দিনটা মেঘাচ্ছন্ন, আর্দ্র, কিছুটা ধূসর বিষণ্ণতায় ভরা। সন্ধ্যে নামার তখনও কিছুটা বাকি।
রিচারড নিউম্যান এসে স্বভাবসুলভ হাসি-ঠাট্টায় সবাইকে চাঙ্গা করে তুলছেন। কফিশপের দোকানি কয়েকজন তরুণ-তরুণী বেশ হাসিতে উজ্জ্বল! ঠিক কাঁটায় কাঁটায় সাতটায় রিচারড মাইকে গিয়ে দাঁড়ালেন! হাতের কাগজটার দিকে এক পলক চেয়ে বলতে থাকলেন এই দিনের অনুষ্ঠান-সূচি ও ‘ফিচার পোয়েট’সহ সকল কবির নাম। আমন্ত্রণ ও শুভেচ্ছা জানালেন। এরপর ‘ফার্স্ট-টুইসডে’-এর প্রতিমাসের কবিতাপাঠ এবং অন্যান্য নিয়মকানুনগুলো সংক্ষেপে জানালেন। এ মাসের ফিচার পোয়েট বাংলাদেশের সন্তান আমেরিকান কবি শামস আল মমীন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কয়েকজন কবি তাঁদের লেখা কবিতা পাঠ করলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন রিচারড নিউম্যান নিজে, পিটার ম্যারা, প্যাট ডাফি, হারব রুবেনস্টেইন, এনড্র ডিক, লিজ গ্রে, ডেভিড সিলার ও সেমন্তী ওয়াহেদ। প্রত্যেক কবি একটি করে কবিতা পড়লেন। একেকজন কবির পড়া শেষ হলে রিচারড সেই কবিতাটির প্রথম পঙ্ক্তি একের পর এক সংযোজিত করে তৈরি করলেন নতুন একটি কবিতা। যেন প্রতিটি ফুল থেকে একেকটি পাপড়ি নিয়ে গড়া হলো নতুন একটি ফুল! একেবারে ভিন্ন পদ্ধতিতে রচিত হলো নতুন কবিতাটি।
এরপর রিচারড মাইকে দাঁড়িয়ে আমন্ত্রণ করলেন এ মাসের ফিচার পোয়েট শামস আল মমীনকে। তিনি মাইকে এসে দুয়েকটি সামান্য কথা বলে শুরু করলেন কাব্যপাঠ। মমীন দ্বিভাষিক কবি। তবে এই অনুষ্ঠানে তিনি শুধু ইংরেজি ভাষায় লেখা তাঁর কয়েকটি কবিতাই পাঠ করলেন। কবিতাগুলোর শিরোনাম ছিল—কুইনস, উই মাস্ট টক, কিন্ডারগার্টেন কিডড, লি চেন, পেড্রোইস ডেড, বুশইউক ব্রুকলিন অর জেন্ট্রিফিকেশন, নো ওয়ান নোটিশড মি এবং শেষ কবিতাটি ছিল অ্যান আমেরিকান স্টোরি। একের পর এক গাঢ় মোহ্যমান কণ্ঠে মমীন পাঠ করলেন তাঁর কবিতা ক’টি। তাঁর ইংরেজি উচ্চারণ ছিল পরিচ্ছন্ন, মাদকতাময়, বাঙালি-একসেন্ট বিবর্জিত, কিছুটা ইয়াঙ্কি-দোলায় দোলায়িত! প্রতিটি কবিতা পাঠের পর বিপুল করতালি এবং আনন্দহিল্লোলে আলো-আঁধারিতে জড়ানো ‘এস্প্রেসো ৭৭’ যেন ‘সোয়ান-লেক’-এর মতো হাওয়ায় ছিল উড্ডীন! বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে মমীন তাঁর অন্যান্য একক কাব্যপাঠের সন্ধ্যার মতোই শ্রোতাদের মুগ্ধ শুধু নয়, বিস্ময়াভিভূতও করে রেখেছেন!
কাব্যপাঠ শেষ হলে শ্রোতারা বিভিন্ন প্রশ্ন করলেন এবারের ফিচার পোয়েটকে। তিনি কবিতা লেখার সময় কল্পনা করেন বাংলায় নাকি ইংরেজিতে, রাইটার্স-ব্লক হলে কীভাবে কাটান সেটা, কবিতা লেখা কেমন আনন্দ বা বেদনার সৃষ্টি করে মনে ইত্যাদি। মমীন একে একে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দেন।
‘ফার্স্ট-টুয়েসডে’র নিয়ম অনুযায়ী টুপি রাখা হলো টেবিলে, শ্রোতারা দক্ষিণা দিয়ে কবিকে সম্মানিত করলেন যার যার সাধ্য অনুযায়ী। দূরে এক কোণে বসে মনোযোগ দিয়ে কাব্যপাঠ শুনছিলেন মল্লিকা নামে এক তরুণী। চেহারায় কিছুটা ক্যারিবিয়ান বা দক্ষিণ ভারতীয়দের মতো, কিন্তু তিনি কলকাতার মেয়ে। কবির সঙ্গে করমর্দন করে তাঁকে ধন্যবাদ জানালেন, বললেন ভীষণ পছন্দ হয়েছে তাঁর কবিতাগুলো। এই তো বড় পুরস্কার!
শামস আল মমীন বাংলা ভাষার একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি। কিন্তু তিনি বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায়ও কবিতা লেখেন। বাংলা ভাষায় লেখা ঢাকা ও কলকাতায় প্রকাশিত এ পর্যন্ত তাঁর কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা সাতটি। কিন্তু শিগগিরই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে তাঁর প্রথম ইংরেজি ভাষায় লেখা কবিতার বই। ‘এস্প্রেসো ৭৭’-এর কাব্যসন্ধ্যাটি অনেকদিন মনে রাখার মতো!
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৩
এমজেএফ