ফেনী: ধানের ডগায় যেমন জমেছে শিশির বিন্দু কৃষকের মনেও তেমন জমেছে কষ্টের মেঘ। বছরের এ সময়ে ঘরে ফসল উঠার কথা থাকলেও জমি পড়ে আছে অনাবাদি।
ফেনীতে গত আগস্টের ভয়াবহ বন্যার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে চলতি আমন ধানের মৌসুমে। অর্জিত হয়নি আবাদ লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও। জমি খালি পড়ে থাকায় দুশ্চিন্তায় প্রান্তিকের কৃষক। প্রণোদনাসহ সার, বীজের সহায়তার কথা থাকলেও তা কাগজে কলমে। বাস্তবে নেই ছিটেফোঁটাও।
ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নে চলতি আমন মৌসুমে মাত্র ১৭৩ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। যেখানে গত আমন মৌসুমে (২০২৩ এর ১৫ জুন থেকে ১৫ অক্টোবর) আবাদ হয়েছিল এক হাজার ২৬০ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছিল ছয় হাজার ৩০০ মেট্রিক টন ধান। এ মৌসুমে গেল মৌসুমের উৎপাদনের সিকি ভাগও উৎপাদন হবে না। কারণ অনাবাদি রয়েছে এক হাজার ৮৭ হেক্টর জমি।
ফসলের মাঠের এমন চিত্র জেলার সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, দাগনভূঞাঁসহ জেলার সবখানে। ঘরে ধান তোলার কথা থাকলেও কৃষকের মনে হতাশা। ক্ষতি পোষাতে চাইছেন সরকারি সহায়তা।
পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক কবির আহম্মদ বলেন, প্রতি বছর ২০০ শতক জমিতে আমন ধানের আবাদ করেন তিনি। বন্যার কারণে বেশির ভাগ জমিই খালি রয়েছে। ঘরের খোরাকি কীভাবে মেটাবে সেই চিন্তা তার মাথায়।
পরশুরাম উপজেলার কোলাপাড়া এলাকার কৃষক সলিম উল্লাহ বলেন, ধান আবাদের যেটুকু জমি ছিল তার পুরোটাতে এখন বালু আর বালু। বন্যার প্রভাবে ফসলি জমি থেকে ঘর-বসতি, পুকুর সবখানে বালু। তাই সম্ভব হয়নি আমন আবাদ।
এদিকে বন্যার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও তার দৃশ্যমান প্রভাব এখনো রয়েছে ফসলের মাঠে। আর্মিওয়ার্মসহ নামে-বেনামের পোকায় যেমন নষ্ট হচ্ছে ধান তেমনি নষ্ট হচ্ছে সবজিসহ সব ধরনের ফুল-ফসল। অবশ্য কৃষি বিভাগ বলছে পোকা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তারা।
সোনাগাজী এলাকার কৃষক এসহাক আহমেদ বলেন, বন্যার পর আরেক সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন ধরনের পোকা। নামে বেনামের এসব পোকা খেয়ে ফেলছে ধান গাছের চারা।
গত আগস্টের বন্যায় ফেনীর কৃষিখাতে ৯০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়। এ আমন মৌসুমে তা ফুটে উঠছে। অর্ধেকের বেশি জমি খালি পড়ে আছে। কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকের ক্ষতি পোষাতে প্রণোদনা, সার, বীজসহ পরামর্শ দিয়ে মাঠে আছেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ফেনীর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক পুষ্পেন্দু বড়ুয়া বলেন, বীজ ও প্রণোদনাসহ সার্বিক সহায়তা নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে আছে কৃষি বিভাগ।
ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের উপ সহকারী কৃষি অফিসার প্রণব চন্দ্র মজুমদার বলেন, বন্যার কারণে মাঠের অনেক জমির ধান নষ্ট হয়েছে। আবাদি জমিগুলো খালি পড়ে রয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ সার্বিক সহায়তা নিয়ে মাঠে রয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে গত অর্থবছরে ফেনীতে আমনের আবাদ হয়েছিল ৬৬ হাজার ৭৫২ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ নয় হাজার ২০৭ মেট্রিক টন চাল। সেখানে চলতি অর্থবছরে আবাদ হয়েছে মাত্র ২৬ হাজার ৭৬৪ হেক্টর জমিতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৪
এসএইচডি/আরআইএস