ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

বছরের সেরা ১০ নন-ফিকশন : টাইমের চোখে

আহমেদ জুয়েল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১০
বছরের সেরা ১০ নন-ফিকশন : টাইমের চোখে

বিখ্যাত ‘টাইম’ ম্যাগাজিন সম্প্রতি এ বছরের সেরা ১০টি নন-ফিকশন ইংরেজি বইয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এইসব বইয়ের বিষয় যেমন চমকপ্রদ ও বিচিত্র, লেখকরাও তেমনি গুণী।

বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য এটি তুলে ধরেছেন আহমেদ জুয়েল


এক. আনব্রোকেন : লরা হিলেনব্রান্ড

লুইস জাম্পিরিনি। বিশ শতকের অন্যতম দৌড়বিদ। ১৯৩৪ সালে মাত্র ৪.২১ মিনিটে তিনি এক মাইল পথ অতিক্রম করে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন। অবশ্য ১৯৫৯ সালে আমেরিকান এই দৌড়বিদের রেকর্ডটি ভেঙেছিলেন ডেনিস হ্যানসেন। ওই রেকর্ডই তাকে এনে দিয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির স্কলারশিপ। এজন্য তিনি ১৯৩৬ সালের অলিম্পিকে যুক্তরাষ্ট্রের দলে স্থান পেয়েছিলেন। প্রশান্ত মহাসাগরের জলে শুধু একটি কাঠের গুঁড়ির ওপর ৪৭ দিন ভেসে থাকার রেকর্ডও আছে তার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানিদের হাতে যে আমেরিকানরা বন্দি হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে আজ কেবল তিনিই বেঁচে আছেন। বন্দি অবস্থায় ক্ষুধা আর অমানবিক নির্যাতনের মধ্যেও তিনি বেঁচে ছিলেন। তার বয়স এখন ৯৩ বছর।

‘আনব্রোকেন’ বইয়ের লেখক লরা হিলেনব্রান্ড এই লুইস জাম্পিরিনির বৈচিত্র্যময় অভিজাত জীবন দক্ষতার সঙ্গে বর্ণনা করেছেন। সঙ্গে মিশিয়েছেন রোমাঞ্চ। আমেরিকান লেখিকা লরা হিলেনব্রান্ডের প্রথম বই ‘সিবিস্কুট’। বইটি ব্যাপক আলোচিত। এটি তার দ্বিতীয় বই।


দুই. দ্য এম্পেরর অব অল ম্যালাডিস : সিদ্ধার্থ মুখার্জি

এই বইটিও জীবনকাহিনী নির্ভর। তবে তা সাধারণ জীবন নয়। ক্যান্সারের সঙ্গে বিখ্যাত মানুষদের বসবাস, তাদের জীবন ও মৃত্যু। এজন্যই বইটির নাম রাখা হয়েছে রোগীদের সম্রাজ্য। সিদ্ধার্থ মুখার্জি নিজেই একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ও গবেষক। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে খ্যাত ক্যান্সার রোগীদের জীবন ও মৃত্যু থেকে উপাদান সংগ্রহ করে লেখক সাজিয়ে তুলেছেন এই বইয়ের কাহিনী।

বইটির শুরুতে ক্যান্সার সম্পর্কে প্রাচীন ইতিহাসও বর্ণনা করা হয়েছে। এরপর ১৮ শতকের মধ্যভাগ থেকে ক্যান্সার প্রতিরোধে চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা ও সাফল্যের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। একইভাবে বিশ শতকের  মধ্যভাগে মেরি লাসকার ও সিডনি ফারবার নামের দুই আইনজীবীর ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সম্মিলিত আন্দোলনের কথা এবং মুখার্জির একাধিক রোগীর জীবনও উঠে এসেছে কাহিনীর মধ্যে। এটি সফল একটি কাজ। যে কোনো দক্ষ জীবনীকারের চেয়ে যে মুখার্জি কোনো অংশে কম নন, তা এ বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে। মুখার্জি তার বিষয়ের নিরাবেগ গবেষণা ও এক দুর্দান্ত মোহিনীশক্তি সৃষ্টি করেছেন। তিনি বর্তমানে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক। ওই ইউনিভার্সিটির ক্যান্সার সেন্টারে তিনি ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা করেন। বাস করেন নিউইয়র্কে।

