ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

করোনা: শখের হলুদ তরমুজে দিশেহারা চাষি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৮ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২০
করোনা: শখের হলুদ তরমুজে দিশেহারা চাষি

মৌলভীবাজার: লাল তরমুজের সঙ্গে আমরা সবাই সুপরিচিত। হলুদ তরমুজের সঙ্গে তা খুবই কম। রাজশাহীসহ দেশের কিছু কিছু এলাকায় হলুদ তরমুজ চাষ হচ্ছে ইদানীং। একটু আলাদা হওয়ায় শখ করে চাষের সাহস করেছিলেন এক শিক্ষিত কৃষক। দিনশেষে তার ফলাফল দাঁড়ায় ‘খরচটুকুও উঠে আসেনি’। 

থাইল্যান্ডের হাইব্রিড জাতের ফল ‘হলুদ তরমুজ’। খেতেও সুস্বাদু বেশ।

কিন্তু ক্ষতির ধাক্কায় সেই স্বাদটিও কৃষকের কাছে প্রতীকী অর্থে বিস্বাদময়! 

শিক্ষাজীবন শেষ করে শখের বশে কৃষিতে নামা এ তরমুজ চাষির নাম আলাউদ্দিন মুহম্মাদ তৌফিক। শ্রীমঙ্গলের ইসবপুর গ্রামে তার বাগান। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, করোনার সিচুয়েশন এবং বৃষ্টির জন্য আমার এবার ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টিতে আমরা প্রচুর ফসল নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও করোনার কারণে মার্কেটও ভালো পাইনি।  

ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তৌফিক বলেন, আট বিঘা জমিতে প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সাত হাজার তরমুজের চারা লাগিয়েছিলাম। এর থেকে চার লাখ টাকা লস গুনতে হয়েছে। আমি হলুদ তরমুজের পাশাপাশি সাম্মাম ফলও চাষ করেছিলাম। কিন্তু যথামসয়ে বিক্রি করতে না পারায় ন্যায্যমূল্য একেবারেই পাইনি।  

এবারই আমি শ্রীমঙ্গলের বাজারে প্রথম হলুদ তরমুজ এনেছিলাম। কিন্তু আমার কপাল খারাপ! প্রথম প্রথম তো খুবই সাড়া পেয়েছিলাম। ঢাকাকেন্দ্রিক বিজনেস করি। প্রথমে অনেকের অনাগ্রহ ছিল; কিন্তু হলুদ তরমুজটি খাওয়ার পর তাদের আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু করোনা আর ছাড় দিল না।  
থাইল্যান্ডের ভ্যারাইটি হলুদ তরমুজ।  ছবি: বাংলানিউজ  
এর ভ্যারাইটি সম্পর্কে তৌফিক বলেন, এই হলুদ তরমুজগুলো থাইল্যান্ডের একটা ভ্যারাইটি। আমার জাতটাই ভালো। এর সাইজটাও বড় হয়। এটার নাম ‘কানিয়া’ ভ্যারাইটি। আমি নিজে গ্রাফটিং করে চারা বানিয়েছি। কৃষির উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছি আমি। চারা লাগানো থেকে তরমুজ ধরতে প্রায় ৭৫ দিন লাগে। আমার এ হলুদ তরমুজ কিন্তু প্রতি পিস মানে আস্তো বিক্রি হয় না। এটি কেজি প্রতি ২০ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। মানে একটা তরমুজ ওজন দিলে যত কেজি হয় সেই দামে নিতে হবে। আমারগুলো ৩/৪ কেজির উপর হয় না।  

আক্ষেপের সঙ্গে এ তরমুজ চাষি আরো বলেন, লোকাল মার্কেটে এর চাহিদা তেমন পাইনি। ক্রেতারা এই ফলে হাতই দেয় না। কিন্তু স্বাদের দিক থেকে অত্যন্ত মজার একটি ফল। অন্য তরমুজের চেয়ে এই হলুদ তরমুজ বেশি মজা। এবার তরমুজ কিন্তু মানুষ ৩০০/ ৪০০ টাকা দিয়ে কিনে খেয়েছে খুচরা বাজার থেকে। এখন বাজার বিশ্লেষণ করতে গেলে দেখা যায়, প্রথম লকডাউনের সময় স্থানীয় ব্যাপারীরা কিন্তু এবার কৃষক থেকে ফসল আনেননি। লোকাল তরমুজ যেহেতু মাঠ থেকে আনতে পারেনি সেহেতু ফলের বাজারে তরমুজের ক্রাইসিসটা দেখা দিয়েছিল।   

‘দেশি তরমুজের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমার থাইল্যান্ড ভ্যারাইটির তরমুজ টিকতে পারেনি। ৫ থেকে ৭ কেজির আস্ত দেশি তরমুজ বিক্রি হয়েছে ১০০ বা ১৫০ টাকায়। অথচ আমার দারুণ সুস্বাদ তরমুজ স্থানীয় মার্কেটে চলেনি। তারপরও আগামী বছরও আমি এই হলুদ তরমুজ চাষ করবো। ’
মাঠে হলুদ তরমুজ হাতে তৌফিক।  ছবি: বাংলানিউজ  
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রথীন্দ্র দেব বাংলানিউজকে বলেন, মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে এই প্রথম শ্রীমঙ্গলের চাষ হয়েছিল হলুদ তরমুজ। এটি দেখে সবাই অবাক হয়ে গেছেন। এটি খেতে লাল তরমুজের চেয়েও সুস্বাদু। যদিও কৃষক তৌফিকের লাভ হয়নি এই ফসলে।  

তৌফিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ-এমবিএ করা একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষ। তাকে কৃষিকাজে দেখে এলাকার শিক্ষিত বেকার তরুণরাও দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন বলে জানান উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রথীন্দ্র।  

বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২০
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।