ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (৩১) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (৩১) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিমাল ফার্ম’।
___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

৩০তম কিস্তির লিংক
___________________________________

প্রোলদের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের বাড়িতে টেলিস্ক্রিনটিও নেই। সিভিল পুলিশ ওদের কম ঘাঁটায়। অপরাধী তৎপরতায় ভরা লন্ডন। ভূ-খণ্ডের মাঝেই চোর, ডাকাত, পতিতা, মাদকব্যবসায়ী, প্রতারক, বাটপারদের এক পূর্ণাঙ্গ ভূ-খণ্ড। কিন্তু এর সবকিছুই যেহেতু প্রোলদের নিজেদের মাঝেই ঘটে তাই এ নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই। নৈতিকতার সকল প্রশ্নে ওরা তাদের পুরুষানুক্রমিক ধারাই মেনে চলে। যৌনাচারের শুদ্ধিবাদ ওদের ওপর আরোপিত নয়। নির্বিচার যৌনাচারে নেই শাস্তির বিধান, বিবাহবিচ্ছেদে মানা নেই। আর এ কারণেই, প্রোলরা ধর্মীয় উপসনা করতে চাইলে তারও অনুমতি মেলে। ওদের ওপর সন্দেহের চোখ ঘোরপাক খায় না। ওদের জন্য পার্টির স্লোগানই হচ্ছে: ‘প্রোল আর পশুরা মুক্ত’।

নিচু হয়ে ঘায়ের জায়গাটি সাবধানে চুলকে নিলো উইনস্টন। এতে আবারও চুলকানি শুরু হয়েছে। বিপ্লবের আগের জীবন ঠিক কেমন ছিলো তা জানা অসম্ভব। আর সেই অসম্ভবেই বার বার ফিরে যাবেন আপনি। ড্রয়ার থেকে শিশুদের ইতিহাসের একটি পাঠ্যবই বের করে আনলো সে। বইটি মিসেস পারসন্সের কাছ থেকে ধার করে এনেছে। বই থেকে ডায়রিতে তুলতে শুরু করলো একটি অনুচ্ছেদ:
  
পুরোনো দিনগুলোতে (এতে লেখা হয়েছে), গৌরবান্বিত বিপ্লবের আগে, আজ যে লন্ডনকে আমরা চিনি তেমন সুন্দর নগর এটি ছিলো না। সে ছিলো অন্ধকার, নোংরা, দুর্বিসহ এক লন্ডন যেখানে কেউ কদাচই পর্যাপ্ত খেতে পেতো, শত শত এবং হাজার হাজার দরিদ্র মানুষের পায়ে জুতো ছিলো না, ঘুমানোর জন্য মাথার ওপর আচ্ছাদন ছিলো না। তোমাদের মতো ছোট ছোট শিশুরা দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করতো, কাজ কম হলে ক্রুর মনিবরা ওদের ওপর চালাতো অত্যাচারের চাবুক, ওদের গন্ধময় শক্ত রুটির টুকরো আর পানি ছাড়া কিছুই খেতে দিতো না। এই ভয়াবহ দারিদ্রের পাশাপাশি গুটিকয় মাত্র বড় সুন্দর বাড়ি ছিলো যাতে ধনাঢ্যরা বাস করতো। যাদের দেখভাল করতেই নিয়োগ করা হতো জনা-ত্রিশেক চাকর-বাকর। এই ধনাঢ্যদের বলা হতো পুঁজিপতি। ওরা ছিলো মোটা, কুৎসিত চেহারার, ঠিক উল্টো পৃষ্ঠার ছবিটির মতো। তোমরা দেখতে পাচ্ছো- তার গায়ে লম্বা কালো কোট যাকে বলা হতো ফ্রক কোট, আর অদ্ভুত জ্বলজ্বলে হ্যাট, দেখতে ঠিক চুল্লির চোঙার মতো, ওরা বলতো টপ হ্যাট। এটাই ছিলো পুঁজিপতিদের পোশাক, তারা বৈ আর কারও এই পোশাক পরার অনুমতি ছিলো না। এই পুঁজিপতিরা গোটা বিশ্বের সবকিছুরই মালিক ছিলো, আর বিশ্বের অন্যসবাই ছিলো তাদের কৃতদাস। তাদের দখলে ছিলো সকল জমি, ঘর-বাড়ি, কারখানা আর অর্থসম্পদ। তাদের অমান্য করলেই কারাগারে নিক্ষেপ করতো, অথবা কাজ ছিনিয়ে নিয়ে ক্ষুধায় মৃত্যুবরণে বাধ্য করতো। যদি কখনো কোনও সাধারণ মানুষ কথা বলতো কোনও পুঁজিপতির সামনে, তাকে হাঁটু গেড়ে মাথা নিচু করেই থাকতে হতো, মাথা থেকে টুপি খুলে রাখতে হতো আর ‘প্রভু’ বলে সম্মোধন করতে হতো। সকল পুঁজিপতির যিনি প্রধান তাকে বলা হতো ‘রাজা’, আর-

উইনস্টন জানে আর কি কি থাকতে পারে এই বইয়ে। লম্বা আচিনের পোশাক পরিহিত বিশপদের কথা, বিচারকদের জন্য পশুর লোমে তৈরি গাউনের কথা, অপরাধীদের সাজার জন্য তৈরি কাঠের পিলোরি, গবাদির পাল, ঘানি, বহুলেজবিশিষ্ট চাবুক, লর্ড মেয়রের ভোজসভা, পোপের পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে চুমু খাওয়ার রেওয়াজ এসবইতো। একটা প্রচলন ছিলো-বলা হতো জাস প্রাইমি নকটিস, শিশুদের পাঠ্য বইয়ে সম্ভবত তার উল্লেখ থাকবে না। এটি ছিলো এমন এক আইন যাতে প্রত্যেক পুঁজিপতি তার কারখানায় কাজ করে এমন প্রতিটি নারীকেই শয্যাসঙ্গী করতে পারতো।

আপনি কি করে জানবেন এর কতটা অসত্য? হতে পারে, বিপ্লবের আগের সময়ের চেয়ে গড়পড়তা মানুষের এখনকার জীবন ভালো কাটছে। কিন্তু এর বিপরীতে একমাত্র প্রমাণ হচ্ছে আপনার হাড়ের ভেতরে জমে থাকা সুপ্ত প্রতিবাদ, আপনার যাপিত জীবনের অসহনীয় পরিবেশ নিয়ে সহজাত অনুভূতি, যা ভিন্ন সময়ে ভিন্ন রূপ নেয়।

৩২তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময় ১৮০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।