ঢাকা, রবিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

লবণ পানি প্রবেশে বাধা, অনাবাদি জমিতে ধান উৎপাদন

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৪
লবণ পানি প্রবেশে বাধা, অনাবাদি জমিতে  ধান উৎপাদন

বাগেরহাট: বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের শসীখালী বিল। লবণ পানির কারণে প্রায় ৭ হাজার একর আয়তনের এই বিলটি এক সময় অনাবাদি থাকত।

বছরের কিছু সময়, বাগদা চাষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হত জমির মালিকদের।  

কিন্তু স্থানীয় জমির মালিক, বরগা চাষি, জনপ্রতিনিধি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সম্মিলিত উদ্যোগে লবণ পানির প্রবেশ বন্ধ করে ধান চাষ করা হয়েছে অনাবাদি এই বিলে।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দাবি চাষের আওতায় আসা ৫ হাজার একর জমিতে প্রায় ৭ হাজার টন ধান উৎপাদন হবে। পাশাপাশি ঘেরের পাড়ে তরমুজ, শিম, শসা, মূলা, কফিসহ বিভিন্ন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে লাভবান হচ্ছেন ৫ শতাধিক কৃষক ও জমির মালিকরা।

স্থানীয় কৃষক মো. সাইদুল মালঙ্গী বলেন, লবণ পানির জন্য আমাদের এই শসীখালীর বিলে এক সময় কিছুই করতে পারতাম না। ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, স্থানীয় মেম্বার, জমির মালিক ও আমরা কৃষকরা মিলে লবণ পানি ঢোকার পথে বাঁধ দিয়েছি। এখানে আর লবণ পানি প্রবেশ করে না। এখন আমরা ধানসহ সবকিছু চাষ করতে পারি।

তহিদুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক বলেন, লবণ পানি না আশায় চাষিদের বিশাল উপকার হয়েছে। ধান, পেঁয়াজ, রসুন, তরমুজ সবকিছুর খুব ভাল ফলন হয়েছে। তবে আমাদের এই বিলে বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা নেই। যার কারণে ফসলে পানি দিতে খুব কষ্ট হয়, মাছ চাষও ব্যাহত হয়। যদি বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকত, সেচের পাশাপাশি ইঁদুর দমনেও কাজে লাগানো যেত।

হাওলাদার মো. আব্দুল হাই নামে এক জমির মালিক বলেন, এই বিলে আমার প্রায় ১০০ বিঘা জমি রয়েছে। তেমন কোনো ফসল হত না। কৃষকদের নিয়ে এবার ফাল্গুন মাস থেকে আমরা লবণ পানির প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছি। যার কারণে বিলে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিরা অনেক লাভবান হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই বিলে এক সময়, শুধু বাগদা চিংড়ির চাষ হত। সাদা মাছের চাষও করা যেত না লবণের জন্য। এখন বাগদার পাশাপাশি সাদা মাছ ও গলদা চিংড়ি চাষ করছি আমরা।

বিলে ধান চাষের খরচ ও উৎপাদন বিষয়ে জানতে চাইলে ইব্রাহীম শেখ নামে এক চাষি বলেন, এই বিলে বেশির ভাগ জমিতেই মাছ চাষ হয়। ঘেরের মধ্যে ধান করতে ব্যয় অনেকটা কম। ৫২ শতকের প্রতি বিঘা জমিতে আমন ধান চাষে ৪ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়। এতে ২৫ থেকে ৩০-৩৫ মণ ধান পাওয়া যায়। সঙ্গে রয়েছে গরুর খাবার কুটা। সব মিলিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে অন্তত ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হয় আমাদের। সেইসঙ্গে ঘেরের পাড়ে তরমুজ, পেঁপে, লাউ, মুলা, কুমরাসহ বিভিন্ন সবজি ও ফল উৎপাদন করে অতিরিক্ত আয় করি আমরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ষাটগম্বুজ ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসাইন খান বলেন, লবণ পানির প্রবেশ বন্ধ করায় এবার শসীখালীর বিলে প্রায় ৫ হাজার একর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। এতে প্রায় ৭ হাজার টন ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিছু কিছু চাষি ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু করেছে। ধানের পাশাপাশি সবজিসহ আইল ফসলও চাষ করছেন কৃষকরা। আমরা কৃষকদের পরামর্শও দিয়ে যাচ্ছি।

ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে কৃষিজ উৎপাদন নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তবে স্থানীয় কৃষক ও জমির মালিকদের সঙ্গে নিয়ে আমরা চেষ্টা করেছি, যাতে লবণ পানির প্রবেশ বন্ধ করা যায়। শসীখালীর বিলে আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি। ফলে এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। লবণাক্ততার কারণে যেসব বিল এখনও অনাবাদি রয়েছে সেসব বিলেও এ ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করলে কৃষিজ উৎপাদন বাড়বে বলে মনে করেন এই জনপ্রতিনিধি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।