ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

দুটি কবিতা | শামসেত তাবরেজী

কবিতা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৫
দুটি কবিতা | শামসেত তাবরেজী

টেডিবিয়ারের রাতে
___________________________________

      ‘খানিক বিরতি লহ’, টেডিবিয়ারের রাতে
      প্রশ্নাতুর চাঁদ এসে জানালায় থামে, চিবুক বিদরি
      এ কিসের কষ? স্খলিত ডালিম? ‘ধুর মিয়া,
      পিছনে তাকাও, হায়া—, হরিণেরও নাই, শুধু ব্যথা
      তোষাপাট-ধোয়া ময়লা সবুজ স্থির জল...’

      বলে চলে যায়, সমুত্থ টাওয়ার দাঁড়িয়ে থাকে—
      ঘড়ির উদ্বেগ ঝরে মুহূর্ত কাঁটার হাত ধরে,
       ‘একটু থামা কি চলে, বাবুসোনা, আধা নিশ্বাস
      অসভ্য মহলে’? ওদিকে উঠেছে উট একা
      স্যান্ডস্কেপ থেকে আর্তনাদসহ, দ্যাখে, টমাহক
      পাড়ছে নিখুঁত ডিম এ গাঁয়ে ও গাঁয়ে।

       ‘একটু জিরাও, ভদ্রে, কলঙ্কমেশিন-মুগ্ধতা
      দৃষ্টি ঘোলাটে করে আছে, আর্দ্র চাদরে
      গত শতকের গ্লানি ফুটে আছে হেমবর্ণ ত্যেজে’।


       ‘রাখো তো হরফনির্ণয়া বাণী, পদমূলে
      নাস্তিমাধুরিকা, তার ধ্বনি, তরঙ্গ-বিলাস, ওরে
      সেও কি চায়নি—ঐ ট্রেডবার্ড টেরোডাক্টাইল’!

      টেডিবিয়ারের চোখ জ্বালা করে, অশ্রু কি ঝরে?
      অনন্ত গাউন তার গোলাপি আভার সবটুকু
      ঢেকে নেয় রোমশ কাঁথায়। পিস্টনে পিষে
      দ্বিভঙ্গের জ্যামিতির রেখা ও নিরেখাগুলি
      সবীর্য আস্ফালন হয়ে চ্যানেলে চ্যানেলে ঢুকে যায়!

      এই দৃশ্য দেখি আমি খ্রিস্টিয় একুশ শতকে, বঙ্গবিতানে!


কবি
___________________________________

      সর্বোচ্চ ঘৃণার নাম কবি

      রুখো তাকে

      ভেড়াস্য ভেড়ার মাদি যেটা
      কবি তার নাম

      বেঁধে ফ্যালো তাকে

      নিওরো-জোনে যার খালি পাপ
      যার কলজে মুফতে ৫০০ টাকা

      যে তোমাকে চায়—ঐ তাকে
      বিনা পয়সাতে

      কে না জানে তার নাম কবি

      নিগৃহস্থ, অন্যের বিছানায় ঘুমায়
      জেগে থাকে স্বপ্নের ভিতর
      ফেলে আসে লোল

      যার কাছে মশাও ঘেঁষে না
      পুলিশ পর্যন্ত বাড়ি পৌঁছে দেয়

      যে মুখস্থ করে উন্মাদের ভাষা
      ঈশ্বরের মত বেঁটে
      আকাশের চেয়েও উঁচু ঘাড় তার

      হা, হা, সে বটে তো কবি

      ব্যক্তিগত ধ্বজা সে ধসিয়ে দিয়ে
      অন্য কারও ধ্বজা সামলায়

      চা খায় শব্দ করে
      চুম্বন দেবার আগে মুখ
      কুকুরের পাছায় ঘষে নেয়

      আদ্যশিশু ঐ বেটা শিশুহত্যাকারি
      ভোটের আখরোট চিবায়
      পরের সুপারি

      সে শালা যে কবি সকলেই জানে শহরের

      পবিত্রতা ছাড়া পাপের অংশভাগ নিতে
      গররাজি শালা
      স্বপ্নের সাহেব বাবাজি

      সকল ছন্দে নাড়ে ঘাড়
      গদ্যচালিত এই বেহুঁশ মোটরযান

      আরম্ভেই ফেরে বারবার
      প্রতি পদক্ষেপে
      আক্ষেপ-বিলাপ

      রাত হলে ঠিকই টের পায়
      ঐ হেথা বনের ওপড়ে
      মেদময়লা চাঁদ

      অন্ত্রে জাগিয়ে ক্ষুধা
      দশকে দশকে
      ডিম পাড়ে পুরুষপ্রধান

      তার নাম কবি
      যা লেখে তা বিশ্বাস করে না
      যা বিশ্বাস করে তা লুকিয়ে বেড়ায়

      বই থেকে বইয়ে—খাঁজকাটা ঢেউয়ে
      প্রতিধ্বনির নৌকায়

      জগত বিহার করে হরমুহূর্ত
      পৌঁছায় না কোনও বন্দরে কস্মিনকালে

      আমি জানি কবি তার নাম
      চিরন্তন আর
      বিশৃঙ্খল, বিষাদের ছেঁড়া উপন্যাস
      ফ্যালাসচক্রে-বাঁধা ড্যাশ...

      কে রুখবে এই মাঙ্গির পো-রে
      বলো, বলো!



বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৫
টিকে/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।