ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

দুটি কবিতা | আনিস পারভেজ

কবিতা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৫
দুটি কবিতা | আনিস পারভেজ

অতল  খুঁজে বেড়াই
___________________________________

      ভেজা আকাশ দেখে
      তোমাকে মনে পড়ল, অনেক দিন আগে
      দূর থেকে দেখা নাওয়ের বাদামের মতো। দিগন্তে
      দেখা যায় কি যায় না একটি  বাদাম বালকের চোখে
      ঝিলিক দিয়েছিল
      সেই থেকে সে হয়ে গেল জেলে।


      গ্রামের শরীর হাঁটু অবধি জলে জড়িয়ে গেল মাছ
      মানুষ আর শষ্যে মিলে মিশে
      বর্ষার গান হলো।
      আকাশের মেঘ সেই গানে পাঠিয়ে দিল দু’একটি মিড়।

      জলে নাইতে গেলে তুমি বর্ষার জলজ দুপুরে
      তোমার শরীরের সুবাসে বুদবুদ হলো দিঘির জলে মাছ
      মানুষ আর হিজলের গানে ঢেউ উঠল।
      জেগে উঠল জলের অতলে রাজপুত্তুর পৃথিবী
      থেকে সে জলে নির্বাসনে গিয়েছিল ভালোবাসার
      অতল খুঁড়বে বলে।
      তোমার শরীরের সুবাস অতলের তলটুকুও ছুঁয়ে গেল
      রাজপুত্তুর হাত বাড়াল তোমার দিকে।

      জল থেকে উঠতে গিয়ে বুঝলে তোমার পায়ে কিসের যেন টান। তুমি
      একবার তাকালে পৃথিবীর দিকে
      তোমার জননী কাঁদছে, কাঁদছে তোমার সই, কাঁদছে গোহালের বাছুর।
      গ্রামবাসি তোমার জনকের হাতে তুলে দিয়েছে স্বর্ণকুঠার
      তোমার  পায়ের  বাঁধন কাটবে  বলে।

      দিন যায় রাত আসে,  স্বর্ণকুঠার ভেঙ্গে যায়।

      বর্ষার জল ভাসিয়ে নিচ্ছে গ্রাম
      দিঘির জল এখন তোমার গলা অবধি।
      চাঁদের আলো মুছে দিল তোমার চোখের জল,
      তোমার জনক এগিয়ে এলো কন্যা সম্প্রদান করবে বলে।

      মাছ মানুষ আর জল আবারও গাইল গান
      মেয়েরা দিল উলুধ্বনি।
      ভেলুয়া, তুমি একবার  তাকালে  পৃথিবীর  দিকে
      তাকালে শেষবারের মতো
      জলে সমর্পিত হওয়ার আগে মানুষের গন্ধ নিলে
      দেখলে গোহালের বাছুরটিকে।

      সেই থেকে আমি জেলে হয়ে জলের অতল খুঁজে বেড়াই
      জালে আসা মাছদের  জিজ্ঞেস করি
      জলের ভেতর তোমার কীরকম সংসার?
      অথবা আছে কি তোমার কপালে স্মৃতির কোনও ভাঁজ?


নিজস্ব লিপি
___________________________________

      তাকিয়ে দ্যাখো আকাশের দিকে
      দেখবে তোমার ছায়া কীরকম অনন্ত নীল হয়ে
      ছড়িয়ে আছে প্রশান্ত শূন্যতায়।
      একবার নিঃশ্বাস নাও
      দেখবে সেই ছায়া এবং সেই অনন্ত নীল
      কীরকম ছোট্ট একটি ধাক্কা হয়ে গ্যাছে তোমার হৃৎপিণ্ডে।

      এবার কান পেতে শোনো তোমার রক্তের ধ্বনি।
      বাইরের সমস্ত আলো আর ধ্বনি
      ব্রাকেটের বাইরে রেখে ভেতরের জলাশয়ে
      এবার তোমার ডুব সাঁতারের পালা।
      দেখছো, কী সব রঙ্গিন মাছ আর শ্যাওলা
      তোমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে?
      শ্যাওলার মৃদু কম্পন আর মাছের মুখের বুদবুদ
      অদৃশ্য একটি জগৎকে তোমার ভেতরে লিপিবদ্ধ করছে।

      একবার কি পড়ে নেবে সেই লিপি?

      চোখ বন্ধ করে অন্ধের দৃষ্টিতে পড়ে নাও সে লিপি।
      তোমাকে মুক্ত করো প্রতিদিনের ভাষা থেকে
      যে ভাষা আমাদের প্রকাশকে ব্যাকরণবন্দী করে
      আমাদের পাঠিয়েছে আমাদের থেকে নির্বাসনে।
      এবং ভেতরে ও বাইরের ফারাক করেছে
      সীমানা তৈরি করেছে ছায়া ও কায়ার, জীবন ও মৃত্যুর।
      একবার পড়ে নাও তোমার ভেতরের নিজস্ব লিপি।



বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।