চাঁপাইনবাবগঞ্জ: আমচাষি, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং কৃষিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী এ বছরও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম পাড়ার সময়সীমা থাকছে না। তবে অপরিপক্ব আম বিকল্প উপায়ে পাকালে বা বাজারজাত করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিব খাঁন।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুপুরে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সম্মেলন কক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ম্যাংগো ক্যালেন্ডার প্রণয়ন, নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম উৎপাদন, বিপণন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ বার্তা দেন।
এ কে এম গালিব খাঁন বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের সুনাম রয়েছে। এ সুনাম ধরে রাখতে আমচাষিদের দাবির প্রেক্ষিতে আম ক্যালেন্ডার এবারও করা হচ্ছে না।
সভায় সব সিন্ডিকেট ভেঙে জেলার আম সহজে পরিবহণ ও বাজারজাতকরণের জন্য প্রতিনিয়ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করারও সিদ্ধান্ত হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের সব পদ শূন্য থাকায় জেলা প্রশাসক ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাসুম আলীকে রাজশাহীতে না থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেশি সময় দেওয়ার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি ভোক্তাদের খরচ কমাতে কুরিয়ার সার্ভিসগুলোকে ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেনের মাধ্যমে আম পরিবহনের জন্য আহ্বান জানান।
এ সময় সভায় স্বল্প মূল্যে রেলের মাধ্যমে আম পরিবহন, বাজার ব্যবস্থা পর্যালোচনা, আম বিক্রির সময় ওজন জটিলতা এবং বিভিন্ন কুরিয়ারের মাধ্যমে আম পরিবহনে বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি সমাধানের বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয় এবং সর্বসম্মতিক্রমে জেলার আম পরিপক্ব হওয়ার পরই বাজারজাত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিদের স্বার্থে লোকসান সত্ত্বে আগামী ১০ জুন ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন আবারো চালু করছে রেলওয়ে। তাই রেলকে বাঁচাতে সব চাষিদের এ ট্রেনের মাধ্যমে আম ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর অনুরোধ জানান।
আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সমস্যাগুলো শোনার পর দ্রুত তা খতিয়ে দেখারও আশ্বাস দেন তিনি। তবে কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের ভোক্তাদের স্বার্থে রেলের মাধ্যমে আম পরিবহন করার আহ্বান জানান।
তিনি কুরিয়ার সাভিসের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, অন্যান্য ভোক্তাদের মতই আপনারা মাত্র দেড় টাকার কম মূল্যে ঢাকা আম পরিবহন করতে পারবেন। এতে করে আপনাদের পরিবহন খরচ কমলে ভোক্তারা উপকৃত হবে। তারাও কম খরচে আম পরিবহন করতে পারবেন।
ফল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মোখলেসুর রহমান জানান, চাষিদের স্বার্থে যেহেতু আম পাড়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়নি, তাই কোনো অসাধু ব্যবসায়ী বা চাষি যেন অপরিপক্ব আম বাজারজাত করতে না পারে সেজন্য আমচাষিদেরই সজাগ থাকতে হবে।
প্রস্তুতিমূলক সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের চিফ কমার্সিয়াল ম্যানেজার সুজিত কুমার বিশ্বাস, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সহ-সভাপতি মসিউল করিম বাবু, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাসুম আলী, কৃষি উদ্যোক্তা মুনজের আলম মানিক, কানসাট আম আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপুসহ বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, চলতি বছর জেলায় ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে ৭৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮২৫টি আমগাছে আম চাষ করা হচ্ছে। এবছর মুকুল কম আসায় এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আমের উৎপাদন কমে যাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা না বাড়িয়ে গত বছরের ন্যায় মোট ৪ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২৪
এসএএইচ