ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

লিচুর ফলনে সবুজ কৃষকের স্বপ্ন

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৮
লিচুর ফলনে সবুজ কৃষকের স্বপ্ন গাছের শাখায় ঝুলছে সবুজরঙা লিচু/ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: হরিৎরঙা ফুলগুলো ক’দিন আগেও শোভা ছড়াচ্ছিল। শাখা-প্রশাখায় থাকা ফুলের সেই কুঁড়িগুলো এখন ক্রমেই পরিণত হয়ে উঠছে। বৈশাখের হালকা বৃষ্টিতে তাদের এখন নবযৌবন। গুটিগুলো রূপ নিয়েছে লিচুতে। আমের পাশাপাশি এবার তাই সুমিষ্ট রসালো লিচুতেও সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখছেন রাজশাহীর কৃষকেরা। 

রাজশাহীর পবা উপজেলার মথুরা গ্রামের কৃষক হাসান আলী বলেন, আমের মুকল আসে। আর লিচুর আসে ফুল।

সেখান থেকেই গুটি বাঁধে লিচু। এরপর ধীরে ধীরে পরিণত হয়। সাধারণত হালকা ঠাণ্ডা আবেশে লিচুর ফুল ভালো হয়। আর ফুল ফোটার পর বৃষ্টি না হলে তা ঝরেও পড়ে না।

এতে গুটির সংখ্যা বাড়ে। আর গুটি বাঁধার পর বৃষ্টি হলে তা স্থায়ীত্ব পায়। এর ওপর যদি আবার বৃষ্টির পানি পায় তাহলে ফলন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বহুদিন পর এবার তাই ঘটেছে প্রকৃতিতে। যখন হালকা ঠাণ্ডা প্রয়োজন ছিল তখন তা ছিল। বৈশাখের সময় যখন বৃষ্টি প্রয়োজন, তখনও তাই হয়েছে।  

গাছের শাখায় ঝুলছে সবুজরঙা লিচু/ছবি: বাংলানিউজএখন জৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত যদি কেবল তাপপ্রবাহ সহনীয় মাত্রায় থাকে তাহলে বাম্পার ফলন হবে। আর তাপপ্রবাহ বয়ে গেলে লিচুর গুটি পুড়ে মাটিতে ঝরে পড়বে বলেও জানান মথুরা গ্রামের এই লিচু চাষি।  

একই গ্রামের অপর লিচু চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার লিচুর উৎপাদন ভালোই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এজন্য বর্তমানে লিচু চাষিরা গাছের পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। প্রায় প্রতিটি বাগানেই গুটি বাঁধা লিচুগুলো সবুজরঙা হয়ে উঠেছে।  

সুমিষ্ট রসালো লিচুর জন্য দিনাজপুর বিখ্যাত। তবে এখন রাজশাহীও কোনো অংশে কম যায় না। ফলন ভালো হওয়ায় প্রতি বছরই রাজশাহীতে লিচুর আবাদ বাড়ছে। পবা ছাড়াও রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী, বাগমারা, বাঘা, চারঘাট, পুঠিয়া ও দুর্গাপুরে আগের চেয়ে বেশি লিচু চাষ হচ্ছে।

এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগরীর ছোটবোনগ্রাম, কাটাখালী, রায়পাড়া ও বুলনপুর এলাকাতেও বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষ শুরু হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি বাগানের গাছগুলোতে এখন থোকায় থোকায় লিচুর সবুজ গুটি ঝুলে আছে। যার শোভায় সবুজ প্রকৃতি আরও সবুজ হয়ে উঠেছে।  

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, গেলো কয়েক বছরে আমের পাশাপাশি শুধু লিচু চাষ করেই জেলার শতাধিক চাষি স্বনির্ভর হয়ে উঠেছেন। এখন ছোট-বড় মিলিয়ে রাজশাহী শহরেই শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে। বাগান ছাড়াও বসতবাড়িতে দেশি লিচুর পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল চায়না-৩ এবং বোম্বে ও মাদ্রাজি জাতের লিচু চাষ হচ্ছে। তাই হালে লিচু চাষও জনপ্রিয়তা পেয়েছে এ অঞ্চলে।  

গাছের শাখায় ঝুলছে সবুজরঙা লিচু/ছবি: বাংলানিউজরাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) দেব দুলাল ঢালি বাংলানিউজকে বলেন, গত ৪/৫ বছরে বছরে এই জেলায় লিচু চাষ বেড়েছে। কেবল আম ও লিচুর চাষ করেই বছরজুড়ে স্বচ্ছল থাকছেন অধিকাংশ কৃষক। তাই ধীরে ধীরে লিচু চাষেও কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। লিচু চাষ করে অনেক কৃষক স্বাবলম্বী হয়ে ওঠায় এবার লিচুতেও নীরব বিপ্লব ঘটতে চলেছে।  

বর্তমানে রাজশাহী জেলার ৪৭৬ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। এখন কেবল তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার লিচুর বাম্পার ফলন হবে বলেও ধারণা দেন রাজশাহী কৃষি বিভাগের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৮
এসএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।