ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (৩৯) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (৩৯) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিমাল ফার্ম’।
___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

৩৮তম কিস্তির লিংক
___________________________________

কাউন্টারের নিচে রাখা বালতির পানিতে দুটি মোটা গ্লাস চুবিয়ে এনে আধা লিটার পরিমান কড়া-বাদামি বিয়ার ঢাললো বারম্যান। প্রোলদের পাবে কেবল বিয়ারই মেলে। এরা জিন পান করুক এমনটা কাম্য নয়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে জিন মেলে তাদের নাগালের মধ্যেই। চাকতির ওপর বাণ নিক্ষেপের খেলা ততক্ষণে ফের জমে উঠেছে, আর বারের অনেকেরই আলোচনার মূলে ফিরেছে লটারি টিকিট। উইনস্টনের উপস্থিতি এক দ-ে ভুলে গেলো সবাই। জানালার ধারে পাতা তাসের টেবিল, ওখানে বসলে বুড়োর সঙ্গে নিশঙ্ক কথা বলা যাবে কেউ শুনে ফেলার ভয় কম। কাজটা ভীষণ কঠিন কিছু হতে চলেছে, তবে এই পাবে যে কোনো টেলিস্ক্রিন নেই তা রুমে ঢুকে প্রথমেই নিশ্চিত হয়ে নিয়েছে সে।

‘ব্যাটা আমাকে একটা পাইঁট দিতে পারলো না’ তখনও গজরাচ্ছে বুড়ো লোকটি। তবে ততক্ষণে লিটার মাপের গ্লাসেই তার মজেছে মন। ‘আধা লিটারে মন ভরে না, আবার পুরো এক লিটার বেশি হয়ে যায়। দামের কথা না হয় বাদই দাও! ব্লাডারেওতো চাপ পড়ে!’

‘যুবক বয়সে যা দেখেছেন তার চেয়ে অনেক পরিবর্তন দেখছেন, নাকি?’ প্রথম সুযোগেই কথা পাড়লো উইনস্টন।

বুড়োর মলিন নীল চোখ দুটো বাণ খেলার বোর্ড থেকে গোটা বার ঘুরে পুরুষদের দরজায় স্থীর হলো, যেনো এই সুড়িখানার পরিবর্তনটাই ছিলো তার অন্যতম প্রত্যাশা।

‘বিয়ার এখনকার চেয়ে অনেক ভালো ছিলো,’ অবশেষে বললো বুড়ো। ‘আর সস্তাও! যখন যুবক ছিলাম, আমরা বলতাম হালকা বিয়ার- চারপেন্সে এক পাইঁট মিলতো। তবে তা অবশ্যই যুদ্ধের আগে। ’

কোন যুদ্ধ ছিলো সেটা? প্রশ্ন উইনস্টনের।

‘সবগুলো যুদ্ধ,’ ভাসাভাসা উক্তি বুড়োর। বলতে বলতে গ্লাসটি তুলে নিলো, আর কাঁধ দুটি ফের ঝাঁকি দিয়ে সোজা করে নিলো। ‘তোমার সুস্বাস্থ্য কামনা করি!’

তার চিকন গলদেশের তীক্ষè কণ্ঠা (অ্যাডাম অ্যাপেল) বিস্ময়করভাবে দ্রুত ওঠানামা করলো কয়েকবার। তাতেই খালি হয়ে গেলো বিয়ারের গ্লাস। উইনস্টন উঠে বারের দিকে গেলো এবং আরও দুই গ্লাস হাফ-লিটার নিয়ে ফিরলো। আর বুড়ো নিমিষেই তার ‘পুরো এক লিটার পান না করার’ সংস্কার ভুলে তুলে নিলো পরের গ্লাসটি।

