ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

ধারাবাহিক উপন্যাস : পিতৃগণ, প্রথম পর্ব, অধ্যায় ১৫-১৭

জাকির তালুকদার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১০
ধারাবাহিক উপন্যাস : পিতৃগণ, প্রথম পর্ব, অধ্যায় ১৫-১৭

১৫. মদন-কৃষ্ণ যৌথ আক্রমণ
সূর্য উত্তাপ নিয়ে আকাশে ওঠার আগ থেকেই দরদর করে ঘামছেন রামশর্মা। অথচ পুরো ইক্ষু-সাম্রাজ্য জুড়ে মৃদুমন্দ বাতাস এমনভাবে বয়ে চলেছে, যেন এই বায়ুপ্রবাহকেই মনে হচ্ছে স্বর্গের আনন্দ-প্রবাহন।

আজ এমনকি প্রভাতী স্তোত্রপাঠ পর্যন্ত করা হয়নি রামশর্মার। ঘুম থেকে কি তিনি আজ জেগে উঠতে পারেননি ব্রাক্ষ্মমুহূর্তে? কিন্তু তার চোখের দিকে তাকালে তেমনটি মনে হয় না। অতিরিক্ত নিদ্রার কারণে মানুষের চোখের পাতায় যে ভারি আবেশটা দেখা যায়, তার লেশমাত্র নেই রামশর্মার চোখে। উল্টো চোখের পিঙ্গলা মণির চারপাশের ঘোলাটে-সাদা জমিজুড়ে করমচার মতো টকটকে রক্তাভা একথাই মনে করিয়ে দেয় যে গতরাত তার বিনিদ্রই কেটেছে। কিন্তু তাকে বিরক্ত বা কান্ত দেখাচ্ছে না এতটুকুও। বরং তার লোকেরা তাদের প্রভুকে এতটা উৎফুল দেখেনি কোনোদিন। এতটা চনমনে দেখা যেতে পারে তার মতো এমন রাশভারি মানুষকে, এটা ভাবতেই পারেনি কখনো রামশর্মার লোকেরা। তাহলে তার মাথা বেয়ে ক্ষুর-কামানো গাল বেয়ে যে অবিশ্রাম ঘাম নেমে আসছে, সেই ঘর্মস্রোতের উৎস কী? অবদমিত কাম? দীর্ঘকালের অব্যক্ত প্রত্যাশা পূরণের মাহেন্দ্রণ এগিয়ে আসা? বোধহয় তাই!

আজ ঊর্ণাবতী আসছে শ্রীরামশর্মার সাম্রাজ্যে।

এমনিতেই শ্রীশর্মার ইক্ষু-সাম্রাজ্য যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন। সারিবাঁধা আখের সবুজ সরু দীঘল শরীর যে কোনো মানুষের চোখে প্রশংসার ছাপ ফুটিয়ে তোলে। লম্বমান দুই সারির মাঝখানে বয়ে গেছে জলসিঞ্চনের সুপরিকল্পিত নালা। কিন্তু অবিরল জলস্পর্শের কারণে নালার পাশের মাটি স্যাঁতসেঁতে হয়ে সেখানে পরজীবী জন্মানোরও কোনো অবকাশ রাখা হয়নি। রোজকার নিড়ানি দেওয়া মাটির মতো আখের গোড়ার মাটি ঝকঝকে তকতকে। নালার জলে খুব ছোট প্রজাতির কিছু মৎস্য সন্তরণরত। তবে তাদের ক্ষুদ্র পুচ্ছদেশের সঞ্চালন নয়ন-মনোহারী। সেই কারণেই তাদের সেখানে বিচরণের অধিকার দান করা হয়েছে। রামশর্মার দৃষ্টিতে তাদের কুৎসিত বা তিকর মনে হলে তৎণাৎ নির্বংশ হয়ে যেত সকল নালাচারি মৎস্য প্রজাতি। ভেককূলের আসা-যাওয়া রয়েছে। তবে নেই কোনো স্থায়ী বাসের অনুমতি। পার্শ্ববর্তী ফলদ-উদ্যান থেকে মাঝে মাঝে একছুটে আখসারির ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যায় কাঠবিড়ালির দল। তৃণভূমি থেকে সাবধানী পায়ে মুথাঘাসের সন্ধানে আসে খরগোসরা। তাদের গুহানির্মাণ এবং তৃণভূমিতে বসবাস সহ্য করেন রামশর্মা। যেহেতু তারা সুন্দর। কিন্তু কোনো শৃগালের প্রবেশ এবং মুহূর্তের অবস্থিতিও সহ্য করতে তিনি সম্মত নন। পঙ্গপালের উপস্থিতি তার এই সাম্রাজ্যে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে প্রজাপতি এবং অন্যান্য রঙ্গিন মথ দেখলে তিনি কুপিত হন না।
যেভাবে নিজের ইক্ষু-সাম্রাজ্য এবং বাসস্থানকে দেখতে চান শ্রীরামশর্মা, সেভাবেই সেগুলিকে বিন্যস্ত এবং সজ্জিত রাখার জন্য প্রাণপাত করে শত শত আত্মবিক্রিত ভূমিদাস।

গত এক সপ্তাহকাল ধরে শ্রীরামশর্মার আয়ত্তাধীন সমগ্র ভূখণ্ডকে আরো ঝকঝকে, পরিচ্ছন্ন এবং সুচারুবিন্যস্ত করে তোলা হয়েছে।
রামশর্মার বাসগৃহ ইষ্টকনির্মিত। তাঁর ইক্ষু-সাম্রাজ্যের এমন এক স্থানে সুপরিকল্পিতভাবে সেই অট্টালিকা নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে সেটিকে কোনোভাবেই ইক্ষু-উদ্যানের অংশ বলে মনে না হয়: আবার সেই বাড়ি থেকে যেন চতুর্দিকেই দিগন্তবিস্তারী ইক্ষু-সাম্রাজ্যের সৌন্দর্য এবং ব্যাপক ব্যাপ্তি অনুভব করতে কোনো অসুবিধাও না হয়।

আজ সেই বিশাল অট্টালিকা পুষ্পে সজ্জিত, ধূপসৌরভে আমোদিত। বিশাল অট্টালিকার কোনো প্রত্যন্ততম কোণেও বিন্দুমাত্র ধূলিকণার অস্তিত্ব আজ আবিষ্কার করা সম্ভব হবে না। গত সপ্ত দিবস যাবত গোলগোমীরা স্বয়ং শ্রীরামশর্মার প্রত্য তত্ত্বাবধানে অট্টালিকাটিকে সজ্জিত করছে। প্রত্যেক কক্ষেই, বিশেষ করে, যেসব কক্ষে ঊর্ণাবতীর পা রাখার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমন সবগুলি কক্ষেই স্ফটিকস্বচ্ছ ধাতুর তৈরি অন্তত পঞ্চবিংশতি সংখ্যক দীপাধার স্থাপন করা হয়েছে। প্রত্যেক কক্ষে স্থাপন করা হয়েছে সুদৃশ্য তেপায়া। সেখানে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের পানীয়। ডাবের জল, আখের রস, দ্রাক্ষারস, কমলার রস, মৃদু উত্তেজক সোমরস। সবগুলিই রাখা হয়েছে বিশেষ ধরনের ধূসরবর্ণ পাথরের পাত্রে, যাতে সেগুলিতে বজায় থাকে পছন্দনীয় শীতলতা। বাড়িতে কোনো পুরুষ থাকবে না। শ্রীরামশর্মার নিজস্ব দেহরী দল অবশ্য থাকবে। তবে তারা থাকবে বাড়ির বাহিরে বিশেষ বিশেষ স্থানে, যেখান থেকেই প্রভুর নিরাপত্তার শতভাগ নিশ্চয়তা বিধান করা সম্ভব। যে গোলগোমী এবং দাসীরা প্রভু এবং অতিথির সেবা করবে, তাদের বেছে নেওয়া হয়েছে বিশেষভাবে। তারা শিষ্টাচারে, সুমিত ভাষণে এবং নিজেদেরকে সুশ্রীরূপে উপস্থাপনে দক্ষ।

শ্রীশর্মার পরিবারের সকল সদস্যকে সাতদিন পূর্বেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে কামরূপের রাজধানীতে। সেখানে তার নিজস্ব বৃহৎ অট্টালিকা রয়েছে। রাজকার্যে এবং বাণিজ্য-ব্যপদেশে তাকে মাঝে মাঝে রাজধানীতে যেতে হয়। তাই সেখানকার অট্টালিকার বিশালতা এবং সাজসজ্জাও শ্রীরামশর্মার সামাজিক মর্যাদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তার স্ত্রী-গণ স্বামীর নির্দেশকে দেবতার নির্দেশ স্বরূপ জ্ঞান করে। মনু-সংহিতা তাদের সেটাই শিখিয়েছে। কাজেই স্বামী তাদেরকে দশদিনের জন্য রাজধানীতে গিয়ে থাকার নির্দেশ দিলে তারা বিনাপ্রশ্নে মেনে নিয়েছে স্বামীর নির্দেশ। তারা এমনকি ব্যাখ্যা বা কারণও জানতে চায়নি। কারণ জানানোর প্রয়োজন মনে হলে স্বামী নিজেই জানাতেন। স্বামী না জানাতে চাইলে তা জানতে চাওয়ার কোনো অধিকার মনু তাদের দেননি। দ্রৌপদী-সীতা-সাবিত্রীর আশীর্বাদ পেতে হলে স্বামীকে বিনাপ্রশ্নে মেনে চলতে হবে, এটাই মনু বারংবার বলে দিয়েছেন। এর অন্যথা মানেই হলো ভ্রষ্টাচার। এর অন্যথা মানেই হলো সতীজীবনের আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হওয়া। তাই, রামশর্মা যা-ই করেন না কেন, তার গৃহশান্তি সর্বদাই অটুট।

