ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

‘ষাঁড় নয় যেন হাতি’, সিংহরাজের দাম ২৫ লাখ টাকা

কাজী আব্দুল কুদ্দুস,  ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৯ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৩
‘ষাঁড় নয় যেন হাতি’, সিংহরাজের দাম ২৫ লাখ টাকা রাজবাড়ির ‘সিংহরাজ’ ষাঁড়

রাজবাড়ী: কুরবানি ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুক এক ষাঁড়কে দেখে অনেকেই বলছেন, ‘ষাঁড় নয় যেন কালো রঙের হাতি!’। ফ্রিজিয়ান জাতের বিশালাকার ষাঁড়টির দেখা মিলবে রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের সিংগাইর গ্রামের সুচিন্ত্য কুমার সেনের খামারে।

 

সুচিন্ত্য কুমার আদর করে এর নাম রেখেছেন ‘সিংহরাজ’। এর ওজন ৩৫ মণের বেশি বলে দাবি সুচিন্ত্যের।  

এদিকে এতো বড় ষাঁড়টি দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসছেন ক্রেতাসহ উৎসুক জনতা। অনেকেই মোবাইল ফোনে তুলে নিচ্ছেন।

 সুচিন্ত কুমার ষাঁড়টির দাম হাঁকছেন ২৫ লাখ টাকা!

একটি ষাঁড়ের এতো দাম? সুচিন্ত্য কুমার জানালেন, সিংহরাজের পেছনে খরচও হয়েছে অনেক। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে খড়, ঘাস ও দানাদার খাবার খাইয়ে ষাঁড়টিকে এতো বড় করেছেন তিনি।  

সিংহরাজের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রয়েছে,  খুদের ভাত, ডাব ও গুড় দিয়ে তৈরি শরবত, কাঁচা-পাকা কলা, গমের ভুসি, ভুট্টার গুড়া, চালের কুড়া, খেসারি ডালের ভুসি, ছোলা ভাঙা, তিল বা সয়াবিনের খৈল ও কাঁচা ঘাস।

সুচিন্ত্য কুমার বাংলানিউজকে বলেন, গত ৪ বছর আগে কুষ্টিয়া জেলা থেকে ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে ফ্রিজিয়ান জাতের এ ষাঁড়টি কিনেছিলাম। আদর করে নাম রাখি সিংহরাজ। একে লালনপালন করতে গিয়ে আজ আমি ঋণগ্রস্ত। বর্তমানে প্রতিদিন ১ হাজার টাকার বেশি খাবার খাওয়াতে হচ্ছে। আমি আর কুলাতে পারছি না। বিশাল আকারের এই ষাঁড়টিকে এবারের কুরবানি হাটে বিক্রি করব। ষাঁড়টির বর্তমান ওজন ৩৫ মনের বেশি হবে। আমি দাম চাচ্ছি ২৫ লাখ টাকা।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন সকালে ভোরে উঠে ষাঁড়টিকে গোসল করিয়ে খাবার দিই। ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৩বার সিংহরাজকে গোসল করাতে হয়। নিজের সন্তানের মতো আদর ভালোবাসায় তাকে বড় করেছি। গোখাদ্যের দাম অনেক বাড়তি। আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে সিংহরাজ কে এতো বড় করতে। কেনার পর থেকে এই পর্যন্ত ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ২৫ লাখ টাকা দাম চাচ্ছি। গত বছর কুরবানির হাটে দাম আশানুরূপ না পাওয়ায় বিক্রি করিনি। আশা করি এ বছর ভালো দাম পাব।

সিংহরাজকে দেখতে আসা ফিরোজ বলেন, আমি কোনোদিন এতো বড় ষাঁড় দেখেনি। ফেসবুকে ছবি দেখে আজ বিকেলে ষাঁড়টি দেখতে আসলাম। অনেক ভালো লাগলো। বুঝতে পেরেছি খামারি অনেক কষ্ট করে ষাঁড়টিকে এতো বড় করেছেন।

আরেক দর্শনার্থী শরিফুল ইসলাম জানান, আমি কুরবানির জন্য ষাঁড় কিনব। তবে এতো বড় ষাঁড় কেনার প্রস্তুতি এ বছর আমার নেই। সিংহরাজ কালো রঙের বিশাল আকারের, ষাঁড় তো নয় যেন হাতি! 

সিংহরাজ নামের ষাঁড়ের সঙ্গে এর মালিক সুচিন্ত্য কুমার সেন

সিংহরাজকে দেখতে আসা দর্শনার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ফেসবুকে দেখে জানতে পারি সুচিন্ত্য নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে বড় একটি ষাঁড় কুরবানির ঈদের জন্য প্রস্তুত করছে। পরে তার বাড়িতে ষাঁড়টি দেখতে আসলাম। বেশ বড়। রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনাসহ আশেপাশের কয়েক জেলায় এতো বড় ষাঁড় আর নেই। ষাঁড়টির ওজন ২৫ থেকে ৩০ মণ বলে তিনি দাবি করছেন তার মালিক। ইতিমধ্যে ১৫ লাখ টাকা দাম হয়েছে বলে জেনেছি।  

রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. খায়ের উদ্দীন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, কুরবানি উপলক্ষে খামারিদের সঙ্গে আমরা সবসময় যোগাযোগ রাখছি, সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি।

রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ফজলুল হক সরদার বাংলানিউজকে বলেন , এ বছর রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন পশুর হাটে রোগাক্রান্ত পশু শনাক্ত ও চিকিৎসাসেবা প্রদানে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে ভেটেনারি মেডিকেল টিম থাকবে। এ বছর রাজবাড়ী জেলায় সাড়ে ৮ হাজার খামারে ৫৪ হাজার ৫২৫টি কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। সরকারি হিসেব মতে এ বছর ১৪ হাজার ৯৮৫ টি ষাঁড়, ৩৩ হাজার ১০টি ছাগল, ৬ হাজার ২শ টি গাভী, ৩০টি মহিষ, ৩শ টি ভেড়া কুরবানির হাটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। রাজবাড়ীতে এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জেলার সাড়ে ৮ হাজার খামারে প্রস্তুত করা হয়েছে বিশাল আকারের ষাঁড়,মহিষ, ছাগল ও ভেড়া।  এবার রাজবাড়ী জেলায় ৫ কোটি টাকার পশু কেনা-বেচা হবে বলে আশা করছে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৩
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।