ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

পুষ্টি নিরাপত্তায় বায়োফরটিফাইড শস্যের বিকল্প নেই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৮
পুষ্টি নিরাপত্তায় বায়োফরটিফাইড শস্যের বিকল্প নেই বিএআরসি’র সম্মেলন কক্ষে সেমিনারে বক্তারা-ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: পাঁচ বছরের নিচের ৪১ শতাংশ শিশু এখনও জিংক স্বল্পতায় ভুগছে। আবার বিভিন্ন বয়সী ৭৩ শতাংশ নারীর রয়েছে জিংক স্বল্পতা। সার্বিকভাবে উচ্চ মাত্রার অপুষ্টির ঝুঁকিতে এখন বাংলাদেশ। পুষ্টি নিরাপত্তাকে স্বাস্থ্যগত ইস্যু হিসেবে বিবেচনা না করে কৃষি উৎপাদন আর্থ-সামাজিক বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করতে হবে। কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন সম্ভব। পুষ্টি নিরাপত্তায় বায়োফরটিফাইড শস্য হতে পারে অন্যতম বিকল্প।

রোববার (০৪ নভেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) সম্মেলন কক্ষে হারভেস্ট প্লাস আয়োজিত ‘ইমপ্রুভিইং নিউট্রিশন থ্র বায়োফরটিফাইড ক্রপ’ শীর্ষক সেমিনারে একথা বলেন বক্তারা।

বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মো. কবির ইকরামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) ড. মো. আবদুর রউফ।

সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুকের সঞ্চালনায় কর্মশালায় কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) নির্বাহী পরিচালক ড. ওয়ায়েস কবীর, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (ইরি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হোমনাথ ভান্ডারি, সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. জয়নুল আবেদিন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (ব্রি) গবেষণা পরিচালক ড. তমাল লতা আদিত্য উপস্থিত ছিলেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে হারভেস্ট প্লাসের গ্লোবাল গবেষণা পরিচালক ওলফ পিফেইফার বলেন, বিশ্বের ৩০টি দেশে ১৯০টি বায়োফরটিফাইড শস্যের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মধ্যে ধান, গম, ভুট্টা, মসুর, বিনস, কাসাভা, কমলা, সারগম অন্যতম। বাংলাদেশে উচ্চ মাত্রার অপুষ্টি থাকায় বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। সারাবিশ্বে এখন ৮৫ লাখ পরিবার বায়োফরটিফাইড ক্রপ উৎপাদন করছে। আর ৪ কোটি মানুষ সরাসরি এ ধরনের শস্য গ্রহণের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে।

হারভেস্ট প্লাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার ড. মো. খায়রুল বাশার বলেন, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এ পর্যন্ত ১৬টি বায়োফরটিফাইড ক্রপ জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মধ্যে জিংকসমৃদ্ধ ধানের জাত আটটি,  জিংক ও আয়রনসমৃদ্ধ মসুরের জাত তিনটি, জিংকসমৃদ্ধ গমের জাত একটি এবং ভিটামিনসমৃদ্ধ মিষ্টি আলুর জাত চারটি। প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে মিনিকেট নামের ধানের যে চালটি পাওয়া যাচ্ছে তাতে জিংক কম আছে।

তিনি আরও বলেন, হারভেস্ট প্লাস প্রোগ্রাম বাংলাদেশে জিংকের ঘাটতি পূরণে ব্রি ও ইরির সহায়তায় আবিষ্কার করে জিংক ধান। জিংকসমৃদ্ধ ধানে জিংকের পরিমাণ বেশি থাকে। জিংকসহ অন্য অপুষ্টির ঘাটতি পূরণে বিশ্বে ২০০২ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে হারভেস্ট প্লাস প্রোগ্র্রাম।  

ড. মো. আবদুর রউফ বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের জন্য বাংলাদেশের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এজন্য উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি উচ্চ মূল্যের শস্য উৎপাদন, পরিবেশকে রক্ষা করে কৃষি উৎপাদনে নজর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুষ্টি নিরাপত্তায় গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর করা হয়েছে। যেকোন শস্যের জাত জনপ্রিয় করতে কৃষকের চাহিদাকে গুরুত্ব দিতে হবে।

সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, দেশের পুষ্টি নিরাপত্তায় বায়োফরটিফাইড ক্রপের কোনো বিকল্প নেই। তাই এটিকে উৎসাহিত করতে গেলে যেমন গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে তেমনি কৃষক পর্যায়ে আবাদের জন্য ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীন বলেন, যেকোন শস্যের জাত জনপ্রিয় করতে গেলে কৃষকের স্বার্থকে সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে। বায়োফরটিফাইড ক্রপ দেশে বাণিজ্যিকভাবে আবাদের ক্ষেত্রে কতটুকু সফলতা এনে দেবে সে বিষয়ে গবেষণা জরুরি। পুষ্টি নিরাপত্তায় এসব শস্যের জাত প্রয়োজনীয় হলেও কৃষকের আর্থিক নিরাপত্তায় কতটুকু সহায়ক হবে সেটি বিবেচনায় নিয়ে সম্প্রসারণ করতে হবে। জাতটি জনপ্রিয় করতে মিডিয়া, সম্প্রসারণ কর্মী, নীতি নির্ধারণ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৮
এমআইএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।