কৃষকরা জানান, রংপুর অঞ্চলের মধ্যে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলায় চাষ হতো জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তামাক। তামাকের ব্যাপকতার কারণে এসব এলাকায় গড়ে উঠেছিল বড় বড় তামাক ক্রয় কেন্দ্র।
মানুষ, গবাদিপশু, পাখির খাদ্য এবং জ্বালানি হিসেবে প্রতিনিয়ত ভুট্টার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কম খরচে অধিক মুনাফার আশায় এ অঞ্চলে বাড়ছে ভুট্টার চাষাবাদ। চাষাবাদ বেড়ে যাওয়ায় ভুট্টার বড় বাজার তৈরি হয়েছে এখন পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলায়। গড়ে উঠেছে বড় বড় গোডাউন ও ভুট্টা ক্রয় কেন্দ্র। মাটির গুণগত মান ভালো হওয়ায় এখানে উৎপাদিত ভুট্টাও বেশ ভালো মানের। তাই ব্যবসায়ীরা ছুটছেন এ অঞ্চলে। তারা এখান থেকে ভুট্টা কিনে দেশের যেসব কারখানায় ভুট্টাজাত পণ্য তৈরি হয় সেসব কারখানায় সরবরাহ করছেন।
পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের বুড়িরবাড়ি গ্রামের তামাক চাষি গফুর আলী ও রহিদুল ইসলাম বলেন, বিগত ১০ বছর আগে পুরো এলাকায় ছিল শুধু তামাক আর তামাক। তামাকের রাজধানী ছিল এটা। উৎপাদন কমে যাওয়ায় আগের মতো আর তামাক চাষ হয় না। কৃষক হিসেবে সবই কিছু কিছু করে চাষ করতে হয়, তাই কিছু তামাক চাষ করেছি। তবে ভুট্টা চাষ করেছি অনেক বেশি।
হাতীবান্ধার উপজেলার পারুলীয়া গ্রামের চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, আগে সব জমিতে তামাক করতাম। এখন কোনো তামাক নেই। ছয় বিঘা জমির সবটাই ভুট্টা। ভুট্টার কাণ্ড, পাতা, ছাল-বাকল সব কিছুই বিক্রি করা যায়। চাহিদা বেশি থাকায় কম খরচে অধিক মুনাফার জন্য ভুট্টার বিকল্প নেই। ভুট্টাজাত পণ্য তৈরির কারখানা এ অঞ্চলে গড়ে উঠলে চাষিরা আরো বেশি লাভবান হবে। তাতে আর্থ সামাজিক অবস্থার আমুল পরিবর্তনের পাশাপাশি ক্ষতিকর তামাক চাষ একেবারে বন্ধ হবে।
হাতীবান্ধার সিংগিমারী এলাকার এক সময়ের তামাক চাষি আজিজার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, শ্রমিকসহ উৎপাদন খরচ বাদে ভুট্টায় বিঘা প্রতি লাভ আসে সাত/আট হাজার টাকা। গত বছর ছয় বিঘায় ৫০ হাজার টাকা লাভ হওয়ায় এবার তামাক ছেড়ে ১২ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। আবহাওয়া ও বাজার ভালো থাকলে লক্ষাধিক টাকা মুনাফা হবে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি রবি মৌসুমে জেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষমাত্রা ২৮ হাজার ৫২০ হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছে। আর চাষ হয়েছে ২৬ হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিতে। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৯ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন। গত বছর দুই মৌসুমে এ জেলায় দুই লাখ ৮১ হাজার ৮৯৮ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদিত হয়। তামাক চাষ প্রতি বছর এক হাজার হেক্টর করে কমে এ বছর চাষ হয়েছে আট হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে।
এ বছর তামাক ও ভুট্টা চাষের তুলনা করলে দেখা যায়, জেলার সদর উপজেলায় ভুট্টা ১১৭৫ হেক্টর; তামাক ৫৫০ হেক্টর, আদাতমারীতে ভুট্টা ৩১০ হেক্টর; তামাক ২২৭৫ হেক্টর, কালীগঞ্জে ভুট্টা ৩০৫০ ও তামাক ৮৭০ হেক্টর, হাতীবান্ধায় ভুট্টা ১০ হাজার ২০ হেক্টর ও তামাক ৪৬০ হেক্টর এবং পাটগ্রাম উপজেলায় ভুট্টা চাষ হয়েছে ১২ হাজার ৫০ হেক্টর ও তামাক চাষ হয়েছে ৩৮৯৫ হেক্টর জমিতে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক বিধু ভূষণ রায় বাংলানিউজকে জানান, কৃষক যে ফসলে কম খরচে বেশি মুনাফা পায়, সেটা চাষাবাদের দিকেই ঝুঁকে পড়ে। ব্র্যান্ডিং পণ্য হিসেবে ভুট্টা চাষাবাদ বাড়াতে মাঠে কাজ করছে কৃষি বিভাগের লোকজন। ফলে বাড়ছে ভুট্টার চাষাবাদ।
এ জেলায় ভুট্টাজাত পণ্য তৈরির শিল্প কারখানা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৮
এসআই