ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

বেড়েছে গো-খাদ্যের দাম!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯
বেড়েছে গো-খাদ্যের দাম! খড়। ছবি: বাংলানিউজ

মাদারীপুর: গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত খড়ের দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিপাকে পড়েছেন জেলার খামারি ও সাধারণ কৃষকেরা। একটি গরুর পেছনে ব্যয় করে কোরবানির সময় পাওয়া যাচ্ছে না তেমন দামও। হিসেব-নিকেষ করে তেমন লাভের মুখ না দেখলেও এককালীন কিছু টাকা পাওয়া যায় তাতেই সাধারণ কৃষকের সান্তনা! গরুর খাদ্যের মধ্যে অন্যতম খড়-কুটার দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে এমনটাই জানালেন মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার গরুর খামারিরা।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিভিন্ন খামার ঘুরে দেখা গেছে, আগামী বছরের কোরবানির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন খামারিরা। মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী, পাঁচ্চর, দত্তপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় গরুর খামার।

কারো রয়েছে দুগ্ধজাত খামার আবার কেউ শুধুমাত্র ঈদ ও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পালন শুরু করেছেন গরু। এসব খামারে সংকট রয়েছে গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত খড়-কুটা।

খামারিরা জানান, খড়ের দাম এ বছর গত বারের তুলনায় দ্বিগুণ। বিঘা প্রতি পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে খড়। যে খড়ের দাম গত বছর ছিলো বিঘা প্রতি সর্বোচ্চ আড়াই হাজার টাকা। এ বছর দ্বিগুণ মূল্য দিয়ে কিনতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে খামারিদের। ধানের জমিতে থাকা অবস্থায় অনেক জমির মালিককে আগাম টাকা দিয়ে রেখেছেন খামারিরা।

এদিকে খামারিদের কারণে সাধারণ গরু লালন-পালনকারীরা পড়েছেন আরও বিপাকে। স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত খড়।

জানা গেছে, কুড়া-ভুসির পাশাপাশি ধানের খড় গরুর জন্য উৎকৃষ্ট খাদ্য। কুড়া-ভুসির সঙ্গে খড় কেটে ভিজিয়ে গরুকে খাওয়ানো হয়। গরুর সঠিক বৃদ্ধির জন্য এই খাদ্যের বিকল্প নেই। তাই খামার অথবা ব্যক্তিগত গরু পালনকারীদের সারা বছরের জন্য খড়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছেই। এখন এক বছরের জন্য খড় কিনে রাখছেন খামারিরা। খড় ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াতে অনেকটা সংকট রয়েছে বলেও স্থানীয়রা জানান।

গরুর জন্য খড় কিনতে অনেকটাই প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে খামারিসহ সাধারণের। নিজ এলাকার বাইরে থেকেও খড় কিনে আনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গরুর খামারিরা। ফলে পরিবহন খরচও যুক্ত হচ্ছে তাতে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জেলার শিবচরে গত কয়েক বছর ধরে গরুর খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে যুবকদের একটা অংশ খামার প্রকল্পের দিকে ঝুঁকছেন। কেউ গরুর মোটাতাজাকরণ আবার কেউ দুগ্ধজাত গরুর খামার করছেন। এছাড়া এই এলাকায় ধান চাষ আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তাছাড়া ফলন ভালো না হওয়ায় খড়ের সংকট দেখা দেয়। মূলত খড় ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে, সে তুলনায় বাড়েনি খড়ের পরিমান। আর এতে করেই দাম বাড়ছে হু-হু করে।

গরু পালন করেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, একটি গরুর সারা বছরের শুকনা খাবারের জন্য খড়ের বিকল্প নেই। তিনবেলা নিয়ম করে অন্যান্য খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি খড় দিতে হয়। কুড়া-ভুসি, চাল ফুটানো মিলিয়ে খাওয়ার সঙ্গে খড় কেটে পানির সঙ্গে ভিজিয়ে খাওয়ানো হয়। এছাড়াও তিনবেলা খাওয়ার বাইরে খড় ও কাঁচা ঘাস দিতে হয়। ঘাসের তুলনায় খামারে খড়ের প্রয়োজনীয়তাই বেশি। আর এ কারণেই প্রত্যেক খামার বা সাধারণ গেরস্থদের কমপক্ষে এক বছরের জন্য খড় কিনে রাখতে হয়। এ মৌসুমে কিনে আগামী কোরবানি পর্যন্ত খড়-খাদ্যের যোগান দিতে হয় খামারে। খড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারিদের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন সাধারণেরাও। অনেকে আবার সংকটের কারণে ফরিদপুরসহ অন্যান্য জেলা থেকেও খড় কিনে এনেছেন বলেও তারা জানান।

মো. আলম নামে এক খামারি জানান, তার খামারে ১৫টি গরু আছে। সবই মোটাতাজাকরণের জন্য। আগামী কোরবানিতে বিক্রি করার জন্য লালন-পালন করছেন। নিজ এলাকায় খড়ের দাম বেশি হওয়ায় ফরিদপুরের নগরকান্দা এলাকা থেকে খড় কিনে এনেছেন তিনি।

দত্তপাড়া এলাকার হাওলাদার এগ্রো ফার্ম’র মালিক ফররুখ আহমেদ বলেন, এ বছর সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বিঘা খড়ের। যা গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ। দাম বেশি হওয়ার পরও সংকট রয়েছে খড়ের। খড়ের দাম বাড়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি। গত কয়েক বছরে শিবচর উপজেলায় গরুর খামার বেড়েছে। নতুন খামার তৈরিতে ঝুঁকছেন যুবকেরা। দুগ্ধজাত গরুর ও মোটাতাজাকরণ উভয়ই থাকছে খামারে। দিন দিন খড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে খামারদের যেমন কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে সেসঙ্গে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ কৃষকেরা। যারা বাড়িতে দুই/তিনটি করে গরু পালন করেন কোরবানিতে বিক্রির আশায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।