স্বর্ণখচিত ক্ষৌমবস্ত্রে আচ্ছাদিত ঢল্লরিকা পাঠানো হয়েছে গতরাত্রেই। সঙ্গের নিপুণা দাসীকে বলে দেওয়া হয়েছে যে ঊর্ণাবতীকে যেন সে কোনোক্রমেই তাড়া না দেয়। বা এমন কোনো আচরণ না করে, যাতে ঊর্ণাবতী বিরক্ত হতে পারে। পথে ঢল্লরিকার নিরাপত্তার জন্য পাঠানো হয়েছে দশজন বিশেষভাবে প্রশিতি সশস্ত্র নিরাপত্তাযোদ্ধা। তারা এই কামরূপ রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধাদের মধ্যে অগ্রগণ্য। যে কোনো যুদ্ধকালে কামরূপের রাজা তার অধীনস্থ সকল সামন্তের কাছ থেকে চেয়ে নেন তাদের শ্রেষ্ঠ ও প্রশিক্ষিত যোদ্ধাদের। এই দশজন বিভিন্ন যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য বীরত্বের পরিচয় দিয়ে রাজার কাছ থেকে পদক এবং প্রশংসাবচন অর্জন করেছে। কাজেই এই রকম দশজন যোদ্ধার প্রহরাধীনে ঊর্ণাবতী পথিমধ্যে এতটাই নিরাপদ, যতটা নিরাপদ শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।

কিন্তু শ্রীশর্মার প্রতীক্ষার প্রহর আর যে কাটতে চায় না! নিজের ইক্ষু-শস্য-পুষ্প সাম্রাজ্যের সৌন্দর্য তাকে আর সান্ত্বনা দিতে পারছে না। শীতল পানীয় তার ভেতরের উত্তেজনাকে চাপিয়ে রাখতে আদৌ সাহায্য করতে পারছে না। তার ভেতরের লোভ, ঊর্ণাবতীকে কাছে পাওয়ার লোভ, সকল ইন্দ্রিয়কে ছাপিয়ে এই মুহূতেই যেন ফেটে বেরিয়ে পড়বে। শ্রীশর্মা এই নিয়ে কতবার যে পথের দিকে তাকালেন, তা গণনা করে রাখতে গেলে করণীকের লেখ্যপুস্তকের সকল সাদা পৃষ্ঠা অংকের পর অংকে সমাকীর্ণ হয়ে যেত। আর এখন তো এমন অবস্থা, রামশর্মা ঊর্ণাবতীর আসার পথ ছাড়া আর কোনো দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না। এত দেরি হচ্ছে কেন? এত দেরি করছে কেন ঊর্ণাবতী? হঠাৎ একটি আশংকা মনে উদয় হওয়ামাত্র থরথর করে কেঁপে উঠলেন শ্রীশর্মা। যদি ঊর্ণাবতী আজ তার এই উদ্যানে আগমন কোনো কারণে স্থগিত করে ফেলে! তাহলে? তাহলে হায় কৃষ্ণ, তোমার সেবক রামশর্মাকে কামানল থেকে রা করবে কে! এখন তো রামশর্মার কেবলমাত্র ঊর্ণাবতীকেই চাই। তার পরিবর্তে পিতৃলোক থেকে স্বর্গবেশ্যা উর্বশী-মেনকা-রম্ভাকে পাঠালেও রামশর্মা প্রশমিত হতে পারবেন না। কারণ, হা কৃষ্ণ তুমি তো জানো না- ঊর্ণাবতীর কোনো পরিবর্ত হয় না! হা মদন দেব তুমি আমাকে আর কত দগ্ধশরে বিদ্ধ করবে! ঊর্ণাবতী! ঊর্ণাবতী তুমি এখনো আমার দৃষ্টিসীমায় ধরা দিচ্ছ না কেন! হা মদন দেব আমি যে আর পারছি না!                    

১৬. কট্টলি! কট্টলি!
দিব্যোকের কৃষ্ণকালো চোখমণির চারপাশ বেষ্টনকারী সমস্ত সাদা অংশ টকটকে লাল হয়ে গেছে। সেই চোখ থেকে কালো গণ্ডদেশে যে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে, সেই ফোঁটাগুলিকেও চোখের রক্তাভার কারণে রক্ত বলেই ভ্রম হয়। এই অশ্রু ক্রোধের। এই অশ্রু ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে পড়ার। এই অশ্রু ঘৃণার। কথা বলার জন্য কয়েকবার চেষ্টা করেছে দিব্যোক। কিন্তু ঠোঁট এতটাই কম্পমান যে কোনো শব্দ পূর্ণ আঙ্গিক নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারেনি মুখ-নিঃসৃত হয়ে। তাকে এতণ ক্রোধে কম্পমান দেখেছে সমবেত কৈবর্তরা। আর তখন তারা নিঃশংসয়ে অনুভব করেছে যে তাদের নেতা নির্বাচন ভুল হয়নি। আর কারো মনের মধ্যে কৈবর্ত জাতির জন্য এত ভালোবাসা জমা হয়ে নেই। আর কারো বুকের মধ্যে বরেন্দির জন্য এত হাহাকার জমা হয়ে নেই। আজ সমবেত কৈবর্তরা নিশ্চিত, দিব্যোকের মধ্য দিয়ে এবার কট্টলি কথা বলবেই!

নিজেকে সামলানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে দিব্যোক। এটাই রীতি। নিজের ক্রোধ, নিজের উচ্ছ্বাস, নিজের ভীতি, নিজের আবেগ কখনোই নেতা সর্বসমে প্রকাশ করবে না। এই জ্ঞান দিব্যোক কোনো শাস্ত্র ঘেঁটে আবিষ্কার করেনি। কোনো চাণক্য কিংবা কৌটিল্য তাকে এই রীতি শিক্ষা দেয়নি। দিব্যোক নিজে নিজে নিজের জীবন থেকেই অর্জন করেছে এই শিক্ষা। কারণ সে জন্ম থেকেই নেতা। কট্টলি নিজেই তাকে তৈরি করেছে। কৈবর্ত জাতির পুরুষ থেকে পুরুষান্তরের সকল প্রজ্ঞা লোহিত সদানীরা-বাহিত হয়ে জমা হয়েছে দিব্যোকের মধ্যে। সেই প্রজ্ঞা পূর্ণ ভাস্বরতা নিয়ে আত্মপ্রকাশের জন্য খুঁজে নিয়েছে আজকের দিনটিকে।

অবশেষে নিজের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে দিব্যোক। নিজের পাশে দাঁড়ানো সহচরদের উদ্দেশ্যে অকম্প্র নির্দেশ জানায়- ক্ষেত্রপূজার রাতে কৈবর্তদের ওপর আক্রমণে যে কজন রাজপুরুষ অংশ নিয়েছিল, তাদের ধরে নিয়ে এসো! অশ্বশালা থেকে যে কয়টা প্রয়োজন দ্রুতগামী অশ্ব নিয়ে যাও। সঙ্গে প্রয়োজনীয় অস্ত্র-শস্ত্র। অশ্ব ছোটাবে বায়ুবেগে। ওদেরকে আমার সম্মুখে উপস্থিত করবে মধ্যাহ্নের আগেই।

তুমুল হর্ষধ্বনি উঠে আসে সমাবেশের মর্মস্থল থেকে। সেদিকে তাকিয়ে দিব্যোক সতর্ক করে সবাইকে- শোনো, এখানে কোনো সহিংস কিছুই ঘটবে না। মহারাজের রাজপুরুষদের আমি যে শাস্তি প্রদান করব, তা এই সাম্রাজ্যের রীতি এবং শাস্ত্র মেনেই। তোমরা এমন কিছু করবে না, যাতে পালসম্রাট মনে করেন যে, কৈবর্তরা বিদ্রোহ করেছে!

