ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

আনারস চাষে ফুলবাড়ীয়ায় চমক, ৫০ কোটি টাকা বিক্রির আশা    

আমান উল্লাহ আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০২ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৪
আনারস চাষে ফুলবাড়ীয়ায় চমক, ৫০ কোটি টাকা বিক্রির আশা    

ময়মনসিংহ: কেউ প্রবাস ফেরত, কেউ বা উচ্চ শিক্ষিত তরুণ যুবক। কিন্তু তাদের ব্যস্ততা এখন শুধু আনারস বাগান ঘিরে।

দুচোখে সফলতার স্বপ্ন নিয়ে তাদের সময় কাটে আনারস বাগানের কর্মযজ্ঞে। বাগানে চাষিদের পরিশ্রমের ফলে চমক সৃষ্টি হয়েছে। আনারস চাষে অধিক লাভের সম্ভাবনার মুখ দেখছেন চাষিরা।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার লাল মাটির পাহাড়ি অঞ্চল অধ্যুষিত নাওগাঁও, সন্তোষপুর ও রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের কৃঞ্চপুর, পাহাড় অনন্তপুর ও হাতিলেটে এলাকার ফসলি মাঠে এমন দৃশ্য দেখা যায়।        

সরেজমিনে উপজেলার ১ নম্বর নাওগাঁও ইউনিয়নের কৃঞ্চপুরে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে আনারসের বাগান। পাশাপাশি আছে হলুদসহ অন্যান্য ফসল। তবে ফসলি মাঠে দৃষ্টি দিলে যে কারও দৃষ্টি থমকে যাবে। পরিপাটি আনারস বাগানের সারি সারিতে ফুলের মত ফুটে উঠা রসালো আনারসে। এ যেন হাতের কাছে আনারসের স্বর্গরাজ্য।

এ সময় আনারস বাগানে কাজ করছিলেন ওই গ্রামের তরুণ যুবক ফাহাদ তালুকদার (২৮)। তিনি টঙ্গি সরকারি কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স করেছেন। বিগত তিন বছর আগে তার বাবা মারা যাওয়ার পর ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে সে এখন সংসারের হাল ধরেছে। তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে এবার ১০ একর জমিতে আনারস চাষ করেছেন তিনি। এরমধ্যে জলডুবি জাতের ৩ একর এবং বাকি জমিতে হানিকুইন ও ক্যালেন্ডর জাতের আনারস চাষ করেছেন।        

ফাহাদ বাংলানিউজকে জানান, এক বছরি ফসল আনারস। গত বছর রমজানে চারা লাগানোর পর প্রায় ১১ মাস সময় লেগেছে ফল পরিপক্ব হতে। এর মধ্যে দুই দফা ভিটামিন স্প্রে করতে হয় এবং ফল পাকার আগে পোকার আক্রমণ ঠেকাতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়। এতে জমি লিজ, চারা রোপণ, শ্রমিক খরচসহ এবার ১০ একর জমি চাষে প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে আশা করছি এবার ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা বিক্রি হবে। ইতোমধ্যে আনারস কাটা শুরু হয়েছে এবং রমজান মাসেই বিক্রি শেষ হবে। এর মধ্যে বাজারে জলডুবি জাতের কদর বেশি বলেও জানায় এই তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা।

ফাহাদ তালুকদার আরও বলেন, গত সপ্তাহের শেষদিন থেকে আনারস বিক্রি শুরু হয়েছে। ঢাকা, গাজীপুর, ভালুকা, কুষ্টিয়া ও টাঙ্গাইল এলাকা থেকে পাইকাররা এসে জমি থেকে আনারস কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। রমজান মাসে আনারস বিক্রির ধুম পড়বে।   

আনারস বাগানে কর্মরত শ্রমিক মো. রুবেল মিয়া বলেন, জৈব সার ছাড়া কোনো ধরনের কীটনাশক এই ফসলে ব্যবহার করা হয় না। তবে ফসল পাকার আগে পোকার আক্রমণ ঠেকাতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়। এতে বিষাক্ত কিছু নেই।    

এই বাগান থেকে একটু দূরে স্থানীয় কৃঞ্চপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার ৬ একর জমিতে আনারস চাষ করেছেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সৌদি প্রবাসী যুবক মো. আবু বকর সিদ্দীক (৩৯)। তিনি বলেন, প্রবাস জীবন অনেক কষ্টের। তাই ৬ মাসের ছুটি নিয়ে দেশে আসার আগেই শ্রমিক দিয়ে ৬ একর জমিতে আনারস চাষ করেছি। গত বছর এক একর জমিতে আনারস চাষ করে ৬ লাখ টাকা বিক্রি করেছিলাম। এবার বেশি জমিতে চাষ করেছি, ফলন ভালো হয়েছে। আশা করছি লাভও বেশি হবে।  

তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই এলাকার প্রায় শতাধিক কৃষক আনারস চাষ করেছে। কিন্তু সরকারের কৃষি কর্মকর্তারা এই চাষিদের কোনো খোঁজ নেয় না, এমনকি পরামর্শ বা সহযোগিতা করে না।  

একইভাবে পার্শ্ববর্তী সন্তোষপুর এলাকার তরুণ উদ্যোক্তা মো. শফিকুল ইসলাম, মো. ফরহাদ হোসেন ফরাজী এবং আসাদুজ্জামান নূরসহ রাঙ্গামাটিয়া ও নাওগাঁও ইউনিয়নের অনেক তরুণ ও উচ্চশিক্ষিত যবুক এবার আনারস চাষ করেছেন। এতে তারা গত কয়েক বছর ধরে লাভবান হওয়ায় স্থানীয় কৃষকেরা আনারস চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।  

তবে এলাকার রাস্তাঘাট অনেক খারাপ হওয়ার কারণে স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত ফসল বিক্রিতে বিড়ম্বনা ও ভোগান্তির শিকার হতে হয় বলে জানিয়েছেন নাওগাঁও ইউনিয়নের ৯ নম্বর কৃঞ্চপুর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হারুন অর রশিদ।    

তিনি বলেন, আগে থেকেই এই এলাকায় আনারস চাষ হয়। তবে পরিমাণে অনেক কম ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই ফসলটি লাভজনক হওয়ায় আনারস চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়লেও এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব খারাপ। সড়কগুলো ভাঙা ও কাঁচা হওয়ার কারণে এই এলাকার উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে খরচ বেশি হয়। এতে লাভ কমে যাচ্ছে চাষিদের।          

আনারস চাষিরা জানান, প্রতিটি আনারস উৎপাদনে খরচ হয় সাত থেকে আট টাকা। এরপর ফলন পরিপক্ব হলে জাতভেদে চলতি মৌসুমে প্রতিটি আনারস বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা দরে। এছাড়াও অনেকেই ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ প্রতি বিক্রি করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলবাড়ীয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, কৃষি সমৃদ্ধ উপজেলা ফুলবাড়ীয়া। লাল চিনি, কাঁচা হলুদের পাশাপাশি আনারসের জন্যও এই এলাকা বিখ্যাত। তবে এসব চাষিদের জন্য সরকারিভাবে কৃষি প্রণোদনা দেওয়ার সুযোগ নেই। ফলে আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে থাকি। চলতি বছরে এই উপজেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে জলডুব, হানিকুইন ও ক্যালেন্ডর জাতের আনারস চাষ হয়েছে। এতে বিক্রি হবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা।        

বাংলাদেশ সময়: ১০০১ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।