা লিচু প্রতি একশ’র দাম নিল ৬০০ টাকা। জাত ও আকার ভেদে বিভিন্ন দামের লিচু আছে। একটু দেখে শুনে লিচু কিনতে হবে। দিনাজপুরের লিচুর স্বাদের কারণে দেশ জুড়েই এর চাহিদা রয়েছে। অন্যান্য জায়গায় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে লিচুর চাষ হয়। কিন্তু দিনাজপুরে ব্যাপক হারে লিচুর চাষ হয়। স্বাদ ও মানেও অনেক ভালো।  

কথা হয় ঢাকা থেকে লিচু কিনতে আসা ব্যবসায়ী সেন্টু সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, দিনাজপুরে প্রচুর পরিমাণে লিচু উৎপাদন হয়। তাই প্রতিবছর এখানে লিচু কিনতে আসি। এখানকার লিচু স্বাদে ও গুণে অনেক ভালো। বিক্রি করতে সুবিধা, লাভও হয়। তাই দূরে হলেও এখানে আসি।

লিচু বিক্রেতা সোবহান বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার লিচুর উৎপাদন কম হয়েছে। তারপরও চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। আবহাওয়া ঠিক থাকলে লিচুর আকার আরও বড় হতো। এখানে দেশের বিভিন্ন জেলার লিচু ব্যবসয়ীরা লিচু কিনতে আসেন। প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক লিচু বাইরের জেলাগুলোতে যায়।

দিনাজপুর ফলের আড়ত সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আতা বলেন, আমাদের এ মার্কেটে ৪০টি আড়ত রয়েছে। এখানে ট্রাকে ছাড়াও প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ ভ্যান লিচু বেচাকেনা হয়। একেকটি আড়ত থেকে দিনে ২০ লাখ টাকার মতো লেনদেন হচ্ছে।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলা জুড়ে লিচুর চাষ হয় পাঁচ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে। মোট লিচুর বাগান আছে পাঁচ হাজার ৪১৮টি। এসব বাগানের মধ্যে বোম্বাই লিচু তিন হাজার ১৭০ হেক্টর, মাদ্রাজি এক হাজার ১৬৬ হেক্টর, চায়না-থ্রি ৮০২ হেক্টর, বেদানা ২৯৫ দশমিক পাঁচ হেক্টর, কাঁঠালি ৫৬ হেক্টর ও মোজাফফরপুরী এক হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়।  

আরও জানা যায়, গত বছর লিচুর ফলন হয়েছিল ২৮ হাজার মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ছিল ৬০০ কোটি টাকা। এবার লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন ।  

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) মাহবুবুর রশিদ বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার লিচুর দাম বেশি। এবার ৩১ হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় হাজার কোটি টাকা।  

অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা বেশির কারণে এবার সময়ের কিছুটা আগেই লিচু বাজারে উঠতে শুরু করে। একই কারণে গত বছরের তুলনায় লিচুর উৎপাদন কম হয়েছে। আকারেও কিছুটা ছোট হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।