ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতার আশ্বাস

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২০
কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতার আশ্বাস রীভা গাঙ্গুলি দাশ ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক

ঢাকা: কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বাংলাদেশ-ভারত একসঙ্গে কাজ করবে এবং ভবিষ্যতে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের বিদায়ী হাই কমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ।

রোববার (২৩ আগস্ট) সচিবালয়ে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রীভা গাঙ্গুলি কৃষিপণ্য যান্ত্রিকীকরণ ও প্রসেসিংয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

কৃষির ক্ষেত্রে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর জোর দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভারতেরও গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা শিল্পায়নের দিকে যাচ্ছি। কিন্তু শিল্পায়ন করতে হলে স্থানীয় বাজারকে বড় করতে হবে। সেটা নির্ভর করবে গ্রামীণ অর্থনীতি কীভাবে আরও বড় হয়, আরও চাঙ্গা হয়।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি ভারতের সঙ্গে আমাদের কৃষি ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার অনেক সুযোগ আছে। আগে বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতির দেশ ছিল, দুর্ভিক্ষের দেশ ছিল। সারা পৃথিবী থেকে আমরা খাদ্য সংগ্রহ করতাম, কখনও আমাদের সাহায্য হিসেবে নিতে হতো, কখনও আমদানি করতে হতো। এখন আমাদের সেভাবে বিদেশের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা স্বাবলম্বী হয়েছি।

‘আমরা এখন চাচ্ছি বাংলাদেশের কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ করা, আধুনিকীকরণ করা। এক্ষেত্রে ভারত প্রযুক্তির দিক থেকে আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে, আমরা তাদের সহযোগিতা নিতে পারি। আমরাও তাদের অনেক প্রযুক্তি দিয়ে সহযোগিতা দিতে পারি। আমরা আলোচনা করলাম কৃষি ক্ষেত্রে আরও কীভাবে সহযোগিতা বাড়াতে পারি। ’

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভারতে যেসব কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায় সেগুলো বাংলাদেশে সহজে আনা যায়। ফলমূল, শাক-সবজি; এগুলো প্রক্রিয়াজাতকরণ, আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করা নিয়ে আলোচনা করেছি। তিনিও (রীভা গাঙ্গুলি) আমাদের বলেছেন, তার অবস্থান থেকে আমাদের সহযোগিতা করবেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, গত দেড় বছরে তার (রীভা গাঙ্গুলি) দায়িত্ব পালনকালে আমাদের সম্পর্ক আরও উন্নত হয়েছে অতীতের চেয়ে। ক্রমান্বয়ে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে। শুধু কৃষি নয়, অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা করার অনেক সুযোগ রয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এসেছিলেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ভারতের ওষুধ কোম্পানিগুলো খুবই বড়। আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের শেয়ার অনেক বড়। ওষুধের ক্ষেত্রে শুধু কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন না, অন্যান্য ব্যাপারেও আমাদের সহযোগিতা করার সুযোগ রয়েছে।

‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমাদের এ সম্পর্ক অটুট থাকবে এবং ভবিষ্যতে অর্থনীতি, সামাজিক, সাংষ্কৃতিক সব ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা আরও অনেক বেশি বাড়বে। ’

কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ভারতের সহযোগিতা পেতে পারি কিনা- প্রশ্নে কৃষিমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই। কৃষি যান্ত্রিকীকরণে যেমন ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, কম্বাইন হারভেস্টার, ট্রান্সপ্লান্টার ভারত নিজেরা তৈরি করে। এগুলোর যন্ত্রাংশ আমাদের এখানে তৈরি করতে পারি। আস্তে আস্তে বগুড়া এবং বিভিন্ন জায়গায় লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং..., এটি নিয়ে তিনি (রীভা গাঙ্গুলি) বলেছেন যে, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়েও আমরা আমাদের সহযোগিতা বাড়াতে পারি এবং ভারত এখানে বিনিয়োগও করতে পারে।

‘ভারতের যারা অ্যাগ্রো প্রসেসিং, অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, অ্যাগ্রো মেশিনারিজের সঙ্গে আছে তাদের একটা সম্মেলন দিল্লীতে অথবা ঢাকাতে করে, কী কী ইনটেনসিভ দিচ্ছি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য, সেগুলো তাদের দেখানো দরকার। এ প্রস্তাবও আমি করেছি। এটা আমরা দেখবো। ’

ভারত ও বাংলাদেশের কো-অপারেশনে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর উল্লেখ করে বিদায়ী হাই কমিশনার রীভা গাঙ্গুলি বলেন, আমরা কোভিডের মধ্যে দেখেছি বোরো খুব ভাল হয়েছে। বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরাও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং উদ্বৃত্ত। যারা কোভিডে খুব অ্যাফেকটেড হয়েছে তাদের যাতে খাদ্যাহারে কোনো কষ্ট না হয় সেদিকে বাংলাদেশের প্রচুর অর্জন। বাংলাদেশে কীভাবে এ সফলতা এসেছে সেই বিষয়ে কথা হয়েছে।

রীভা গাঙ্গুলি বলেন, কতো ইনোভেটিভ জিনিস করা হয়েছে কৃষি খাতে, যাতে বাংলাদেশ এ জায়গায় পৌঁছেছে যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে। কৃষি খাত এমন একটি এরিয়া আমাদের মনে হয় যেখানে প্রচুর কো-অপারেশন হতে পারে। কারণ আমাদের একটা লোকেশনের সুবিধা আছে। অনেক কানেকটিভিটি প্রজেক্ট হচ্ছে দু’দেশের মধ্যে। অ্যাগ্রো প্রসেসিং, ডেইরি; এগুলো সহযোগিতার খুব গুরুত্বপূর্ণ খাত।

‘লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মধ্যে অ্যাগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ারিং এগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি ভবিষ্যৎ সহযোগিতার খাত হিসেবে। ’ 

বিদায়ী হাই কমিশনার বলেন, আগামী বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ বছর। কারণ মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর। আর আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেরও ৫০ বছর। আর এ বছর মুজিববর্ষ। বিভিন্নভাবে আমরা কীভাবে সহযোগিতা করতে পারি, আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এটা একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২০
এমআইএইচ/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।