ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (২১) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (২১) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন

১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিমাল ফার্ম’।
___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

২০তম কিস্তির লিংক
___________________________________

উইনস্টন বিষয়টি ভালোই জানে। সে হাসলো, অনুকম্পার হাসি, তবে মনে হলো না তার কথা বলার দরকার আছে। সাইম কালচে রুটিতে আরও একটা কামড় বসালো, কিছুটা চিবিয়ে নিয়ে ফের শুরু করল:

‘তুমি দেখছো না, নিউস্পিকের লক্ষ্যই হচ্ছে চিন্তার পরিধিটি ছোট করে আনা। আর এর মধ্য দিয়ে শেষমেষ আমরা চিন্তা অপরাধ সংঘটন আক্ষরিক অর্থে অসম্ভব করে দেব, কারণ তখন বিষয়টি প্রকাশের জন্য কোনও শব্দই থাকবে না। প্রয়োজন হতে পারে এমন প্রতিটি ধারণাই একটি মাত্র শব্দে ব্যক্ত হবে যার অর্থও কঠোরভাবে সংজ্ঞায়িত থাকবে আর এর সম্পূরক অর্থগুলো মুছে ফেলা হবে, ভুলে যাওয়া হবে। হবে নয়, একাদশ সংস্করণে আমরা এর থেকে আর খুব পিছিয়ে নেই। তবে প্রক্রিয়া চলবে আরও দীর্ঘ সময় ধরে, তোমার আমার মৃত্যুরও অনেক পরে পর্যন্ত। এটা স্রেফ আত্ম-শৃঙ্খলাবদ্ধতার প্রশ্ন, বাস্তবতা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন। তবে শেষ পর্যন্ত এর আদৌ কোনও প্রয়োজনও আর হবে না। ভাষা সঠিক হয়ে উঠলেই বিপ্লব সুসম্পন্ন হবে। নিউস্পিকই ইংসক আর ইংসকই নিউস্পিক’—এক ধরনের রহস্যাবৃত্ত সন্তুষ্টির উচ্চারণে কথাগুলো বলে গেল সে। ‘তুমি কি কখনও ভেবে দেখেছো, উইনস্টন, ২০৫০ সালের পর একটি মানুষও জীবিত থাকবে না যে আজ তুমি আমি যেই ভাষায় কথা বলছি তা বুঝতে পারবে। ’

‘কেবল মাত্র’—সন্দেহমাখা কণ্ঠে বলতে শুরু করেই থেমে গেল উইনস্টন।

তার ঠোঁটের আগায় যে কথাটি এসে জমেছিল তা হচ্ছে ‘কেবলমাত্র প্রোলরা ছাড়া’—কিন্তু সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করল, এ ভেবে যে, তার এই মন্তব্য নিশ্চিতভাবেই প্রথাসিদ্ধ হবে না। তবে সে ঠিক কী বলতে যাচ্ছিল তা দিব্যশক্তিতে বুঝে ফেলল সাইম।

‘প্রোলরা মানব সন্তান না’—অবজ্ঞামাখা উচ্চারণ তার। ‘২০৫০ সালের মধ্যে—হতে পারে তার আগেই, এই পুরনো ভাষার সকল বাস্তব জ্ঞানের সমাপ্তি ঘটবে। পুরনো সময়ের সকল সাহিত্য ধ্বংস করে দেওয়া হবে। চসার, শেক্সপিয়র, মিল্টন, বায়রন—এরা সবাই নিউস্পিক ভার্সনে টিকে থাকবেন, তবে তা কেবল ভিন্ন কিছুতে পরিবর্তীত হয়ে নয়, বরং বিতর্কিত কিছু বিষয়ের মধ্য দিয়ে, যাতে তারা অভ্যস্তও। এমনকি পার্টির সাহিত্য-কর্মও পাল্টে যাবে, স্লোগান পাল্টে যাবে। “স্বাধীনতা দাসত্ব” এমন একটি স্লোগান তুমি কিভাবে ধরে রাখবে যখন স্বাধীনতার ধারণাটিই আর থাকবে না? চিন্তার পুরো আবহটিই পাল্টে যাবে। বস্তুত, যতটুকু বুঝতে পারি, চিন্তা বলেই আর কিছু থাকবে না। প্রথা মানেই চিন্তাহীনতা—চিন্তার অপ্রয়োজনীয়তা। প্রথা মানেই অসচেতনতা। ’

হঠাৎই গভীর নিশ্চয়তায় উইনস্টনের মনে হলো, এ সময়েরই কোনও এক দিন সাইমকে বাষ্পায়িত করা হবে। সে অত্যন্ত ধীশক্তি সম্পন্ন। সে সবকিছুই একটু বেশিই আগে দেখে ফেলছে, সোজাসাপ্টা তা বলেও দিচ্ছে। পার্টি এ ধরনের মানুষ খুব একটা পছন্দ করে না। একদিন সে গুম হয়ে যাবে। আর তার চোখে মুখে তাই লেখা রয়েছে।

রুটি আর পনির গলধকরণ শেষ করল উইনস্টন। চেয়ারে একদিকে একটু বেঁকে গিয়ে কফির মগে চুমুক দিল। বামদিকে পেছনের টেবিলের লোকটি তখনও কর্কশ স্বরে তার অবিরাম অবিন্যস্ত কথা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক তরুণী, হতে পারে তার সেক্রেটারি, উইনস্টনের পেছনটাতে পেছন রেখে বসে, ভদ্রলোকের সব কথায় আগ্রহভরে অবিরাম সায় দিয়ে চলেছে। রিনরিনে নারী কণ্ঠের সে উচ্চারণের দু’একটা উইনস্টনের কর্ণকুহরে পসেছে—‘আমি মনে করি আপনিই ঠিক, আমি আপনার সাথে একমত’ ধরনের বাক্য। আর উল্টোদিকের বক্তা বকে যাচ্ছেন অবিরাম। মেয়েটি যখন কিছু বলছে তখনও থামছেন না। চোখের দেখায় লোকটিকে চেনে উইনস্টন, ফিকশন বিভাগে কোনও একটা গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন, তবে এটুকুর বাইরে কিছুই জানা নেই তার। বয়স ত্রিশের কাছাকাছি, মোটা গ্রীবা, বড় হা। মাথাটি ইষৎ হেলিয়ে রাখায় তার চশমা জোড়ায় যে আলো পড়েছে তাতে উইনস্টনের চোখে তার চোখ নয়—ধরা পড়ে আছে দুটো ব্ল্যাঙ্ক ডিস্ক। তবে কিছুটা ভয়ের বিষয় হচ্ছে, তার মুখ থেকে যে কথার ফল্গুধারা ছুটছিল তার মধ্য থেকে একটি শব্দও আলাদা করে বুঝতে পারা ছিল প্রায় অসম্ভব। মাত্র একটিবারের মত উইনস্টন ধরে ফেলেছিল তার কথা—‘গোল্ডেস্টেইনীয় তত্ত্বের পূর্ণাঙ্গ ও চূড়ান্ত অবসান’—আর সে কথা দ্রুতই আবার হারিয়ে গেল অন্যান্য অবোধ্য উচ্চারণে।

২২তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।