‘আপনি আমার চেয়ে ঢের বড়,’ বললো উইনস্টন। ‘আমার জন্মের আগেই আপনি পুরোদস্তুর বয়ষ্ক। নিশ্চয়ই বিপ্লবের আগের দিনগুলোর আসল চেহারা কেমন ছিলো তা আপনার মনে আছে। আমাদের বয়সের লোকেরা আসলে ওই সময়ের কথা কিছুই জানে না। আমরা ওগুলো কেবল বইয়েই পড়ি, আর বইয়ের কথাতো সত্য নাও হতে পারে। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই। ইতিহাসের বইগুলো বলছে বিপ্লবের আগের জীবন ছিলো এখনকার জীবনের চেয়ে পুরোই আলাদা। ভয়াবহ নিষ্পেষণ, অবিচার আর দারিদ্র ছিলো, যা আমাদের কল্পনার অতীত। এই লন্ডনে বিশাল জনগোষ্ঠীর কেউই জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি কোনও দিন পেটপুরে খাবার পায়নি। অর্ধেক মানুষের পায়ে জুতো ছিলো না। তারা দিনে ১২ ঘণ্টা গতরখাটতো, নয় বছরেই তারা লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে  কাজে যোগ দিতো, ১০ জনের ঘুমের স্থান হতো একটি ছোট্ট কামরা। আর একই সময়ে গুটিকয় মানুষ, হতে পারে মোটে কয় হাজার- যারা পুঁজিপতি ছিলো- তারাই ছিলো ধনি আর ক্ষমতাধর। যা কিছু ছিলো তার সবই ছিলো তাদের মালিকানায়। তারা বিশাল প্রাসাদোপম বাড়িতে বাস করতো, জনাত্রিশেক চাকর-বাকর তাদের সেবায় সদা নিয়োজিত, তারা মোটর গাড়ি আর অশ্বশকটে চেপে ঘুরতো, শ্যাম্পেন পান করতো, টপ হ্যাট পরতো--’
চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো বুড়োর।
 
‘টপ ’অ্যাটস!’ উষ্মার উচ্চারণ তার। ‘নামটি বলার সময় “অদ্ভুত” কথাটিও জুড়ে দাও। কেবল গতকালই বিষয়টি আমার মাথায় কাজ করেছে, আমি জানি না কেন। কেবল ভাবছিলাম, অমন চোঙা হ্যাট অনেক বছর দেখি না। বিলিন হয়ে গেলো। শেষ একবার পরলাম আমার শ্যালিকার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়। সেটি কবে ছিলো!- ঠিক তারিখটা তোমাকে বলতে পারবো না। তবে বছর পঞ্চাশেক আগে তো হবেই। অবশ্যই ওই দিনের জন্য ধার করেছিলাম, আশা করি বুঝতে পারছো। ’

‘টপ হ্যাটের বিষয়টি খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না,’ শান্তস্বরে বললো উইনস্টন। ‘বিষয়টি হচ্ছে ওই পূঁজিপতিদের নিয়ে- তাদের গুটিকয় আইনজীবী আর ধর্মগুরুদের নিয়ে, যারা ওদের ঘাড়ে ভর করে টিকে থাকতো- ওরাইতো ছিলো ধরাধামের প্রভু। যা কিছু বিরাজমান ছিলো তা তাদেরই উপকারের জন্য- সাধারণ মানুষ, কর্মজীবীরা- ছিলো ওদের কৃতদাস। তাদের যেমনটা মন চাইতো আপনার সঙ্গে ওরা তেমনটাই করতে পারতো। ওরা চাইলে আপনাকে গবাদির মতো জাহাজে চাপিয়ে কানাডা পাঠিয়ে দিতে পারতো। ওরা চাইলে আপনার মেয়েদের বিছানায় টেনে নিতে পারতো। ওরা আপনাকে নয়-লেজের চাবুকের ঘায়ে জর্জরিত করতে পারতো। আপনি ওদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মাথার টুপি খুলতে বাধ্য হতেন। প্রতিটি পুঁজিপতিই একদল চামচাবেষ্টিত হয়ে ঘুরতো-

৪০তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময় ১৫৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।