এবার ক্রুদ্ধ একটা কণ্ঠ ভেসে আসে- বিদ্রোহ কাকে বলে তা আমরা জানি না। তবে আমরা জানি, মোদের লিজেদের বরেন্দিকে আমরা আবার লিজেদের করে নিব। অন্য ভূমি থেকে যারা এসেছে, তাদের তাড়িয়ে দেব। বলব, যা তোরা তোদের লিজেদের মাটিতে গিয়ে থাক!
পালসম্রাটের দৃষ্টিতে সেটাকেই বিদ্রোহ করা বলে। সেই কাজ আমরা এখন করব না।

এবার একাধিক ক্রুদ্ধ কণ্ঠ যোগ দেয় পূর্বের কণ্ঠের সঙ্গেÑ না দিব্যোক তোমার এই বিবেচনা ন্যায্য লয়। আমরা আর কত সহ্য করব! আমাদের খেত গিয়েছে, ঘর গিয়েছে, বন গিয়েছে, নদী গিয়েছে। মোদের স্বজনরা হারিয়ে গিয়েছে কামরূপ নামের অজানা দেশে। সেখানে তারা দাসত্ব করছে আর্য দস্যু-তস্করদের। আমরা এখন কট্টলি মায়ের নামে একাট্টা হয়েছি। মোদের কট্টলি মোদের কাছে ফিরিয়ে আনতেই হবে।

দিব্যোক মাথা নাড়েÑ হ্যাঁ। মোদের কট্টলি আবার মোদের লিজেদের কট্টলি হবে। কিন্তু তার জন্য এখনই, এই আজকেই ঝাঁপিয়ে পড়া চলবে না। সব কাজের জন্য একটা লগ্ন লাগে। লাগে না?

এবার সকলেই স্বীকার করে- হ্যাঁ লাগে।

ঠিক বলেছ এবার! দিব্যোক প্রশংসার স্বরে বলে- সেই লগ্নের আর বেশি দেরি নাই। কিন্তু তোমরা কেউ আগ বাড়িয়ে কাজ করতে গিয়ে আমার এতদিনে তিলে তিলে গড়া পরিকল্পনা নষ্ট করে দিও না।

তাই বলে কি আমরা দেদ্দাপুরের এতবড় অন্যায় মুখ বুঁজে সইব? তার কোনো প্রতিকার হবে না।

অবশ্যই হবে। কিন্তু সেই প্রতিকার তোমরা আমাকেই করতে দাও।

সমাবেশ থেকে চাপা কণ্ঠে বোধহয় কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশিত হয়। দিব্যোক কণ্ঠ উচ্চগ্রামে নিয়ে বলে- আমার ওপর তোমাদের বিশ্বাস আছে?
আছে।

প্রথমে একটা কণ্ঠে উচ্চারিত হয় এই শব্দটি। পরমুহূর্তে আরো কয়েকটি কণ্ঠ উচ্চারণ করে একই শব্দ। তারপরেই সমস্ত সমাবেশ একসাথে ঘোষণা করেÑ আছে! আছে!

তাহলে আমি যেভাবে বলব, সেভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকো। লগ্ন এলে আমি তোমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে বলব। আমি তোমাদের সঙ্গে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ব।

লগ্ন এসেছে কি না, তা আমরা বুঝব কীভাবে?

দিব্যোকের মুখে ফুটে ওঠে অপূর্ব একটুকরো হাসি। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে- লগ্ন যখন আসবে, তখন আমরা সবাই তা ঠিকই টের পাব। বরেন্দি মা তার সকল সন্তানকে জানিয়ে দেবে।

তখনই অশ্বুরের শব্দ ওঠে। সবাই তাকায় শব্দের উৎসের দিকে। লাল ধুলো উড়িয়ে ছুটে আসছে দিব্যোকের সহচরবৃন্দ। সমাবেশের মধ্যস্থলে এসে থেমে দাঁড়ায় অশ্বারোহীরা। কয়েকটি অশ্বের পিঠে দুইজন করে আরোহী। তাদের মধ্যে একজন দিব্যোকের কৈবর্ত-সহচর, অপরজন পালসম্রাটের রাজপুরুষ। রাজপুরুষদের টেনে-হিঁচড়ে নামায় দিব্যোকের সহচরবৃন্দ। দাঁড় করিয়ে দেয় প্রাদেশিক অমাত্য দিব্যোকের সামনে।
ভয়ে কাঁপছে বীরপুঙ্গবরা। তাদের দিকে রোষপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় দিব্যোক। জলদগম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করেÑ কৈবর্তদের পবিত্র ত্রেপূজার রাতে তাদের ওপর আক্রমণ চালানোর নির্দেশ কে দিয়েছিল তোমাদের?

কারো মুখ থেকে কোনো উত্তর আসে না।

দিব্যোক এবার ধমকে ওঠে- তোমরা আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে চেষ্টা করো না। শীঘ্র বলো তোমাদের নির্দেশদাতার নাম। তা নাহলে এই সমাবেশ তোমাদেরকেই সার্বিক অপরাধী ধরে নিয়ে তোমাদের বিচার করবে। তাই নিজেরা বাঁচতে চাইলে তোমাদের নির্দেশদাতার নাম সর্বসমে জানিয়ে দাও!

রাজপুরুষরা একে অপরের মুখের দিকে তাকায়। তারপর তাকায় দিব্যোকের দিকে। এরপর তাদের দৃষ্টি পড়ে সমাবেশের মানুষগুলোর দিকে। কালো পাথরের মতো মুখগুলোতে তীব্র জিঘাংসা জ্বলজ্বল করছে। চোখ থেকে ঠিকরে বেরুচ্ছে ঘৃণার আগুন। শিউরে ওঠে রাজপুরুষরা।

আবার কঠোর কণ্ঠস্বর ভেসে আসে- এই শেষবারের মতো তোমাদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। শেষবারের মতো তোমাদের জিজ্ঞেস করছি। কে তোমাদের নির্দেশ দিয়েছিল আক্রমণ করার?

এবার উত্তর আসে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে উচ্চারিত হয়- শ্রীবৎসপালস্বামী।

সঙ্গে সঙ্গে প্রতিধ্বনি ওঠার মতো সমাবেশে উচ্চারিত হতে থাকে নামটি- বৎসপালস্বামী! বৎসপালস্বামী!

দিব্যোক আবার হাত উঁচু করে। সঙ্গে সঙ্গে সমাবেশে নেমে আসে পালকপতন স্তব্ধতা। দিব্যোক এবার বলে- তোমরা কি জানো না পালসম্রাটের প্রাদেশিক অমাত্য ছাড়া আর কারো এমন ধরনের কোনো নির্দেশ প্রদানের অধিকার নেই?

মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে রাজপুরুষরা।
দিব্যোক আবার বজ্রকণ্ঠে প্রশ্ন করে- জানো? নাকি জানো না?
একজন বলেÑ আমরা ভেবেছিলাম, শ্রীবৎসপালস্বামী হয়তো আপনার অনুমতি নিয়েছেন।
চমৎকার! তীব্র শ্লেষের সাথে বলে দিব্যোক- আমার স্বজাতির পবিত্রতম পার্বন পণ্ড করার নির্দেশ বা সেই নির্দেশের অনুমোদন দেব আমি! তোমরা কি কল্পনা করতে পারো যে, ভট্টবামন তার ভগবান  বিষ্ণুর যজ্ঞ নির্বাপিত করার নির্দেশ দিচ্ছেন? অথবা এটাও কি কল্পনা করতে পারো যে মহারাজাধিরাজ মহীপাল নির্দেশ দিচ্ছেন প্রবারণা পূর্ণিমার অনুষ্ঠান পণ্ড করার?
প্রশ্নের ধাক্কায় থরথর করে কেঁপে ওঠে রাজপুরুষরা।
বিরতি দেয় না দিব্যোকÑ তাহলে তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ যে বৎসপালস্বামী আমার অনুমোদন ছাড়াই তোমাদের দিয়ে এমন একটি দুবৃত্তসুলভ পাপকার্য করিয়ে নিয়েছেন? বুঝতে পারছ?
একবার মাথা তুলে দিব্যোকের দিকে তাকিয়েই আবার মাটির দিকে দৃষ্টি নামিয়ে নেয় রাজপুরুষদের এই দলটির অধিকর্তা। মৃদুকণ্ঠে বলেÑ হ্যাঁ বুঝতে পারছি অমাত্যপ্রবর!
তাহলে এটাও নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ যে শ্রীবৎসপালস্বামী এমন একটি কাজের নির্দেশ দিয়ে পালসাম্রাজ্যের রাজকীয় নীতিমালা ভঙ্গ করেছেন?
এবার পুরো হতভম্ব হয়ে পড়ে রাজপুরুষের দল। এমন যুক্তিজালে একজন কৈবর্ত যে আর্যদের ফাঁসিয়ে দিতে পারে, এটি তাদের কারো কল্পনাতেই আসেনি কখনো।
মাথামোটা রাজপুরুষদের কথা নাহয় বাদই দেওয়া গেল, কূটবুদ্ধি-দেবতার বরপুত্র ভট্টবামন স্বয়ং কি কোনোদিন ভাবতে পারবেন? ভাবতে পারবে পালসাম্রাজ্যের অন্যান্য জাতিগর্বী অমাত্যবর্গ?
এবার আসে চরম আঘাতটি। দিব্যোক বজ্রকণ্ঠে উচ্চারণ করেÑ শ্রী বৎসপালস্বামী মহান পালসাম্রাজ্যের নীতিমালা ভঙ্গ করে নিজের অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আমাদের রাজকীয় কর্মচারিদের ব্যবহার করেছেন, রাজশক্তিকে কুপথে পরিচালিত করেছেন। তাই শাস্তি হিসাবে এই মুহূর্ত থেকে তাকে বিষ্ণুমন্দিরের সেবায়েত পদ থেকে অপসারণ করা হলো। সেই সঙ্গে তিনি যে অমানবিক অত্যাচার চালিয়েছেন, তার শাস্তি হিসাবে তাকে দশ বৎসরের জন্য প্রাদেশিক বন্দিশালায় বন্দি করে রাখার নির্দেশ প্রদান করে রাখা হলো। যদি তিন বন্দিত্ব না চান, তাহলে অবিলম্বে তাকে বরেন্দি ছেড়ে চলে যেতে হবে। আর কখনোই তিনি বরেন্দিতে পা রাখতে পারবেন না।
দিব্যোকের সহচররা উৎসাহের সঙ্গে শ্রীবৎসপালস্বামীকে বন্দি করার জন্য যাওয়ার উদ্যোগ করতেই হাতের ইঙ্গিতে তাদের নিরস্ত করে দিব্যোক। বলেÑ শ্রী বৎসপালস্বামীকে বন্দি করে বন্দিশালায় নিয়ে আসার দায়িত্ব রাজপুরুষদের। তাদের কর্তব্য তারাই পালন করুক। তোমরা তাদের এই কর্তব্য-পালনে যথোচিত সাহায্য করবে। শ্রীবৎসপালস্বামীর লোকেরা যদি রাজপুরুষদের দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করে, তবে পালসাম্রাজ্যের প্রাদেশিক অমাত্য হিসাবে আমি তোমাদের এই অধিকার প্রদান করছি যে, রাজকীয় নীতিমালা প্রতিপালনের জন্য তোমরা যতটা প্রয়োজন, ততটাই নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করতে পারবে। প্রয়োজনবোধে শ্রীবৎসপালস্বামীর পোষা ঠাঙ্গাড়েগুলোকে হত্যা করার অনুমতিও তোমাদের দেওয়া হলো।
এবার রাজপুরুষদের দিকে তাকিয়ে উদার হাসি হাসে দিব্যোক। বলে- তোমরা নিশ্চিন্ত মনে রাজকীয় কর্তব্য পালনে এগিয়ে যাও। আমার সহচরবৃন্দ তোমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। যদি তোমরা ঠিকমতো প্রাদেশিক অমাত্যের নির্দেশ মেনে শ্রীবৎসপালস্বামীকে বন্দি করতে সম হও, তাহলে বৎসপালস্বামীর অন্যায় নির্দেশে তোমরা নিজেরাও যে অন্যায় কর্ম করেছ, সেই অপরাধের শাস্তি হিসাবে তোমাদের যাতে সবচেয়ে লঘুদণ্ড দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়, সেই ব্যবস্থা আমি করব।

দ্রিগ্ দ্রিগ্ দ্রিগ্...
সেই একই জয়ঢাক বাজছে। সেই একই রাজপুরুষ ঘোষণা করছে রাজকীয় নির্দেশ। তবে একারের ঘোষণাটি কৈবর্তদের কানে যেন মধুবর্ষণ করছেÑ
শুন হে দেদ্দাপুরের মানুষজন!
বিষ্ণুমন্দির স্থাপনের জন্য এই দেদ্দাপুরসহ যে চারটি গ্রামকে দেবোত্তর হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছিল, প্রাদেশিক অমাত্য দিব্যোকের নির্দেশে পুস্তপাল ভাণ্ডারি দেব সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করেছেন। আর একই সঙ্গে সেবায়েত শ্রী বৎসপালস্বামীকে তার পদ থেকে আপসারণ করা হয়েছে। ফলে এখন আর বৎসপালস্বামীর কোনো নির্দেশ মেনে চলতে এইসব গ্রামের মানুষ বাধ্য নয়। বৎসপালস্বামীর যে কোনো নির্দেশ এখন থেকে অকার্যকর বলে গণ্য হবে। প্রাদেশিক অমাত্যের কার্যালয় থেকে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই সকল গ্রাম যথাবিধি মহারাজাধিরাজ মহীপালের শাসনাধীন পালসাম্রাজ্যের রীতি এবং পদ্ধতি অনুসারে শাসিত হবে। কেউ কোনোরূপ বাড়তি কর আরোপের অধিকার রাখবে না। কেউ কোনো কৈবর্ত-কোল-ভিল-কোচ নর-নারী-শিশুকে বিষ্টি প্রদানের জন্য বাধ্য করতে পারবে না। বন, নদী, খাল, গোবাট ইত্যাদির ওপর কেউ কোনো কর আরোপ করতে পারবে না।
দ্রিগ দ্রিগ দ্রিগ...
ঢাকের তালে তালে ততণে কৈবর্ত নরা-নারীরা উল্লাসনৃত্য শুরু করে দিয়েছে।

সেই রাতেই আক্রমণ এল।
ঘুমন্ত কৈবর্তরা কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুনের লেলিহান শিখা কৈবর্তদের ঝুপড়ি ঘরগুলিকে গিলে খেয়ে আকাশে কিংবা বাতাসের শূন্যতায় মিলিয়ে দিতে শুরু করল। প্রত্যুষের পূর্বেই দেখা গেল দেদ্দাপুর নামে কোনো গ্রামের অস্তিত্ব আর বরেন্দিতে নেই। শ্রীবৎসপালস্বামী নিজে আর্য হয়ে একজন কৈবর্তের কাছে হেরে যাবে, তা তো কিছুতেই হতে পারে না। দিব্যোক, তুমি প্রাদেশিক অমাত্য হও, আর যা-ই হও, তুমি কোনোদিন অতি সাধারণ একজন আর্যেরও সমক হতে পারবে না!   
     
১৭. ঊর্ণাবতী ঊর্ণাবতী...

প্রধান দ্বারে অতিথির আগমনসূচক আনন্দ-শঙ্খ বেজে ওঠে। আর রামশর্মার হৃৎপিণ্ড আনন্দের আতিশয্যে তার বুকের মধ্যে এত জোরে লাফিয়ে ওঠে যে মনে হয় এই বুঝি বুকের খাঁচা ছেড়ে বেরিয়ে যাবে সেটি।
এসেছে! ঊর্ণাবতী এসেছে! অবশেষে প্রতীক্ষার হয়েছে অবসান।
শ্রীরামশর্মার ইক্ষু-সাম্রাজ্যের প্রবেশদ্বারে রাখা হয়েছে কচি ডাব, আখের রসসহ নানাবিধ পানীয়। সেখানে খাটানো হয়েছে বর্ণালী একটি তাঁবুও। যদি সেখানে বসে ঊর্ণাবতী পথশ্রম শেষে হাত-মুখ প্রালনের পরে দু’ঢোক পানীয় পান করতে চায়! কিন্তু ঊর্ণাবতীর ঢল্লরিকা সেখানে শ্লথগতি হয় না। এত দূর থেকেও শ্রীরামশর্মা পুলকিত হয়ে দেখেন, ঊর্ণাবতীর ঢল্লরিকা সোজা চলে আসছে তার দিকে। শ্রীরামশর্মা পুলকিত বোধ করেন, কারণ তার মনে হয়, ঊর্ণাবতীও পথে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করতে চায় না। বরং যত শিঘ্র সম্ভব শ্রীরামশর্মার সান্নিধ্যে পৌঁছাতে চায়। প্রথম যেদিন ঊর্ণাবতীর পত্রবাহিকা দাসী এখানে এসে রামশর্মার হাতে তার কর্ত্রীর পত্র তুলে দেয়, সেদিন আনন্দে ও বিস্ময়ে বিভোর হয়ে পড়েছিলেন শ্রীরামশর্মা। এ-ও কী সম্ভব! যে উর্ণাবতীর অধরোষ্ঠের একটু হাসি দেখার জন্য এই রাজ্যের সকল ব্রাক্ষ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য তরুণ ও যুবকের দল দিনের পর দিন হা-পিত্যেশ করে প্রদ্যুম্নেশ্বর-মন্দিরপ্রাঙ্গণে পড়ে থাকে, সেই তাদের বঞ্চিত করে পুরো একটি অহোরাত্রির জন্য উর্ণাবতী আসতে চায় শ্রীরামশর্মার ইক্ষু-সাম্রাজ্যদর্শনে। পত্রদূতী বিনিতস্বরে জানতে চায়, তার কর্ত্রীর ইচ্ছা কি পূরণ হবে? শ্রীরামশর্মা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে উত্তর দেনÑ এই ইক্ষু-উদ্যান, এই অট্টালিকা, এই উদ্যানের কর্মীসকল এবং তাদের প্রভু শ্রীরামশর্মা এখন থেকে প্রতিটি উদগ্রীব প্রহর কাটাবে ঊর্ণাবতীর আগমন-প্রতীক্ষায়। নির্দিষ্ট দিনে এবং নির্দিষ্ট ণে এই উদ্যানে পা রাখলেই ঊর্ণাবতী দেখতে পাবেন, তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য সকলেই প্রস্তুত।