তিন. লেটস টেক দ্য লং ওয়ে হোম : গেইল কল্ডওয়েল

যখন প্রথম তাদের দেখা হয়, গেইল কল্ডওয়েল তখন বোস্টন গ্লোব-এর একজন বই সমালোচক ছিলেন। আর ওই সময় প্রকাশ হয়েছিল ক্যারোলিন নাপের ‘ড্রিংকিং : এ লাভ স্টোরি’। লেখক আর সমালোচক হিসেবে দুজনের দুই দিকে অবস্থান থাকলেও তারা ভালো বন্ধু হয়ে ওঠেন। মাদকাসক্তি থেকে তারা নিজেদের মুক্ত করে তোলেন। এরপর থেকেই দুজনে পোষা কুকুর নিয়ে সময় কাটাতে থাকেন। প্রতিদিনই তারা একসঙ্গে রাস্তার পাশে গাছের ছায়াপথে হাঁটাহাঁটি করেন, গল্প করেন নদীর ধারে মৃদুমন্দ বাতাসে। যখন কল্ডওয়েল একটি বাড়ি কেনেন, ন্যাপ তার সঙ্গে বাস করা শুরু করেন। এরপর ন্যাপ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। কাহিনীটি হৃদয়বিদারক। কিন্তু বিরক্তিকর আবেগ নেই। সমালোচকরা বলেছেন, বইটি পূর্ণবয়স্ক দুই নারীর পরিপক্ক বন্ধুত্বের ক্ষমতা ও সৌন্দর্যের একটি দলিল।

আমেরিকান লেখিকা গেইল কল্ডওয়েল দ্য বোস্টন গ্লোবের প্রধান বই সমালোচক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৮৫ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত। ২০০১ সালে তিনি পুলিৎজার পুরস্কার জেতেন। বাস করেন কামব্রিজে।

চার. দ্য লাস্ট বয় : জেন লেভি

জেন লেভি যখন তরুণী ক্রীড়া-লেখক, তখন আমেরিকার বিখ্যাত বেসবল খেলোয়াড় মিক্কি ম্যানটেলের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। ওই সময় মিক্কি ছিলেন মধ্যবয়সী মাদকাসক্ত। এরপর লেভির সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই ম্যানটেলের দীর্ঘ বায়োগ্রাফি লিখেছেন লেভি। বইটিতে তিনি মিক্কির নিষ্পাপ চেহারা আর অ্যাথলেটিক প্রতিভার কথা তুলে আনার চেষ্টা করেছেন।
 
জেন লেভি ওয়াশিংটন পোস্ট-এর পদকপ্রাপ্ত সাবেক ক্রীড়া-লেখক। তার বিখ্যাত কমিক উপন্যাস ‘স্কুইজ প্লে’। ২০০৫ সালে তার বই ‘স্যানডি কৌফাক্স’ বেস্ট সেলারের তালিকায় উঠে আসে। বাস করেন ওয়াশিংটনে। এটি তার প্রকাশিত সর্বশেষ বই।    

পাঁচ. ব্রিলিয়ান্ট : জেন ব্রোক্স

কৃত্রিম আলোর বিবর্তন নিয়ে বইটি লেখা। বলতে গেলে লেখক এখানে কৃত্রিম আলোর ইতিহাসই তুলে ধরেছেন। গ্যাস লাইট থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের বৈদ্যুতিক বাতি পর্যন্ত তিনি ইতিহাস টেনেছেন। ছোট্ট এই ইতিহাসকে তিনি চোখধাঁধানো মহাকাব্যিক কাহিনীতে পরিণত করেছেন। বাদ যায়নি নাবিকদের পথ দেখানোর লাইটহাউস বা বাতিঘরও। আমেরিকান এই লেখিকা নন-ফিকশন লেখার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।

ছয়. ওয়ার : সেবাস্টিয়ান জাঙ্গার

দুটি জাতি পরস্পরকে পরাজিত করার জন্য যুদ্ধ করে না। তারা পরস্পরকে হত্যার আনন্দে মেতে ওঠে। সেবাস্টিয়ান জাঙ্গার তার এ বইতে সে বিষয়টিই তুলে ধরেছেন। সাংবাদিক হিসেবে আফগান যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী তিনি। যুদ্ধের রাজনীতি বাদ দিয়ে একজন সাধারণ সৈনিকের দৃষ্টিতে তিনি যুদ্ধের এই কাহিনী বর্ণনা করেছেন। তুলে ধরেছেন আমেরিকান সৈন্যদের দুঃখ-বেদনা-ভালোবাসা। সেই সঙ্গে তুলে ধরেছেন সাধারণ মানুষের কথা।

বইটিকে তিনি ভয়, হত্যা ও ভালোবাসা নামে তিন ভাগে লিখেছেন। এর আগে তার সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বইয়ের নাম ‘দ্য পারফেক্ট স্টর্ম : এ ট্রু স্টোরি অব মেন এগিনেস্ট দ্য সি’।

