টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার সুস্বাদু আনারস পেয়েছে জিআই স্বীকৃতি। জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন বা ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দিত জেলাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মধুপুর গড়াঞ্চল রসে টস টস আনারসের রাজধানী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে অনেক আগেই। এ অঞ্চলে সর্ব প্রথম ১৯৪২ সালে আনারস চাষ শুরু হয়। মধুপুরের ইদিলপুর গ্রামের গারো সম্প্রদায়ের ‘মিজু বুড়ি’ নামে এক বৃদ্ধা মেঘালয় থেকে ৪০টি চারা এনে সর্ব প্রথম এ এলাকায় আনারস চাষ করেন। ভালো ফলন ও সুস্বাদু হওয়ায় পরের বছর গারো সম্প্রদায়ের অনেকে মেঘালয় থেকে মোট ৭৫০টি চারা এনে চাষ শুরু করেন। টস টসে রসালো ও খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং প্রচুর পুষ্টি সমৃদ্ধ হওয়ায় প্রাকৃতিকভাবেই এর বিস্তার হতে থাকে।
বতর্মানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আনারস চাষ হয়। ৮২ বছরের ঐতিহ্য-ইতিহাসের সঙ্গে মিশে আছে মধুপুর গড়াঞ্চলের সুস্বাদু এ আনারস। সম্প্রতি এমডি-২ নামে থাইল্যান্ডের একটি আনারসের জাত এনে মধুপুরে চাষ করা হচ্ছে। মধুপুরের জলছত্র বাজার আনারসের একটি বিখ্যাত হাট। প্রতিদিন সেখানে কোটি টাকার আনারস বেচাকেনা হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আনারস কিনে ট্রাকে ভরে নিয়ে যান। আকার ভেদে ২০ থেকে ৬০ টাকায় প্রতিটি আনারস বিক্রি হয়। আনারস চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগের নানামুখী উদ্যোগে প্রতি বছর চাষির সংখ্যা বাড়ছে। মধুপুর থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ঢাকা, কুষ্টিয়া, বগুড়া, সিলেট, নাটোর, রাজশাহী, খুলনা, হবিগঞ্জ, নীলফামারী, গাইবান্ধা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ ও দিনাজপুরসহ সারাদেশে আনারস যায়।
মধুপুরের আনারস চাষি রাসেল মিয়া বলেন, আমি ছয় বিঘা জমিতে আনারস চাষ করেছি। এতে তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। বর্তমান যে বাজার দর আছে এ রকম থাকলে খরচ বাদ দিয়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ থাকবে। আমাদের মধুপুরের আনারস জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে জেনে আমরা অনেক খুশি।
স্থানীয় আবু সাঈদ মিয়া বলেন, আমাদের মধুপুরের আনারসের সুনাম সারাদেশেই রয়েছে। এখানকার আনারস খেতে খুবই সুস্বাদু। দুদিন আগে আমাদের আনারস জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এতে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত।
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মধুপুরের কৃষক ছানোয়ার হোসেন বলেন, মধুপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য আমাদের আনারস। জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা গর্বিত, আনন্দিত ও উদ্বেলিত। বিশ্ব মানচিত্রে এ আনারসের কল্যাণে মধুপুর উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে টিকে থাকবে।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাকুরা নাম্মী বলেন, চলতি বছর জেলায় সাত হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মধুপুর উপজেলায় ছয় হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে। বাকিগুলো ঘাটাইলসহ অন্যান্য উপজেলায়। গত বছর জেলায় সাত হাজার ৬৬১ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়। দুই লাখ ৮২ হাজার মেট্রিক টন আনারস উৎপাদিত হয়েছে গত বছর।
তিনি আরও বলেন, মধুপুরে জায়ান্টকিউ (ক্যালেন্ডার), হানিকুইন (জলডুগী) ও থাইল্যান্ডের এমডি-২ জাতের আনারস চাষ করা হয়ে থাকে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আনারস প্রক্রিয়াজাত করে উদ্যোক্তাদের জ্যাম, জেলি, জুস ও আচার উৎপাদনের পরামর্শ দেওয়া হয়। মধুপুরের আনারস বিদেশেও রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হক জানান, রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জেলা টাঙ্গাইল। জেলাটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি ও চমচমের পর এবার মধুপুরের আনারস জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল। এতে আমরা আনন্দিত, সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় এর বিশ্বব্যাপী ব্রান্ডিং এবং বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ আরও বিস্তৃত হবে। জিআইয়ের সুফল পেতে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হবে।
টাঙ্গাইলের কাসা শিল্প ও জামুর্কির সন্দেশের জিআই স্বীকৃতি পেতে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মুনিম হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়- টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ নম্বর শ্রেণিতে পণ্যটি (মধুপুরের অনারস) জিআই-৫২ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
এসআই