আজ ঊর্ণাবতীর দিকে তাকিয়ে আর চোখ ফেরাতে পারেন না শ্রীরামশর্মা। এর আগে মন্দিরে গিয়ে ঊর্ণাবতীকে অন্তত কয়েকবার শয্যাসঙ্গিনী করার সৌভাগ্য তার হয়েছে। দেবদাসী ঊর্ণাবতীকে তো শ্রীরামশর্মার মতো লোকদের যৌনলালসা মেটানোর জন্যই মন্দিরে রাখা হয়েছে। তাই ঊর্ণাবতী তার কাছে সদা কামনার হলেও একেবারে আনকোরা নতুন নয়। কিন্তু সে যে এমন অলোকসুন্দরী, তা আজ পূর্ণ সূর্যালোকে এই মনোহর পরিবেশে না দেখলে বোঝা যেত না। তার ইক্ষু-উদ্যানে ঊর্ণাবতী নিজ উদ্যোগে নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছে বলে শ্রীরামশর্মার এখন নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হয়। আর সেই সাথে মনে হয়, আজ তার এই ইক্ষু-সাম্রাজ্য যথার্থ ধন্য হলো।

পরম বিনয় এবং পুলকের সঙ্গে ঢল্লরিকা থেকে উর্ণাবতীকে নিজে হাত ধরে নামিয়ে আনেন শ্রীরামশর্মা। তার মুখে ফুটে ওঠে যথার্থ আর্যব্রাক্ষ্মণের ভাষাÑ ভদ্রে! সব সংবাদ কুশল তো? পথে কোনো কষ্ট হয়নি তো?

কষ্ট! মুক্তাসদৃশ দন্তরাজির ঝলকানি দেখা যায় ঊর্ণাবতীর মুখে- আপনার ব্যবস্থাপনায় কষ্ট নামক কোনো বস্তুর অস্তিত্ব কোনোদিন থাকতে পারে!
প্রশংসা মাথা পেতে নিলেন শ্রীরামশর্মা। মুখে বলেনÑ আজ ধন্য হলো আমার এই উদ্যান! আমার এই অট্টালিকা! এত এত বছর ধরে আমি যে বিপুল শ্রম ব্যয় করে এই উদ্যান তৈরি করেছি, আজ মনে হচ্ছে বৃথা যায়নি আমার পরিশ্রম। মনে হচ্ছে সম্পূর্ণ সাফল্যধন্য আমার শ্রম। ধন্য আমি।
ঊর্ণাবতী নিরস্ত করে তাকে- সে কী বলছেন ব্রাক্ষ্মণশ্রেষ্ঠ! আমার মতো একজন সামান্যা নারীকে আপনি সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আপনার সাম্রাজ্যে, তাতে আমি নিজেই বরং ধন্য।
এবার আর এই তর্ক এগিয়ে নিতে উদ্যোগী হন না শ্রীরামশর্মা। বরং ঊর্ণাবতীকে আহ্বান জানান তার অতিথিনিবাসের দিকে। এখানে কিছু জলখাবার গ্রহণ এবং বিশ্রামের পরে উদ্যান ঘুরিয়ে দেখানোর ব্যবস্থা করা যাবে।
জলখাবারের সময় লোকলজ্জা ভুলে গিয়ে নির্নিমেষে ঊর্ণাবতীর মুখের দিকে এবং শারীরিক সম্পদের দিকে তাকিয়ে থাকেন শ্রীরামশর্মা। তার কাছে ঊর্ণাবতীকে মনে হয় উর্বশীর সমতুল্য। মহাভারতের সেই আখ্যানের কথা তার মনে পড়ে যেখানে উর্বশী যাচ্ছে অর্জুনকে সেবা করতে। মহাভারতকার কী সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন উর্বশীর- “উর্বশী স্নান করে মনোহর অলংকার ও গন্ধমাল্য ধারণ করলেন এবং সন্ধ্যাকালে চন্দ্রোদয় হলে অর্জুনের ভবনে যাত্রা করলেন। তার কোমল কুঞ্চিত দীর্ঘ কেশপাশ পুষ্পমালায় ভূষিত, মুখচন্দ্র যেন গগনের চন্দ্রকে আহ্বান করছে, চন্দনচর্চিত হারশোভিত স্তনদ্বয় তার প্রতি পদক্ষেপ লম্ফিত হচ্ছে। অল্প মদ্যপান, কামাবেশ এবং বিলাসবিভ্রমের জন্য তিনি অতিশয় দর্শনীয়া হলেন। ”

এই মুহূর্তে ঊর্ণাবতীর দেহবল্লরীর দিকে তাকিয়ে শ্রীরামশর্মার মনে প্রশ্ন জাগে- উর্বশী কি ঊর্ণাবতীর চাইতেও দর্শনীয়া এবং আকাক্সিতা ছিলেন? মহাভারতকার মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস তার  উর্বশীকে নিয়েই থাকুন, এই মুহূর্তে শ্রীরামশর্মার কাছে ঊর্ণাবতীর তুলনায় ত্রিলোকের আর কেউ কামনীয় নয়। এখন থেকে সান্নিধ্যের প্রতিটি পল-অনুপল তিনি ঊর্ণাবতীকে উপভোগ করবেন। উপভোগ করবেন দৃষ্টি দিয়ে, শ্রবণেন্দ্রিয় দিয়ে, স্পর্শেন্দ্রিয় দিয়ে, আর রাত্রিকালে...। রাত্রিকালের কথা মনে আসতেই তিনি সূর্যকে প্রণাম জানিয়ে বলেনÑ সূর্যদেব, আজ আপনি নিজেকে যদি আগে আগে গুটিয়ে নেন, তাহলে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব!

ঊর্ণাবতীর কথায় তার চমক ভাঙে। ঊর্ণাবতী উচ্ছ্বলা কণ্ঠে বলে- কই! আপনি কি আমাকে এই অতিথিভবনেই বসিয়ে রাখবেন? উদ্যান দেখাতে নিয়ে যাবেন না? আমি কিন্তু সম্পূর্ণ উদ্যান ঘুরে দেখতে চাই! লোকমুখে কত শুনেছি এই উদ্যানের কথা! আজ পুরো উদ্যান পরিদর্শন করে নিজের দুই চোখকে ধন্য করতে চাই।

হেসে ফেলেন শ্রীরামশর্মাÑ পুরো উদ্যান তুমি ঘুরে দেখতে চাও, এ তো আমার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। কারণ তাহলে তোমাকে অনেক বেশিদিন ধরে আমার কাছে রাখতে পারব।
ঊর্ণাবতী বুঝতে পারে না এই কথার তাৎপর্য। জিজ্ঞেস করে- আপনার কথার অর্থ?
অর্থ অতি পরিষ্কার। তুমি যদি সূর্যালোকের প্রতিটি মুহূর্তও কাজে লাগাও, তাহলেও আমার এই ক্ষুদ্র উদ্যান সম্পূর্ণ পরিভ্রমণ করতে তোমাকে অন্তত একটি সপ্তাহ ব্যয় করতে হবে। তুমি চাইলে আমি অত্যন্ত খুশি হয়ে তোমাকে এক সপ্তাহের আতিথ্য প্রদানে তৈরি আছি।

ওরে বাবা! কপট বিস্ময়ে অপূর্ব এক ভ্রুভঙ্গি করে ঊর্ণাবতী। আর সেই সৌন্দর্য দেখে আরো একবার নতুন করে মোহিত হন শ্রীরামশর্মা। ঊর্ণাবতী বলেÑ তার যে উপায় নেই, সে কথা তো আপনিও জানেন দ্বিজশ্রেষ্ঠ। মন্দিরের দেবতা তাহলে আমাকে ভস্ম করে দেবেন। সেই সাথে হয়তো আপনাকেও। তার চাইতে চলুন, আপনিই আপনার পছন্দমতো অংশ আমাকে দেখান।
স্মিত হাসির সাথে শ্রীরামশর্মা জানতে চান- কখন থেকে পরিদর্শন শুরু করতে চাও?
এই মুহূর্ত থেকেই। কোনো অসুবিধা আছে?
ঊর্ণাবতীর প্রশ্নে ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসেন শ্রীরামশর্মা- আমার সাম্রাজ্যে আমার অসুবিধা! মুখে বলেন- এই যে চার অশ্বের রথ প্রস্তুত তোমার জন্য। আমরা ইঙ্গিত করামাত্র রথ আমাদের নিয়ে চলতে শুরু করবে।

রথের পেছনের যে যাত্রী অংশ, তাতে দুই জনের বসার ব্যবস্থা। পালকের আসন বিছানো সেখানে। এত আরামদায়ক রথে পূর্বে কখনো ওঠেনি ঊর্ণাবতী। আসনের সামনে-পেছনে, বামে-দক্ষিণ খোলা। যেদিকে তাকাও, অবারিত দৃষ্টি চলে যায়। আর সেইসঙ্গে চতুর্দিক থেকে মৃদুমন্দ বায়ুপ্রবাহ এসে সার্বণিক পরিচর্যা করে চলে যাত্রীকে। শুধু মাথার ওপরে রৌদ্র প্রতিরোধক আচ্ছাদন। সেই আচ্ছাদনবস্ত্রও কার্যকর এবং অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন।

