গাইবান্ধা: প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে উত্তরাঞ্চলের লিটলম্যাগ আন্দোলনের পুরোধা কবি সরোজ (৭৪) মারা গেছেন।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে গাইবান্ধা শহরের পূর্বপাড়ায় নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি।
বিকেল সাড়ে ৫টায় কবির মরদেহ পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয়।
পরে সন্ধ্যা ৭টায় গাইবান্ধা পৌর মহাশ্মশানে কবির শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
কবির স্বজনরা জানান, প্রায় এক বছর আগে সরোজ দেবের ক্যানসার ধরা পড়ে। কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসার পর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ক্যানসার বিশেষজ্ঞ জাহান আফরোজা লাকীর তত্ত্বাবধানে নিজ বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। তবে কয়েকদিন থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। একপর্যায়ে সোমবার দুপুরে তিনি মারা যান।
বিকেল সাড়ে ৫টায় কবি সরোজ দেবের মরদেহ পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয়।
এসময় বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ, জেলা শাখা, অভিনন্দন আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র, গাইবান্ধা থিয়েটারসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তি তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
সরোজ দেব ১৯৪৮ সালের ২৬ মার্চ গাইবান্ধা শহরের পূর্বপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা প্রখ্যাত ধ্রুপদী সঙ্গীত শিল্পী ওস্তাদ উপেন্দ্র নাথ দেব ও মা সান' দেব।
স্কুল জীবনেই সরোজ দেবের কাব্যিক প্রতিভার উন্মেষ ঘটে। পরে কবিতা লেখার পাশাপাশি তিনি গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলে লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। শুরু করেন 'শব্দ' সম্পাদনা। কলেজ জীবন থেকেই 'শব্দ' সম্পাদক হিসেবে নাম অর্জন করেন তিনি। একটানা ৫৬ বছর 'শব্দ' প্রকাশিত হয়েছে।
এছাড়াও স্বজন শব্দাবলী, প্রাণেশ্বরীর মাচান, বজ্রে বাজে বেণু, লাল গোলাপের জন্য, শতদল, মোহনা, সংশপ্তক, শতাব্দী, নান্দনিক ইত্যাদি বিভিন্ন নামে দেড় শতাধিক সাহিত্য পত্রিকা বা লিটলম্যাগ বিভিন্ন সময়ে সম্পাদনা করেছেন। ষাট দশক থেকে তার পদচারণায় মুখরিত ছিল গাইবান্ধার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন।
গাইবান্ধার সাংস্কৃতিক সংগঠন 'সূর্যকণা' তার হাতেই গড়া। সরোজ দেব ১৯৬৯ সালে গাইবান্ধা কলেজ ছাত্র সংসদের ম্যাগাজিন সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও গড়েছেন একাধিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
সরোজ দেব স্কুল জীবন থেকে কবিতা লেখা শুরু করলেও তার কবিতার বই বেরিয়েছে অনেক পরে। তার রচিত কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে, ধবল মেঘের দিনগুলো (২০০৬), অনন্ত রোদ্দুরে এসো (২০০৯), স্বরচিত সুখের সৎকার (২০১০), স্বপ্ন শুয়েছিল কুয়াশায় (২০১১) ও সময় আমাকে হত্যার কথা বলে গ্যাছে (২০১৩)। তার লেখার তুলনায় বইয়ের সংখ্যা অনেক কম।
এছাড়া তিনি অনেকগুলো গ্রন্থও সম্পাদনা করেছেন। সেগুলো হলো, রবীন্দ্রনাথের ভালোবাসার গল্প (২০০৬), শরৎচন্দ্রের ভালোবাসার গল্প (২০০৬), কবিতার যৌথ খামার (২০০৯), নির্বাচিত কবিতা (২০১২) ও ছোটদের শরৎচন্দ্র (২০১২)।
বাংলাদেশ সময়: ২০১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫
আরএ