ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

যমুনায় লুটোপুটি খাচ্ছে কৃষকের সোনালি আঁশের স্বপ্ন!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৯
যমুনায় লুটোপুটি খাচ্ছে কৃষকের সোনালি আঁশের স্বপ্ন! যমুনার পানিতে তালিয়ে গেছে পাটগাছ, ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম পুকুরিয়া। যমুনা বেষ্টিত এই গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেম। পেশায় তিনি একজন শ্রমজীবী মানুষ। গেলো বছর যমুনার তীর এলাকায় প্রায় ২০ শতাংশ জমিতে পাট লাগিয়েছিলেন তিনি। ঘরে তোলার পর সেই পাট ভালো দামে বিক্রি করেছিলেন আবুল কাশেম।

এবারও সেই আশায় একটু বাড়তি লাভ পেতে চরের ৪০ শতাংশ জমিতে পাট লাগান তিনি। পাট বেশ ভালোও হয়েছিলো।

কিন্তু জমির পাট গাছগুলো এখনো পরিপক্ব হয়নি। এরই মধ্যে যমুনায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। বাড়তি সেই পানিতে ডুবে গেছে অপরিপক্ব পাট গাছগুলো। এতে জমির সব পাট নষ্ট হয়ে যাবে।

যমুনাপাড়ের বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্ত আবুল কাশেম বুকভরা হতাশা নিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, আশা ছিলো জমির পাট বিক্রি করবো। হাতে বেশ কিছু টাকা আসবে। পাট বিক্রির টাকায় বানাবো একটি নৌকা। নৌকায় করে যমুনায় মালপত্রসহ মানুষ পারাপার করবো। এভাবে সোনালি আঁশে উপার্জনের স্বপ্ন বুনছিলেন আবুল কাশেম। কিন্তু যমুনায় পাট তলিয়ে যাওয়ায় তার সেই স্বপ্নের গুড়েবালি।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যমুনা বেষ্টিত উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়নের রাধানগর, কৈয়াগাড়ি, নিউ সারিয়াকান্দি, পুকুরিয়া, বানিয়াজান, শিমুলবাড়ি ও শহড়াবাড়ির গ্রামের তীরবর্তী এলাকায় ইতোমধ্যেই যমুনার পানি প্রবেশ করেছে। গত কয়েকদিন ধরে যমুনার পানি বেড়েই চলছে। ফলে তীরবর্তী এলাকায় লাগানো প্রায় ৩০ হেক্টর জমির পাট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

স্থানীরা জানাচ্ছে, যমুনার তীরবর্তী এলাকার জমিতে লাগানো পাট বেশ ভালো হয়েছে। পাড়ের মানুষগুলোকে হিংস্র যমুনার সঙ্গে লড়াই করে বিভিন্নভাবে জীবিকা নির্বাহ করে। এরই ধারাবাহিকতায় পাড়ের একাধিক ব্যক্তি যমুনার তীরে জেগে ওঠা জমিতে সোনালি আঁশখ্যাত পাট লাগিয়েছেন। সোনালি আঁশে বেঁচে থাকার স্বপ্নও দেখেছেন। কিন্তু বিধি বাম! যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় অনেক জমির পাট পানিতে তলিয়ে গেছে। যমুনায় লুটোপুটি খাচ্ছে কৃষকের সোনালি আঁশের স্বপ্ন!

কৃষক আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, শুরু থেকেই এবার আবহাওয়া অনেকটা অনুকূলে ছিলো। এ কারণে সঠিক সময়ে জমিতে পাট বীজ বাপন করতে পেরেছিলেন তার মতো যমুনাপাড়ের কৃষকরা। ফসলও বেশ ভালো হয়েছিলো। বাড়তি আয়ের আশায় বুক বেঁধেছিলেন তারা। কিন্তু হিংস্র যমুনায় পাট তলিয়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যেই অনেক সেই কৃষকের স্বপ্ন বিবর্ণ হয়ে গেছে।

জমির উদ্দিন নামে আরেক কৃষক বাংলানিউজকে বলেন, যমুনার তীরবর্তী জমির মাটি অত্যন্ত উর্বর। এছাড়া অন্য ফসলের চেয়ে পাট চাষে তুলনামূলক ব্যয় বেশ কম হয়। সে অনুযায়ী লাভও ভালো হয়। এসব বিবেচনায় কৃষকরা এবার যমুনার তীরবর্তী জমিগুলোতে পাটের আবাদ বেশ খানিকটা বাড়ান। কিন্তু হঠাৎ যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ায় তার মতো অনেক কৃষকের সর্বনাশ হলো। কারণ ইতোমধ্যেই অনেক কৃষকের অপরিপক্ব পাট গাছগুলো যমুনার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

ধুনট উপজেলা কৃষি অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস ছোবহান বাংলানিউজকে বলেন, চলতি মৌসুমে যমুনাপাড়ের কৃষকরা নদীর তীরবর্তী প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছেন। ধানের লোকসান কাটিয়ে উঠতে এসব কৃষকরা পাট চাষ করেন। কারণ পাটের দাম তুলনামূলক বেশি। এছাড়া পাটের লাকড়ি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় অনেক জমির পাট গাছ ইতোমধ্যেই তলিয়ে গেছে।  

এতে করে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন যোগ করেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস ছোবহান।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৯
এমবিএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।