রথ চলতে শুরু করে। রথচালককে পূর্বাহ্নেই প্রয়োজনীয় নির্দেশ দান করে রেখেছেন শ্রীরামশর্মা। তাই দেখা যায়, রথ চলতে শুরু করে ধীর সুচারু এবং নিয়মিত গতিতে। জোরে ছুটলে হয়তো পথের পাশের এমন কোনো অংশ দ্রুত পেরিয়ে চলে যাওয়া হবে, যা ঊর্ণাবতীর ভালো করে দেখা হবে না। এমন গতিতে চলছে রথ, যাতে মনে হয় মৃদুমন্দ বায়ুসেবন করতে চলেছেন রথযাত্রীরা। মনে মনে শ্রীরামশর্মার প্রশংসা করতে বাধ্য হয় ঊর্ণাবতী। সত্যিই লোকটার ব্যবস্থাপনা খুবই সুচারু।

তার পাশে বসে আছেন শ্রীরামশর্মা। ঊর্ণাবতীর শরীরের যতটা নিকটে বসা যায় ততটাই নিকটে তার অবস্থান। ঊর্ণাবতীর শরীরের একটা পাশ পুরোপুরি সার্বণিক স্পর্শ করছেন তিনি নিজের শরীর দিয়ে। পথ চলতে চলতে রথ সামান্যতম ঝাঁকি খেলেও তিনি সুযোগটা ছাড়ছেন না। ঊর্ণাবতীর শরীরের সাথে নিজের শরীরটাকে ঠেসে ধরছেন অন্যমনস্কতার ভান করে। ঊর্ণাবতী কোনো বিরক্তি প্রকাশ করে না। বাধা তো দেয়ই না। ঊর্ণাবতীর এই মৌন সম্মতিকে তার প্রতি সত্যিকারের অনুরাগের প্রকাশ ভেবে মনে মনে আরো বেশি পুলকিত হতে থাকেন শ্রীরামশর্মা।
রথচালককে নির্দেশ দেওয়া আছে, সে প্রথমে যাবে উদ্যানের সেই অংশে, যেখানে সবচেয়ে উন্নত মানের ইক্ষুর চাষ করা হয়। সেইসব নধরকান্তি সবুজ রসে ভরপুর ইক্ষু-শরীর দেখলে যে কেউ মোহিত হয়ে যায়। মৃদুমন্দ বাতাসে সেই ইক্ষুগুলো এমন মধুর ভঙ্গিতে শরীর দোলায়, যা দেখলে প্রথমেই মনে আসে সুন্দরীশ্রেষ্ঠা প্রশিতি রাজনর্তকীদের কথা। সেই দিকেই চলছে রথ।

কিন্তু সেই পথে এগুলে আগে পেরুতে হয় সব্জি-উদ্যান। এই কথাটি মনে ছিল না শ্রীরামশর্মার। মনে থাকার কথাও নয়। এমনিতেই সেই অংশটিকে তিনি কখনো নিজের উদ্যানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে গণ্য করেন না। তিনি নিজে কালে-ভদ্রে পা রাখেন সেখানে। দ্বিতীয়ত এখন পাশে বসে আছে ঊর্ণাবতীর মতো অপ্সরা, যে কিনা তার স্পর্শকেলীকে অবাধে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে মধুর হাসি ওষ্ঠে নিয়ে। এই রকম পরিস্থিতিতে কোনো সমর্থ পুরুষের মন কি অন্যদিকে যেতে পারে? তাই ঊর্ণাবতী যখন নিজের কনকচাঁপা তর্জনি উঁচিয়ে উচ্চস্বরে বলে ওঠেÑ ওটা কী? সব্জি-উদ্যান বুঝি? ইস কী সুন্দর! আমি এখানে নামব!- তখন তার কথা শুনে কিছুণ হতভম্বের মতো তাকিয়ে থাকতে হয় শ্রীরামশর্মাকে। ঊর্ণাবতীর মতো কোনো উদ্ভিন্নযৌবনা পরমাসুন্দরী নারী পুষ্পোদ্যানের কথা না ভেবে সবজির তে দেখে যে রথ থামিয়ে দিতে পারে, এমন কথা কস্মিনকালেও মনে উদয় হয়নি শ্রীরামশর্মার। বিশেষ করে এমন প্রাগঅভিসার লগ্নে। কিন্তু শ্রীরামশর্মার ধাতস্থ হয়ে উঠতে যেটুকু সময় লাগে, সেই সময়ের মধ্যেই রথ ছেড়ে সবজি ক্ষেতের মধ্যে নেমে পড়ে ঊর্ণাবতী। বাধ্য হয়ে নামতে হয় তাকেও।

সবজির েেতর মধ্যে কিশোরী এক বহুবর্ণা প্রজাপতির মতো ছুটে বেড়াচ্ছে ঊর্ণাবতী। কখনো বাতিঙ্গন গাছের পাশে দাঁড়িয়ে পড়ছে, কখনো অলাবুর জাংলার নিচে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে, কখনো গিয়ে হাত বোলাচ্ছে কুষ্মাণ্ডের গায়ে। আবার কখনো ছুটে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে বঙ্গাসোনা ফুলের(বকফুল) কাণ্ডের নিচে।   তে পরিচর্যারত গোলগোমী মেয়েরা মুখে হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তাদের দৃষ্টিতেও মুগ্ধতা। কোনো মানবী যে এমন সৌন্দর্যের অধিকারিনী হতে পারে, তা তারা নিজেরা নারী হয়েও কোনোদিন কল্পনা করতে পারেনি। সেই গোলগোমীদের কাছে হাসিমুখে এগিয়ে যায় ঊর্ণাবতী। তাদের সাথে কথা বলতে শুরু করে। এই সময় বাধ্য হয়েই কিছুটা দূরে দাঁড়াতে হয় শ্রীরামশর্মার। কারণ, ক্রীতদাস বা দাসীদের, অন্তত দিনের আলোতে, অত নৈকট্যে আসার সুযোগ দান করাটা শাসনকার্যের জন্য সুফলদায়ক নয়। তার পরিবারের কোনো সদস্য গোলগোমীদের সাথে এমন ঘনিষ্টভাবে বাক্যালাপ করার সাহসই পাবে না। অন্তত শ্রীরামশর্মার সামনে তো নয়-ই। কিন্তু ঊর্ণাবতীর কথা স্বতন্ত্র। তার জন্য এখানে সবকিছুই বৈধ। তাই মনে মনে অসহিষ্ণু হয়ে ঊঠলেও শ্রীরামশর্মাকে মুখে হাসি নিয়েই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। গোলগোমী মেয়েরাও যেন বুঝতে পেরেছে, এই যুবতীর সন্তুষ্টিতেই তাদের প্রভুর সন্তুষ্টি। তাই তারাও অন্য কাজ ফেলে ঊর্ণাবতীকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকাটাকেই আপাতত প্রধান কাজ ধরে নিয়ে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঊর্ণাবতী অবশ্য এই বৃত্তের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকেও ভুলে যায়নি শ্রীরামশর্মার কথা। সে একটু পরপরই বৃত্তের মেয়েদের পাশ দিয়ে গ্রীবা বাড়িয়ে প্রেমপূর্ণ দৃষ্টি নিপে করছে শ্রীরামশর্মার দিকে।

হঠাৎ মৃদু একটা চিৎকার ভেসে আসে। সেদিকে তাকায় সবাই। পপীপ। পাশের নালা থেকে ঘড়ায় জল ভরে আনছিল সব্জির গোড়ায় সিঞ্চনের জন্য। জলের ঘড়াটা তার ছোট্ট দেহের তুলনায় বেশ বড়ই বলতে হবে। সেটাকেই কাঁধে তুলে নিয়ে বহু কষ্টে এক পা এক পা করে জল আনছিল পপীপ। কিন্তু শেষরা হয়নি। ঘড়াসমেত নিজে আছড়ে পড়েছে ক্ষেতেমাটিতে।

মাটিতে পড়ে থাকা পপীপের দিকে এগিয়ে যায় জনা দুই গোলগোমী। কিন্তু তাদের পেছনে ফেলে দমকা বাতাসের মতো একছুটে পপীপের কাছে পৌঁছে যায় ঊর্ণাবতী। হাত ধরে টেনে বসায় শিশুটিকে। হা হা করে ছুটে আসেন শ্রীরামশর্মা। ঊর্ণাবতীর কী মাথা খারাপ হয়েছে! এমন একটা অসুর গোত্রের সন্তানকে সে স্পর্শ করে বসেছে! শ্রীরামশর্মার সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে পপীপের ওপরে। কাছে গিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলেনÑ এই অসুরনন্দনকে কে এখানে কাজ করতে বলেছে?

