ঢাকা: ‘বিকেল বেলা ভিড় জমেছে, ভাঙল সকাল বেলা’- লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ছুটির দিনের সকালে অমর একুশে বইমেলা শুরু হয়ে প্রতিদিনের মতো রাত নয়টায় শেষ হলেও মুখ ভার ছিল অনেকের।
বলা হয়, স্মৃতি মানুষের প্রাণের আলাপ। সেই আলাপ জমে ওঠে আড্ডায়। শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) তেমনই একটা দিন ছিল অমর একুশে বইমেলার। সকাল থেকে শত শত মানুষ মেলায় এসেছেন, তাদের সঙ্গে এসেছে অসংখ্য গল্প। সেইসব গল্পের বিনিময়ে জমে উঠে আড্ডা। আর বিশেষ আয়োজন ‘শিশুপ্রহর’ থাকায় অভিভাবকদের হাত ধরে শিশুদের উপস্থিতি ছিল বেশি।
দিন যেতে যেতে গুছিয়ে উঠছে মেলার আয়োজন। মুঠোফোনের আসক্তি কমিয়ে বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়তে ব্যস্ত এখন অনেকেই। বইয়ের দোকানগুলোতে ভারী চশমার ভেতর দিয়ে পাতা উল্টে যাচ্ছেন বই প্রেমিকরা। তাদের মন্তব্য, সময় যেভাবেই বদলে যাক, মেলা মানেই আনন্দ আর স্মৃতির মুখোমুখি হওয়া!
মেলার দ্বার খোলার পর বাবা-মা, ভাই-বোন ও অভিভাবকদের সঙ্গে মেলায় আসতে থাকে শিশু-কিশোররা। বেলা সাড়ে এগারোটায় শুরু হয় সিসিমপুরের পরিবেশনা ও ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা। এসময় সিসিমপুরের গান ও ছবি আঁকার সঙ্গে সঙ্গে মেতে উঠে শিশুরা। ছিল বড়দের আগমনও।
বইপ্রেমীদের আনাগোনা আর ঘোরাফেরায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। কেউ বই কিনছেন, কেউ হাতে নিয়ে দেখছেন আবার কেউবা প্রিয় লেখকের বই কবে আসবে এ খোঁজ নিচ্ছেন। বরাবরের মতো অনন্যা, কাকলী, তাম্রলিপি, প্রথমা, পাঞ্জেরি প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নগুলো ছিল ক্রেতাদের প্রধান আকর্ষণ। পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কালী মন্দিরের পাশে শিশু চত্বরেও দেখা যায় শিশুদের ভিড়।
বিভিন্ন প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীরা জানান, ছুটির দিন বিবেচনায় দর্শনার্থী ও পাঠকের চাহিদা মেটাতে প্যাভিলিয়ন ও স্টলে যথেষ্ট বই মজুদ রাখাসহ সব প্রস্তুতি রয়েছে। তবে দুপুর পর্যন্ত মেলায় আসা দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। বিকেল থেকে মানুষের উপস্থিতি বাড়ে।
প্রকাশকদের মুখেও সে একই কথা। নালন্দা প্রকাশনীর রেদওয়ানুর রহমান জুয়েল বলেন, স্মরণকালের সেরা মেলা হবে এবার। মেলার শুরু থেকেই মানুষের এত স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আগে দেখিনি। মানুষ নির্দ্বিধায় মেলায় আসছে। সব মিলিয়ে খুব ভালো মেলা হচ্ছে।
বিকেলে মেলায় এসেছিলেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। প্রথমার স্টলে তিনি তার বইগুলোতে অটোগ্রাফ দিয়ে পাঠকের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন। তিনি এবারের বইমেলা ও সার্বিক বিষয়ে বলেন, পাঠক তো বই পড়া থামিয়ে রাখেনি। অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের অস্থিমজ্জায় রয়েছে। করোনার পর এবার মানুষ বইমেলায় দ্বিগুণভাবে আসবেন। এবারের বইমেলা স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ বইমেলা হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩
এইচএমএস/এসএ