সাত. লাইফ : কেইথ রিচার্ডস

সব ধরনের প্রত্যাশিত চরিত্র আর গল্প খুঁজে পাওয়া যায় কেইথ রিচার্ডের স্মৃতিকথায়। ব্রিটিশ গিটারিস্ট রিচার্ডস ‘দ্য রোলিং স্টোন’ ব্যান্ডের সঙ্গে জড়িত। এই ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট তিনি। রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনের তালিকা অনুযায়ী সর্বকালের ১০ গিটারিস্টের মধ্যে তিনি একজন। তার কালজয়ী গান ‘আই নিড এ লাভ টু কিপ মি হ্যাপি’। এটিই সম্ভবত তার জীবনের শ্রেষ্ঠ গান। গানই তার ভালোবাসা। তার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মাদক, অস্ত্র ছাড়াও তিনি তুলে ধরেছেন অজানা অনেক স্মৃতি।

আট. হেলহাউন্ড অন হিজ ট্রেইল : হ্যাম্পটন সাইডস

১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছিলেন সর্বকনিষ্ঠ নোবেল শন্তিজয়ী আফ্রিকান-আমেকিান সিভিল রাইটস মুভমেন্টর নেতা মার্টিন লুথার কিং। ওই দিন তিনি লরেইন মোটেলের ৩০৬ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছিলেন। যখন তিনি ওই হোটেলের ব্যালকনিতে হাঁটছিলেন তখন কী ঘটনা ঘটেছিল আর তারপর পরেই কী ঘটেছিল, সেইসব ঘটনা নিয়েই বইটি লেখা। হ্যাম্পটন সাইডস আমেরিকান ইতিহাসবিদ ও সাংবাদিক।

নয়. কিওপেট্রা : স্টেসি স্কিফ

বইটি পড়ে পাঠকের মনে হবে, হায় গ্রিসের রানী লৌহমানবী কিওপেট্রা সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানতাম না! বইটি রানী কিওপেট্রার জীবন ও ইতিহাস নিয়ে লেখা হয়েছে। রানী সম্পর্কে যোগ করা হয়েছে নতুন তথ্য ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন গল্প। পুলিৎজার পুরস্কারজেতা এই লেখিকা বেশ বিশ্বাসযোগ্যভাবেই তুলে ধরেছেন ইতিহাস। তবে কিওপেট্রা গ্রিস নয়, মিসরের রানী ছিলেন, এমন ধারনায় তিনি চপেটাঘাত করেননি। তিনি শুধু ব্যাখ্যা করেছেন, আমরা কীভাবে তাদের পেয়েছি। ২০০০ বছর আগের একটি আদর্শ প্রতিবেশ তৈরি করে তিনি কিওপেট্রা সম্পর্কে যাবতীয় গল্প ও স্বদেশপ্রেমের কথা সাজিয়ে তাকে তুলে ধরেছেন। স্টেসি স্কিফ ২০০০ সালে পুলিৎজার পুরস্কার জেতেন। আমেরিকান এই লেখিকা দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের অতিথি কলামিস্ট।

দশ. ইউ আর নট এ গ্যাজিট : জ্যারন ল্যানিয়ার

তথ্যপ্রযুক্তির জগতে জ্যারন ল্যানিয়ার একজন মিশ্র মানুষ। একই সঙ্গে তিনি এ বিষয়ে পাইওনিয়ার এবং সংশয়বাদী। তিনি কিংবদন্তির কম্পিউটার বিজ্ঞানী। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে শুরুর দিকের কঠিন কাজগুলোই তিনি করেছেন। কিন্তু তিনি ওয়েব দুই দশমিক শূন্যের পথ থেকে সরে এসেছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন সামাজিক গণমাধ্যম আজ আমাদের অস্তিত্ব এবং সম্পর্ক নিয়ে ব্যবসা করছে। উদ্দেশ্যমূলক ও প্রয়োজনীয় কাজে সফটওয়্যারগুলো কীভাবে কাজ করে সে বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি তিনি দেখিয়েছেন এগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভুল ব্যবহার হচ্ছে। আর মানবমস্তিষ্কের দক্ষতা ও ক্ষমতা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। জ্যারন ল্যানিয়ার একই সঙ্গে কম্পিউটার বিজ্ঞানী, কম্পোজার, ভিজুয়াল আর্টিস্ট ও লেখক। এ বছর টাইমের প্রকাশ করা পৃথিবীর ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে তিনি একজন।

বাংলাদেশ সময় ২৩০০, ডিসেম্বর ২৮, ২০১০ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।