সবজি-উদ্যানের দ্বারপ্রহরী ষাষ্ঠাঙ্গে প্রণিপাত করে প্রভুকে- প্রভু আপনার নির্দেশেই এই শিশুটিকে এখানে কাজ দেওয়া হয়েছে! কিন্তু শিশুটি দারুণ অশক্ত। এতটুকু জলও সে বইতে পারে না।

শ্রীরামশর্মা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তার আগেই ঝংকার শোন যায় ঊর্ণাবতীর কণ্ঠেরÑ এতটুকু শিশুকে এমন কঠিন কাজ দিয়ে রেখেছেন! আপনার কি হৃদয়ে দয়া-মায়া নেই!

ঊর্ণাবতীর এই কথা যেন চপেটাঘাত করে শ্রীরামশর্মাকে। তিনি কোনো রকমে সম্মান বাঁচানোর জন্য দ্বাররীকে উদ্দেশ্য করে বলেন- বালকটিকে তাদের থাকার জায়গাতে নিয়ে যাও! আর ওর বাপকেও ডেকে বলো সে যেন ছেলেকে একটু পরিচর্যা করে। আজকে ওদের পিতা-পুত্র দুজনারই কোনো কাজ করতে হবে না।

ঊর্ণাবতী তবু বালকের কাছ থেকে সরে না। জিজ্ঞেস করে- তোমার নাম কী বাছা?

প্রশ্ন করার সময় বুক কাঁপছিল ঊর্ণাবতীর। যদি পপীপ বলে ফেলে যে সে তাকে চেনে, তাহলেই সর্বনাশ! কিন্তু মল্ল চমৎকারভাবে শিখিয়ে-পড়িয়ে রেখেছে পপীপকে। সে যে ঊর্ণাবতীকে চিনতে পেরেছে, এমন কোনো লণ প্রকাশ পায় না তার আচরণে। সে মাথা নিচু করে ঊর্ণাবতীর প্রশ্নের উত্তরে নিজের নাম জানায়- পপীপ।
তোমার বাবার নাম?
বট্যপ।
তোমাদের দেশ কোথায়?
নিজেকে আর সামলে রাখতে পারেন না শ্রীরামশর্মা। একটু রূঢ়কণ্ঠেই বলেনÑ যথেষ্ট হয়েছে ঊর্ণাবতী। এমন একটা অসুর অনার্য গোষ্ঠীর সন্তানের কুল-ঠিকুজি না জানলেও তোমার চলবে।

এই একটাই শুধু ছন্দপতন। বাদবাকি সারাটা দিন খুবই চমৎকার কাটে শ্রীরামশর্মার। ঊর্ণাবতীও যেন সবজি উদ্যানের বালকটিকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণে একটু লজ্জিত। শ্রীরামশর্মার সুন্দর মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য একটু যেন অনুশোচনাতেও ভুগছে। তাই সে পুষিয়ে দিতে চায় শ্রীরামশর্মার এই মানসিক তিটুকু। শ্রীরামশর্মা তার শরীরের সাথে সেঁটে এলে সে-ও নিজেকে আরো সংলগ্ন করে দিতে চায় শ্রীরামশর্মার শরীরের সঙ্গে। কথা বলতে বলতে অন্যমনস্কতার ভান করে শ্রীরামশর্মা তার কদলীবৃরে মতো উরু, হরিণীগ্রীবার মতো কোমর, এমনকি কখনো কখনো সমুদ্র-শঙ্খের মতো স্তনে কাঁপা কাঁপা হাত ছোঁয়ালেও সেই হাতকে শাসন-বারণ কিছুই করে না। মোটকথা চমৎকার স্বপ্নের মতো কাটে শ্রীরামশর্মার দিনটি।

এখন রাত।
নৈশভোজপর্ব শেষ হয়েছে। কত যে চর্ব চষ্য লেহ্য পেয়-র আয়োজন করে রেখেছিলেন শ্রীরামশর্মা। কিন্তু দেখা গেল ঊর্ণাবতী এতই পরিমিত আহারী যে তাকে স্বল্পাহারী বলাই শ্রেয়। একে তো সে কোনো আমিষ স্পর্শ করে না, তদুপরি ঘৃতান্ন এবং মিষ্টান্ন থেকেও নিজের হাত গুটিয়ে রাখে। অল্প একমুষ্টি সরুচালের ভাত, কিছু নিরামিষ তরকারি, কয়েক টুকরা ফল দিয়েই শেষ হয় তার রাতের আহার। সঙ্গীরা অবশ্য খাওয়ার আসন থেকে সহজে নড়েনি। তারা সব রকমের সুস্বাদু খাদ্যে উদরপূর্তি করেছে। খাওয়ার প্রতিযোগিতাতেও নেমেছিল কেউ কেউ। তাদের যুক্তি, আজকের সুখাদ্য আসলে দেবী ঊর্ণাবতীর প্রসাদ। সেই প্রসাদের অবমূল্যায়ণ করে কেউ পাপের ভাগী হতে সম্মত নয়। যুক্তি শুনে মনে মনে হাসেন শ্রীরামশর্মা। আবার মনে মনে খুশিও হন খাদ্যগুলির সদ্গতি হতে দেখে। তদুপরি রন্ধনের প্রশংসা এবং তার আতিথেয়তার প্রশংসায় সকলেই পঞ্চমুখ হয়ে উঠলে একটু গর্বও অনুভব করেন তিনি।

এখন রাত।
ঊর্ণাবতীর সঙ্গিনীরা চলে গেছে তাদের জন্য নির্দিষ্ট কক্ষে। ঊর্ণাবতীর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে এই প্রাসাদতুল্য অট্টালিকার সব চাইতে সুন্দর এবং আরামদায়ক কটি। সচরাচর শ্রীরামশর্মা নিজে মাঝে মাঝে ব্যবহার করেন এই শয়নকটি। একবার কামরূপের মহারাজা স্বয়ং আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন শ্রীরামশর্মার প্রাসাদে। মহারাজাকে থাকতে দেওয়া হয়েছিল এই কক্ষে। তিনি পরদিন প্রাতঃকালে বিদায় নেবার সময় বলেছিলেন যে, এমন সুসজ্জিত এবং আরামদায়ক শয়নক তার প্রাসাদে একটিও নাই। তিনি এই কে যে তৃপ্তিময় নিদ্রাসুখ উপভোগ করতে পেরেছেন, তা বহুদিন তার মনে থাকবে।

সেই ক আজ ধন্য হচ্ছে ঊর্ণাবতীর নিশিযাপনের আশ্রয় রূপে।
রাত্রি এগিয়ে চলে গভীরতার দিকে। আর কামাবেগে অস্থিরতা বেড়ে চলে শ্রীরামশর্মার। তিনি ভাবছেন কোনো-না-কোনো সংকেত আসবে ঊর্ণাবতীর কাছ থেকে। কিন্তু অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও কোনো সংকেত না পেয়ে নিজেই এগিয়ে চললেন শ্রীরামশর্মা। কদ্বারে এসে দেখলেন ভেতর থেকে দ্বার রুদ্ধ। নিদারুণ হতাশায় ছেয়ে গেল তার হৃদয়। হায় ঊর্ণাবতী এই ছিল তোমার মনে! ভগ্নহৃদয়ে সেই করে দ্বারে কিছুণ দাঁড়িয়ে রইলেন শ্রীরামশর্মা। একবার ইচ্ছা হলো দুয়ারে মৃদু করাঘাত করেন। কিন্তু নিজেকে সামলে নেন। কামনার আগুনে যতই তিনি পুড়তে থাকুন না কেন, মদন দেবের শরাঘাতে যতই তিনি জর্জরিত হন না কেন, ঊর্ণাবতী তাকে অনাহুত মনে করলে তিনি কিছুতেই তার সকাশে যেতে পারেন না। তার আভিজাত্য, তার অবস্থান কিছুতেই তাকে এমন কাজ করতে দেয় না। কামতপ্ত কম্পমান শরীর নিয়ে তিনি আরো কিছুণ দাঁড়িয়ে থাকেন সেই অলঙ্ঘনীয় দরজার সামনে। তারপর একটি দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে ফিরে যাওয়ার উদ্যোগ করেন।

ঠিক তক্ষুণি তার শরীরে এসে ঝাপ্টা মারে মৃদু একটু বাতাস, খুব মৃদু আলোর রেখা এসে পড়ে গায়ের ওপর, আর অপার্থিব একটি সুগন্ধ আছড়ে পড়ে তার নাসারন্ধ্রে। তিনি চমকিত হয়ে দেখতে পান, দুয়ার অবারিত হয়েছে, কপাটে হাত দিয়ে অপূর্ব ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ঊর্ণাবতী। মনে হয়, এতণে পুনরায় নিজের জীবন ফিরে পেয়েছেন শ্রীরামশর্মা। আহ্বানের ভঙ্গিতে হাত বাড়িয়ে দেয় ঊর্ণাবতী। শ্রীরামশর্মা হাত বাড়িয়ে দেন সেই মৃণাল দুই বাহুর দিকে। তার হাতের স্পর্শ পাওয়ামাত্র ঊর্ণাবতীর নৃত্যপটিয়সী দেহ সুললিত ছন্দে চলে আসে শ্রীরামশর্মার দুই বাহুর মধ্যে। মুহূর্ত পরেই শ্রীরামশর্মা টের পান, তার বুকের সাথে লেপ্টে রয়েছে কুসুমের চেয়েও কোমল একটি অপো-থরথর নারীদেহ।

উর্ণাবতীর শরীরকে নিজের বসংলগ্ন রেখেই কে প্রবেশ করেন শ্রীরামশর্মা। শয্যা প্রস্তুত। শুধু প্রস্তুতই নয়, শয্যা যেন আহ্বান জানাচ্ছে তাদের। দীপাধানে একটি মাত্র ঘৃতের প্রদীপ। সেটি ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিতে চায় ঊর্ণাবতী। কিন্তু বাধা দেন শ্রীরামশর্মা। আদর-কামনাময় কণ্ঠে বলেনÑ থাকুক না একটি প্রদীপ! আমি তোমাকে অবলোকন করতে চাই! অনাবৃত ঊর্ণাবতীর লীলায়িত যৌবন চোখে দেখে দৃষ্টিকে ধন্য করতে চাই। আমি তোমাকে অবলোকন করতে চাই প্রিয়ে!

