ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

ফসলের ক্ষেতে ‘মিধিলি’র তাণ্ডব: ঋণ শোধের চিন্তায় দিশেহারা ভোলার কৃষকেরা

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২৩
ফসলের ক্ষেতে ‘মিধিলি’র তাণ্ডব: ঋণ শোধের চিন্তায় দিশেহারা ভোলার কৃষকেরা

ভোলা: ভোলার বেশির ভাগ ক্ষেতের আমন ধানসহ অন্যান্য ফসলে পাক ধরেছে। আর সপ্তাহ দুই পরই ফসল ঘরে তোলার প্রস্তুতি চলছিল।

কিন্তু যখন কৃষক পাকা ফসল ঘরে তোলার চিন্তা করছেন, ঠিক তখন ঘূর্ণিঝড় মিধিলির তাণ্ডবে সব হিসেব ওলট-পালট হয়ে গেছে। ভোলার অনেক ক্ষেতের ফসল ডুবে গেছে পানিতে, কিছু আবার মাটিতে মিশে গেছে।  

এতে আর্থিকভাবে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকেরা।

এমন বাস্তবতায় কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন আর কীভাবেই ধার-দেনা শোধ করবেন, সে এমন চিন্তার ছাপ তাদের চোখমুখে।  

ফসলের ক্ষতি হওয়ায় এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে কিনা, তা নিয়ে চিন্তিত সংশ্লিষ্টরা।

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির মাধ্যমে সহায়তা করা হবে।

ভোলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে পাকধরা আমন ধান। দুই সপ্তাহ পরেই পাকা ধান ঘরে তোলার কথা ছিল ভোলার কৃষকদের। আর তাই সেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। বিগত বছরের মতো এ মৌসুমেও লাভের মুখ দেখার স্বপ্ন ছিল তাদের। কিন্তু কৃষকদের সে স্বপ্ন ভেঙে গেছে। ঘূর্ণিঝড় মিধিলির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমনের ক্ষেত। বেশিরভাগ ক্ষেতে পানি, ফলে ধানের শীষ হেলে ঝরে পড়েছে ধান।

ভোলা সদরের দক্ষিণ ইলিশা গ্রামের কৃষক খালেক বাঘা বলেন, এ মৌসুমে দুই একর জমিতে আমনের আবাদ করেছি, ঝড়ে বেশিরভাগ থান হেলে পড়েছে।  

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মনির মজগনি বলেন, ১৯ গণ্ডা (এক গণ্ডা = ১.৯৮ শতাংশ) জমিতে আমনের আবাদ করেছি, বৃষ্টি ও ঝড়ে ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বেশিরভাগ ধানে চিটা ধরেছে। এতে পথে বসার উপক্রম।  

এদিকে কৃষকরা জানালেন, লাভের আশায় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে অনেকেই এবার আমন আবাদ করেছেন। কিন্তু ফসল হারিয়ে ঋণ পরিশোধ নিয়েও দুশ্চিন্তায় তারা।

তরিক ইসলাম বলেন, গত বছর ধান চাষে লাভ হয়েছে, এ বছরও আগ্রহ নিয়ে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে ১৯ গণ্ডা জমিতে আমনের আবাদ করেছি। কিন্তু ঝড়ে ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষক আবদুল জলিল বলেন, এনজিও থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দুই কানি (এক কানি = ৩৯ শতাংশ) জমিতে আমনের আবাদ করেছি, কয়েকদিন পর ধান গোলায় তোলার কথা ছিল। ভেবেছিলাম ধান বিক্রির টাকায় ঋণ পরিশোধ করব, কিন্তু সব ভেসে ভেসে গেল।

ঝড়ে ২৭ ভাগ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।  

ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবীর বলেন, ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আপাতত কৃষকদের সেচ দিয়ে ক্ষেতের পানি নিষ্কাশন করতে বলা হয়েছে। আর যেসব ধান পাকছে সেগুলো কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনা দেওয়া হবে।

এ বছর জেলায় এক লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমি। এছাড়া সবজি, সরিষা ও পানসহ অন্যান্য ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।