ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

শঙ্কা থেকেই হাওরপাড়ে বোরোতে কাস্তে

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৮
শঙ্কা থেকেই হাওরপাড়ে বোরোতে কাস্তে গতবার অকাল বন্যায় তলিয়ে যায় সব ফসল। এবার তাই তড়িঘড়ি করেই বোরো তুলছেন কৃষক। সিলেটের হাকালুকি হাওর এলাকা ঘুরে ধান কাটার এ ছবি তুলেছেন আবু বকর

সিলেট: ‘জমিনে পাকনা (পাকা) ধান। গত বছর এমনেউ (এমনিতে) ধান পানিয়ে নিছে। ইবার আল্লায় দয়া খরছই (করছেন)। পানি আওয়ার (আসার) আগে ধান তুলতে চেষ্টা খরিয়ার (করছি)’- এমন অভিব্যক্তি সিলেট সদর উপজেলার কান্দিরগাঁওয়ের কৃষক শানুর মিয়ার।

বৈশাখের আকাশে মেঘের ঘনঘটা। আবহাওয়া কখন কি হয়, বলা মুশকিল।

এজন্য ক্ষেত করা ৫ কেদার (১৫০ শতক) জমিতে ৬ জন লোক লাগিয়ে ধান কাটাচ্ছেন শানুর। তার মতো শঙ্কা নিয়েই বোরো কাটার ধুম পড়েছে হাওরপাড়ের মানুষের মধ্যে।

জমিতে পাকা ধান রেখে রাতে ঘরে ঘুম আসে না, বললেন একই এলাকার আব্দুর রহিম। ৮ কেদার জমি ক্ষেত করেছেন। পুরোপুরি ধান কাটা পর্যন্ত নিস্তার নেই। ধান তুলতে আরো সপ্তাহ সময় লাগবে। এজন্য তড়িঘড়ি করে লোক লাগিয়ে ধান কাটাচ্ছেন। এই ‍কৃষক বলেন, আরো কিছুদিন সময় পেলে ধান ভালোভাবে পাকতো। কিন্তু গত বছর ধান পানিতে নিয়ে গেছে। এক কাস্তে ধানও কাটতে পারিনি। এবার কি না কি হয়? এই আশঙ্কা থেকেই তাড়াহুড়ো করে ধান তুলছি।  

সরেজমিন দেখা গেছে, হাওরে কেউ রোজ কামলা (কাজের লোক), কেউবা ধানের বদলে মজুরি হিসেবে ধান দিয়ে কামলা (কাজের লোক) লাগিয়ে ধান কাটাচ্ছেন। তবে হাওরের প্রায় অর্ধেক ধান এরইমধ্যে উঠে গেছে বলে জানিয়েছেন অনেক কৃষক।  

ধান তুলতে ঘরে বসে নেই কৃষাণীরাও। কৃষকদের সঙ্গে হাওরেই ধান মাড়াই করে গুটি ধান পরিচ্ছন্ন করতে দিন থেকে সন্ধ্যা পার হয় তাদের- এমনটি জানান কৃষাণী ছমিরুন বিবি।

কাটা ধান আঁটি বাঁধছেন কৃষক

হাকালুকি হাওরের কৃষক লিটন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, হাওরের ৮ কেদার জমিতে এবার আটাইশ ধানের ক্ষেত করেছেন। কিছু ধান নষ্ট হয়ে যায় পোকার আক্রমণে। এরপরও এরইমধ্যে মোটামুটি সব ধান ঘরে তুলেছেন। গত বছর ১৮ কেদার ক্ষেত করলেও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এবার কম জমিতে চাষ করেছেন বলে জানান তিনি।  

কৃষকরা জানান, এবার ধানের জাতের মধ্যে বেশি ক্ষেত হয়েছে ব্রি-২৮, ২৯ ও ৪৫, হাইব্রিড এসএলএসএইচ, হীরা জাগরণ, পর্বত জিরা। স্থানীয় জাতের মধ্যে খৈয়া বোরো, টেপি, গোচি ইত্যাদি।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক আলতাফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সিলেট বিভাগে বোরো ধান পুরোপুরি উঠতে আরো দুই সপ্তাহের বেশি সময় লাগতে পারে।

এরইমধ্যে প্রায় ১৩ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র। যার মধ্যে সিলেটে ২৩, মৌলভীবাজারে ২৪, হবিগঞ্জে ১০ এবং সুনামগঞ্জে ৮ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে।

‘স্বপ্ন’ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন কৃষক

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার ফসল বেশি হয়েছে। সিলেট বিভাগে এবার ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫১৪ হেক্টরে বোরো চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছিলো। সেখানে আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৮১ হাজার ৫২১ হেক্টরে। এর মধ্যে সিলেটে ৮০ হাজার ৪৪৪ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ৮৩ হাজার ৩৫০ হেক্টরে।  

মৌলভীবাজারে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৫১ হাজার ৪৭১ হেক্টরে। চাষাবাদ হয় ৫৪ হাজার ১২ হেক্টরে। হবিগঞ্জে ১ লাখ ১৯ হাজার ২৯৪ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও আবাদ হয় ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩০ হেক্টরে। এছাড়া বিভাগের সবচেয়ে বেশি ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় সুনামগঞ্জে ২ লাখ ১৯ হাজার ২৯৪ হেক্টর। সেখানে আবাদ হয় ২ লাখ ২২ হাজার ৭১৯ হেক্টর।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৮
এনইউ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।