ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

ফুলকপির কেজি এক টাকা ২৫ পয়সা!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৯
ফুলকপির কেজি এক টাকা ২৫ পয়সা! হাটে চলছে ফুলকপি বিক্রি, ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেও ফুলকপি বিক্রি হয়েছে ৬ টাকা কেজি দরে। মাঝখানে পেরিয়ে গেছে মাত্র দু’সপ্তাহ। কেজিপ্রতি ফুলকপির দাম কমে এসেছে পৌন ৫ টাকা থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। সে হিসেবে প্রতিকেজি ফুলকপি মিলছে এক টাকা ২৫ পয়সাতে। বাঁধাকপির চিত্রটাও একইরকম।

একই সময় প্রতিপিস বাঁধাকপি ৪ টাকা হিসেবে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে সেই বাঁধাকপির দামও অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে।

কমবেশি অন্যান্য সবজির দামও কমেছে। তবে ফুলকপি ও বাঁধাকপির এতো কমেনি। তবে খুচরা বাজারে কিন্তু এই দুই জাতের সবজি এখনও কয়েকগুণ বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে।

শস্যভান্ডারখ্যাত বগুড়ায় সবজির সবচেয়ে বড় মোকাম মহাস্থানহাট। প্রতিদিন কাকডাকা সকাল থেকেই এই মোকামে ব্যাপক পরিমান সবজির আমদানি ঘটে থাকে। শীত মৌসুমের সবজি বলতে মোটামুটি যা বোঝায় তার প্রায় সবটাই পাওয়া যায় এই মোকামে।

দাম পড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে মহাস্থানহাটে আসা বেশ কয়েকজন কৃষক ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। তাদের কথায় ওঠে আসে পাইকারি এই মোকামে সবজির দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কয়েকটি কারণ।   

কৃষক আফছার আলী বাংলানিউজকে জানান, সবজি চাষের জন্য প্রয়োজন অনুকূল আবহাওয়া। এবার সেটি শুরু থেকে শেষ অবধি বজায় ছিলো। এ কারণে সবজির আবাদ ভাল হয়েছে। আশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। এতে করে স্থানীয় বাজারে চাহিদার চেয়ে বেশি সবজির আমদানি ঘটছে। ফলে প্রতিনিয়ত সবজির দাম কমে আসছে। হাটে চলছে ফুলকপি বিক্রি, ছবি: আরিফ জাহানহজরত আলী নামে আরেক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, উত্তরাঞ্চলের মধ্যে মহাস্থানহাট সবজির অন্যতম মোকাম। আর কৃষির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা অবশ্যই এটি স্বীকার করে থাকেন। তবু তো এই মোকামের একটা ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এবার সব ধরনের সবজির বাম্পার ফলনের কারণে প্রতিদিন এই মোকামে স্থানীয় থেকে শুরু করে বেশি দামের আশায় দূর-দূরান্ত থেকে কৃষকরা সবজি নিয়ে আসছেন।

তিনি আরও জানান, চাহিদার চেয়ে সবজির বেশি আমদানি দেখে ব্যাপারিরা সুযোগ নিচ্ছেন। ইচ্ছেমতো কম দাম হাঁকিয়ে সবজি ক্রয় করছেন যোগ করেন কৃষক হজরত আলী।

এতে করে তারা চরম লোকসানের মুখে পড়ছেন বলেও জানান এসব কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি শীত মৌসুমজুড়ে জেলায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে রকমারি সবজি চাষ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু সবজির বাম্পার ফলন হওয়ায় মৌসুম শেষ হওয়া অবধি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।   

পাইকারি সবজি ক্রেতা মোস্তাফিজার বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন ব্যাপক পরিমান ফুলকপি ও বাঁধাকপির আমদানি ঘটছে। এবার আবহাওয়া ভাল থাকায় এসব সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। সবমিলে একসঙ্গে এতো ফুল ও বাঁধাকপি বাজারে আসায় কৃষকরা ফসলের দাম পাচ্ছেন না।

আমিনুল ইসলাম নামে আরেক সবজি ক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, সবজি উঠানোর উপযুক্ত সময় হলে জমিতে ধরে রাখা সম্ভব না। আবার ঘরেও মজুদ করে রাখা যায় না। কারণ সবজি পচে যায়। তাই সবজি বিক্রি করা ছাড়া কৃষকের কোনো উপায় থাকে না। এটিও কম দামের অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করেন এই ক্রেতা।

ব্যাপারী বাদশাহ মিয়া ও রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, তারা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে সবজি কিনলেও অতিরিক্ত খাজনা, পরিবহনখাতে অধিক ব্যয় ছাড়াও তাদের লাভের বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়। এসব কারণে খুচরা বাজারে দুই থেকে তিনগুণ বেশি দামে সবজি বিক্রি করতে হয়।

হাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, ফুল ও বাঁধাকপি ছাড়াও এই মোকামে গাজর, টমেটো, বরবটি, আলু, মূলা, কাঁচা মরিচ, পেয়াজ, লাউ, বেগুন, বিভিন্ন জাতের শাকসহ বিভিন্ন ধরনের টাটকা সবজি পাওয়া যায়। এসব সবজি কিনতে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহর থেকে ব্যাপারি এই মোকামে আসেন।

এই হাট থেকে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ছোট-বড় মিলে গড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা সবজি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায় বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৯
এমবিএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad