ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

ফলন ভালো হলেও ধানের দাম নিয়ে হতাশ সাতক্ষীরার কৃষকরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৩ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৬
ফলন ভালো হলেও ধানের দাম নিয়ে হতাশ সাতক্ষীরার কৃষকরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সাতক্ষীরা: ‘সাড়ে চারশো টাকার নিচে ধানকাটা শ্রমিক পাইনি। বিঘাপ্রতি গড়ে সাড়ে ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ।

ফলন ১৭ থেকে ১৮ মণ। কিন্তু বাজারে দাম নেই। চিকন চালের বস্তাপ্রতি (৬০ কেজি) সর্বোচ্চ দাম এক হাজার ৪০ টাকা। আর মোটা চাল সর্বোচ্চ সাতশো চল্লিশ টাকা। আমরাতো আর পারছি নে। গত মৌসুমেও লাভের মুখ দেখিনি। কী করবো বুঝে উঠতে পারছি নে। ’ 

সাতক্ষীরায় চলতি বোরো মৌসুমে ধানের ফলন ভালো হলেও বাজারে দাম না পাওয়ায়, এভাবেই হতাশার কথা ব্যক্ত করছিলেন সদর উপজেলার তুজলপুর গ্রামের কৃষক ফারুক আহমেদ।  

বাংলানিউজকে তিনি জানান, সরকার ভর্তুকি দিয়ে ১৫ টাকায় মোটা চাল দিচ্ছে। এর প্রভাবে চিকন চালের বাজারেও ধস নেমেছে। এভাবে চলতে থাকলে কৃষক বাঁচবে না।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে জেলার ৭৩ হাজার ৭শ ৭৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ ও দুই লাখ ৯৫ হাজার ৪২ মেট্রিক টন ধান উৎপাদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। কিন্তু আবাদের আওতায় আসে ৭৩ হাজার ৪শ ৪৫ হেক্টর জমি।  

জেলার তালা উপজেলায় জলাবদ্ধতার কারণে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও বাম্পার ফলন হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ। কিন্তু দাম নিয়ে রীতিমতো হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।  

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হরিশপুর গ্রামের কৃষক ইউনুস আলী বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর নিজের আট বিঘা জমিতে ধান করে ২৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছিলো। তাই এ বছর এক বিঘা রেখে বাকি জমি ভাগে দিয়ে দিয়েছি। ওই এক বিঘা করতেই নিজের শ্রমসহ ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম নেই। ধান বিক্রি করবো না। বাড়ি খাওয়ার জন্য রেখে দেবো। এভাবে চলতে থাকলে কৃষক বাঁচবে না।  

‘সরকার ২৩ টাকা দরে ধান কিনবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। যদি সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনে তাহলে হয়তো মোটা ধানচাষিরা কিছুটা হলেও বাঁচতে পারবে। আর তা না হলে সেই লাভবান হবে মধ্যসত্ত্বভোগীরা। কিন্তু চিকন চালের ধান চাষীদের বাঁচার পথ নেই। ’ বলেন কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম।  

কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা গ্রামের কৃষক জিয়াদ আলী জানান, তিনি ১০ বিঘা জমিতে ব্রি-৫৫ জাতের বোরো ধান চাষ করেছিলেন। জমি নিজের হওয়ায় তার বিঘা প্রতি আট থেকে নয় হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধান পেয়েছেন ১৪ থেকে ১৫ বস্তা করে। নিজের পারিশ্রামিক ধরলে লাভের মুখ দেখা যাবে কিনা- সে বিষয়ে সন্দিহান তিনি।

একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বোরো ধানের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এছাড়া পোকার আক্রমণও কম ছিলো। পাকা শুরু হলে কিছু কিছু এলাকায় ধান গাছ শুয়ে পড়েছিলো। এতে তেমন ক্ষতি হয়নি। এজন্য আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। তবে দাম নিয়ে হতাশ সবাই।  

এদিকে, বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডেজেনাস নলেজের (বারসিক) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, গত বোরো মৌসুমে উৎপাদনের যাবতীয় খরচ ও নিজের শ্রমমূল্য বাদ দিয়েও প্রত্যেক কৃষককে ২শ টাকা করে ভর্তুকি দিতে হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে পেশা হিসেবে ‘কৃষি’ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে জেলার তিন লাখেরও বেশি কৃষক বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। ফলনও খুবই ভালো। কৃষকরা ইতোমধ্যে কোনোপ্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই ধান কেটে ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। দু’-একটি মাঠ বাদে সব ধান ঘরে উঠে গেছে। আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশি হবে।  

কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজার দরের বিষয়টি নিয়ে আমাদের করার কিছু নেই। তবে এবার শুনছি খাদ্যবিভাগ সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনবে, সেটা হলে হয়তো কৃষকরা লাভবান হবেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৬
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।