অবলোকন না কি দৃষ্টিলেহন? রিনরিন হাসির সাথে বেজে ওঠে ঊর্ণাবতীর কণ্ঠস্বর।
হেসে ওঠেন শ্রীরামশর্মাও। সকল ধরনের দ্বিধা-জড়তা-লজ্জাবোধ অন্তর্হিত হয়ে গেছে দুজনের মন থেকে। এখন শুধু পরস্পরকে প্রদানের জন্য উন্মুখ পরস্পর। শ্রীরামশর্মা বলেন- আচ্ছা! তোমার কথাই ঠিক। আমি দৃষ্টিলেহন করতেই চাই তোমাকে। শুধু দৃষ্টিলেহনই নয়, সর্বপ্রকারে লেহন করতে চাই তোমাকে।

তীব্র আবেগে শ্রীরামশর্মা জড়িয়ে ধরেন ঊর্ণাবতীকে। মুখ ঘষতে থাকেন ঊর্ণাবতীর বুকে। হাত তার বিচরণ করে ঊর্ণাবতীর শরীরের যত্রতত্র। তীব্র শীৎকারে নিজেই কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকেন শ্রীরামশর্মা। তার নিজের গতমান যৌবন সমস্ত শক্তি নিয়ে জেগে উঠেছে। তিনি পাঁজাকোলা করে ঊর্ণাবতীকে তুলে নিয়ে আছড়ে ফেলেন পুষ্পশয্যায়। শয্যায় একটি গড়ান দিয়ে এমন আহ্বানের ভঙ্গিতে কাত হয়ে আধাশোয়া-আধাবসা অবস্থান গ্রহণ করে ঊর্ণাবতী যে শ্রীরামশর্মার সমস্ত শরীরে আবার আগুন ধরে যায় দপদপ করে। তিনি প্রি টানে নিজের পরিধেয় বস্ত্র মোচন করতে থাকেন। সেদিকে তাকিয়ে থাকে ঊর্ণাবতী ঠোঁটে কামনাকাতর আহ্বানের হাসি নিয়ে। নিজেকে সকল পরিধেয় থেকে মুক্ত করা শেষ হলে শয্যার দিকে এগিয়ে যান শ্রীরামশর্মা। সেই সময় ঊর্ণাবতী বলে ওঠেÑ আমার একটি প্রার্থনা রয়েছে। বলুন, আপনি পূর্ণ করবেন আমার প্রার্থনা?
একটু থমকে গিয়ে রামশর্মা জানতে চান- কী তোমার প্রার্থনা?

আগে প্রতিজ্ঞা করুন যে আপনি পূর্ণ করবেন আমার প্রার্থনা!
এই সময়ে বিলম্ব কী সহ্য হয়! শ্রীরামশর্মা বলেনÑ তোমাকে অদেয় আমার কিছুই নাই প্রিয়ে।   আমার সাধ্যের মধ্যে যদি থাকে, তাহলে অবশ্যই পূর্ণ হবে তোমার প্রার্থনা। বলো কী চাও তুমি?
আমি চাই আপনার সবজি-উদ্যানের নেই বালকটিকে।
কোন বালক?
ঐ যে সেই বালকটি, যার নাম পপীপ।
স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ে শ্রীরামশর্মার- মাত্র একটি ক্রীতদাস বালককে চাও তুমি! একাধিক ক্রীতদাস চাইলেও দিয়ে দিতাম আমি তোমাকে। যাও দিয়ে দিলাম তোমাকে। কাল প্রাতঃকালে তোমার মন্দির প্রত্যাবর্তনের সময় অন্যান্য উপহারসামগ্রীর পাশাপাশি ঐ বালকটিকেও দিয়ে দেওয়া হবে তোমার সঙ্গে।
তবু কথা শেষ হয় না ঊর্ণাবতীর। বলেÑ আমার অপরাধ মার্জনা করবেন দ্বিজশ্রেষ্ঠ! আমি জানি আপনার মুখের কথাই যথেষ্ট। তবু আমি চাই, আপনি একটি লিখিত অনুজ্ঞা প্রদান করুন!
এই সময়ে এই আব্দার! মনে মনে যথেষ্ট অসহিষ্ণু হয়ে ওঠেন শ্রীরামশর্মা। বলেনÑ এখন কোথায় পাব লিখার সামগ্রী।
চোখ নাচায় ঊর্ণাবতী- ঐ যে আপনার সুদৃশ্য ত্রিপদীর ওপরে রাখা আছে লিখার যাবতীয় সামগ্রী।
শ্রীরামশর্মা এগিয়ে যান ত্রিপদীর দিকে। খাগের কলম তুলে নিয়ে খস খস করে কাঁপা কাঁপা অরে কিন্তু দ্রুত লিখে ফেলেন পপীপের হস্তান্তরপত্র। তুলে দেন ঊর্ণাবতীর হাতে। বলেন- এখন তুমি সন্তুষ্ট?
হ্যাঁ। তবে পুরোপুরি নয়। হস্তান্তরপত্রে চোখ বুলিয়ে বলে ঊর্ণাবতী।
আর কী করতে হবে?
একটু সংশোধন করতে হবে এই হস্তান্তরপত্রটি।
সে আবার কী?
এই যে আপনি লিখেছেন, ক্রীতদাস বালক পপীপকে বিনামূল্যে হস্তান্তর করছি ঊর্ণাবতীর কাছে।
শ্রীরামশর্মা কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে বলেন- হ্যাঁ। কিন্তু তাতে ভুলটা কোথায়?
ঊর্ণাবতী হাসে- আপনি কি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বালকটিকে হস্তান্তর করছেন?
অবশ্যই।
মূল্য নিচ্ছেন না? আমি কি কোনো মূল্য পরিশোধ করছি না?
ঊর্ণাবতীর এমন রহস্যময় বাক্যের কোনো অর্থ উদ্ধার করতে পারেন না শ্রীরামশর্মা। বোকার মতো তাকিয়ে থাকেন তার মুখের দিকে। ঠোঁটের রহস্যময় হাসি আরো পুরুষ্ট হয় ঊর্ণাবতীর। দুই হাত তার এগিয়ে আসে নিজের বরে দিকে। দুই হাত ধীরছন্দে অবারিত করে বরে বসন। সেই বসৌন্দর্য চোখে পড়ামাত্র আবার প্রবল কামে কেঁপে ওঠে শ্রীরামশর্মার সমস্ত দেহ। তার দৃষ্টি যেন পুরোপুরি আটকে গেছে ঊর্ণাবতীর উন্মুক্ত বক্ষে। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজের অনাবৃত বুকের দিকে একবার তাকায় ঊর্ণাবতী। আবার বলে- আমি কি কোনো মূল্যই পরিশোধ করছি না?
হেসে ওঠেন শ্রীরামশর্মা। হস্তান্তরপত্রটি হাতে নিয়ে ‘বিনামূল্যে’ শব্দটি কেটে দিয়ে লেখেন ‘যথাযথ মূল্যে’। এগিয়ে দেন ঊর্ণাবতীর দিকে- একবার ঠিক আছে?

হস্তান্তরপত্রটি পাঠ করে ঊর্ণাবতী। যত্ন করে রেখে দেয় মাথার দিকের একটি দীপাধারের তলায়। তারপর হঠাৎ ত্বরিতে দুই হাত ধরে শ্রীরামশর্মার। সেই হাত দুটিকে স্থাপন করে নিজের বুকের ওপর। মুহূর্ত পরেই তার দেহের সম্পূর্ণ সত্ত্ব-স্বামীত্ব আজকের সারারাত্রির জন্য চলে যায় শ্রীরামশর্মার অধিকারে।              

[চলবে]

বাংলাদেশ সময় ১৪৩০, ডিসেম্বর ২৫, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad