ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

পার্বত্য রহস্য (সমাপনী কিস্তি) | মুহাম্মাদ তালুত

গল্প / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৫
পার্বত্য রহস্য (সমাপনী কিস্তি) | মুহাম্মাদ তালুত

প্রথম কিস্তি পড়তে ক্লিক করুন

প্রথম কিস্তির পর | যেতে যেতে আরও কিছু ব্যাপার ব্যাখ্যা করল নৃ। বলল, দ্বিমাত্রিক তলে ঘটনাটা বৃত্তের মতো লাগলেও, বাস্তবে ওটা আসলে স্ফেরিক্যাল অর্থাৎ গোলকাকার, ব্রিজের নিচ থেকে ভাঙনের গড়নটা থেকে বোঝা যায়।

এজন্যই প্রভাব বলয়টা একটা ফুটবলের মতো ত্রিমাত্রিক এলাকা জুড়ে যার ব্যাসার্ধ বড়জোড় পঁচিশ তিরিশ ফুট।

‘তারমানে বলতে চাইছ, নিচের মাটিটা ধুলোর মতো নরম হয়ে যাওয়া আর ব্রিজটা ভেঙে পড়া একই সূত্রে গাঁথা?’
‘তার সম্ভবনাই বেশি নয় কি? নয়ত স্ফেরিক্যাল একটা স্পেস জুড়ে সব সলিড গুঁড়ো গুঁড়ো কেন হয়ে গেছে?, দেখ, এই জিনিসটা। ’—বলে পকেট থেকে একটা রডের টুকরো বের করল ও, আঙুল দিয়ে একটু পিষতেই ঝুরঝুর করে গুঁড়ো হয়ে গেল সোনপাপড়ীর মতো।
‘এ কি! কিভাবে সম্ভব এটা’—আমি রীতিমত চমকে গেলাম।
‘শুধু তাই না, ধুলোমাটির কণাগুলোও অনেক মিহি হয়ে গেছে। কিন্তু বৃত্তের বাইরে আবার স্বাভাবিক’—নৃ বলল মাথাটা দুলিয়ে। ‘যেহেতু ঘটনাটা ঘটছে একটা গোলকীয় স্পেস জুড়ে সুতরাং এর উৎপত্তি নিশ্চয় সেটার কেন্দ্রে!’
‘কিসের উৎপত্তি?’
‘সেটাই তো জানতে চাইছি! তবে ভয়াবহ কিছু নিশ্চয়! আর সেটা এখুনি বন্ধ হয়ে যাওয়া দরকার!’

আমরা পৌঁছে কিছু সেনা সদস্য দেখলাম, ছোট একটা গ্রুপ, কোনও কমিশন্ড অফিসার নেই। সুবেদারকে পরিচয় দিলাম। আমার লোকেরা ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। তবে কাজটা বেসিক্যালি ব্রিজের দুই প্রান্তে কেননা ব্রিজটা ছোট আর কোনও ইন্টারমিডিয়েট কলাম নেই, তাই মাঝখানে তেমন কিছু করার নেই।

কিছু শ্রমিক দিয়ে মাঝখানের কংক্রিট সরাল নৃ। ব্রিজের ঠিক মাঝখানে দাঁড়াল ও।

আমার মনে হঠাৎ একটা প্রশ্ন আসলো, ‘স্পেসটা যেহেতু স্ফেরিক্যাল, এর কেন্দ্র তো ঠিক মাঝখানে নাও হতে পারে। তুমি তো টু ডাইমেনশোনালি ক্যাল্কুলেট করেছ। ’
‘আমি ব্রিজের দুপাশটা খুব ভালো করে দেখেছি, ব্রিজকে এক্সিস অব সিমেট্রি ধরলে প্রভাব বলয় বামে ডানে পুরাই প্রতিসম। সুতরাং কেন্দ্রটা ব্রিজের ঠিক নিচেই হবে। ’—শ্রমিকদের মাটি খোঁড়া দেখতে দেখতে বলল নৃ। খুব নরম মাটি, খুঁড়তে হচ্ছে না বললেই চলে। দু’ফুট মতো গভীরে যাবার পর নৃ ওদের থামতে বলল। ধুলোর মতো মাটি কিছুটা শক্ত হয়ে আসছে। খটকা লাগল ওর, মাটি তো আরও নরম হবার কথা। আস্তে আস্তে মাটি সরাতে বলল এবার, আলতো করে হাত দিয়ে সরানো যায় কিনা নিজেই নেমে দেখার চেষ্টা করল। অবশেষে শক্ত কিছু একটা ঠেকল হাতে, নৃ উল্লাসে চিৎকার করে উঠল, ‘ইউরেকা!’

জিনিসটা কালো, ছোট একটা সিলিন্ডারের মতো, অনেকটা গাড়ির ফুয়েল ফিল্টারের মতো, চার ইঞ্চি ব্যাস হবে আর লম্বায় ইঞ্চি পাঁচেক। ওপরের আবরণটা অত্যন্ত ঠাণ্ডা ধাতব কিছু দিয়ে তৈরি। তবে বেশ ভারী। খুব সাবধানে তুলে আনল নৃ।

গুঞ্জন উঠল সবার মাঝে, মনে করল বম্বিং করে ব্রিজ ধসানো হয়েছে। সেনাবাহিনী সতর্ক হলো, খবর পাঠিয়ে দিল উপরে, জিনিসটা আমাদের আর দিতে চাইল না। তবে নৃ ওর ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়  খাটিয়ে জিনিসটা নিজের কাছে রাখতে সমর্থ হলো। এক্ষেত্রে অবশ্য খানিকটা চালাকি করল ও। জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে অবশ্য ও একটা সাময়িক অনুমোদন ম্যানেজ করল, বলল জিনিসটা ও নিয়ে আসছে। একটা কাগজে জব্দ তালিকা বানিয়ে জিনিসটার বিবরণ দিয়ে নাম পরিচয়সহ সই দিল, আমি হলাম সাক্ষী।

আমরা রওনা দিলাম। ‘মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে, এটা কোনও থার্মাল এক্সপ্লোশান না, বরং একটা ভাইব্রেশন ব্লাস্ট। ভাইব্রেশনের উৎপত্তি এই ডিভাইস থেকে, খুব কম অঞ্চল জুড়ে তীব্র ভাইব্রেশন তৈরি করতে পারে, হাই ইন্টেন্সিটির সাউন্ড ওয়েভ যেমন কাঁচ ভেঙে ফেলে ঠিক তেমনভাবে চূর্ণ করে ফেলে সব কঠিন পদার্থ, প্রভাবসীমার ভেতর। এ জিনিস থেকে যে ভাইব্রেশন বের হয় তার কোনও আওয়াজ সম্ভবত আমরা টের পাব না, কেননা শ্রাব্যতার সীমার বাইরে হবে সেটার ফ্রিকোয়েন্সি’—বেশ সাবলীল একটা লেকচার দিল নৃ। ‘এ জিনিস দুনিয়ায় কি না আমার সন্দেহ আছে, কোথাও এ ধরনের কিছুর ইউজ আমি কখনও শুনিনি। অবশ্য থাকতেও পারে, গোপনে কত কিছুই না ঘটছে, বছর কয়েক আগে ইরানে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্প আমেরিকা-ইসরায়েলের নাশকতামূলক কীর্তি বলে দাবি করেছিল ইরান, যদিও সে দাবি প্রমাণ হয়নি। ’

আমি স্তম্ভিত হয়ে ভাবতে থাকলাম, নিঃসন্দেহে এটা নাশকতামূলক, পাহাড়কে বিছিন্ন করতে চাইছে কে বা কারা। এখন প্রশ্ন হলো, কেন? অনেক কারণ থাকতে পারে, বাঙ্গালির আনাগোনা আজও অনেক পাহাড়ির তেমন পছন্দ নয়। শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন আজও সেভাবে করতে পারিনি। বিদেশি সাজশও হতে পারে, বিচিত্র নয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতি এখন পুরাটাই হিপোক্রেসি, স্বার্থপরতা বিনা আর কোনও আদর্শ নেই।

‘জিনিসটার আবরণটা খুব স্পেশাল কিছু দিয়ে তৈরি যেটা ভাইব্রেশন ছড়াবে কিন্তু নিজে ভাঙবে না, অর্থাৎ এটার ন্যাচারাল ফ্রিকোয়েন্সি ওই ভাইব্রেশন ফ্রিকোয়েন্সির রেঞ্জের বাইরে, এ ধরনের ভাঙন সাধারণত রেজোন্যান্সের ফলে হয়। ’—নৃ বলে চলল, ‘এখন প্রশ্ন থাকে এটা অপারেট করা হয় কিভাবে? দেখ কোথাও কোনও ফাঁক ফোকর নেই, একেবারে হারমাটিক্যালি সিল্ড, কিন্তু একটা জিনিস আমার নজর এড়ায়নি। এই দ্যাখ’—বলে সিলিন্ডারের ওপর একটা জায়গা পয়েন্ট করল ও, সেখানটা একটু উঁচু, ‘এখানে একটা এন্টেনা আছে মনে হচ্ছে, এটা দিয়েই দূর থেকে ডিভাইসটা কন্ট্রোল করা হতো, তবে জিনিসটা এখন পুরাই নিরীহ, ভেতরের যাবতীয় শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেছে। তাই এটাকে একটু টেস্ট করা দরকার। ’
‘তা কিভাবে সম্ভব? তুমি না বলে দিয়েছ, এটা এখন নিয়ে যাবা!’
‘ব্যবস্থা আছে, একটা কাজ কর, একটু গাড়ি মেরামতের গ্যারাজগুলো যেখানে আছে সেখানে নিয়ে চলো। ’
‘আসলে কী চাও তুমি?’—বলে গাড়ি ঘোরালাম সেদিকে।

শহরের একটু বাইরে একটা রাস্তার ধারে অনেক ক’টা গ্যারাজ আর গাড়ির পার্টসপাতির দোকান। আমি একটার সামনে দাঁড়ালাম। ‘কিছুই না, আপাতত একটা রেপ্লিকা দিয়ে শান্ত রাখতে হবে। ’—বলে গাড়ি থেকে নামল নৃ, ডিভাইসটা ভেতরেই রেখে গেল ‘এখানেই থাক, আসছি এখুনি। ’

কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো ও, হাতে একটা ডিজেল ইঞ্জিনের কালো রঙের ফুয়েল ফিল্টার, একেবারে হুবুহু ডিভাইসটার মতো আকৃতি, আমি অবাক।
‘এ কি? এ জিনিস মানুষ বুঝবে না?’
‘বুঝলেও ক্ষতি নাই, ততক্ষণে আমার কাজ শেষ হয়ে যাবে, তাছাড়া আজ ছুটির দিন, সবাইকে সেভাবে পাওয়াও যাবে না। আপাতত ট্রেজারিতে থাকবে জিনিসটা, আমাদের হেফাজতে। ’
‘ধরা পড়লে সমস্যা হতে পারে। ’
‘রিস্কটা আমিই নিচ্ছি, তোমার ভাবতে হবে না। এটা অন্য কারও হাতে পড়লে রহস্যটার সমাধান আর হবে না, হলেও অনেক দেরি হয়ে যাবে। আমি সামান্য একটু পরীক্ষা করব মাত্র, এবার চলো ডিসি অফিসে। ’

আমরা ডিসি অফিসে গিয়ে কিছু ফরম্যালিটি করে ফিল্টারটা জমা দিয়ে এলাম। কয়েকজন চিনেও ফেলল, নৃ বলল ওটাই পাওয়া গেছে। দুশ্চিন্তা সত্ত্বেও হাসি পাচ্ছিল, কোনমতে চাপলাম। কিন্তু নৃ ট্রেজারি অফিসারের কানে কানে কী যেন বলে আসলো; পরে জেনেছিলাম তিনি নাকি ওর ব্যাচমেট আর নৃ ওকে ঘটনাটা সংক্ষেপে বলে দিয়েছিল, তিনি সানন্দে নৃর ওপর ভরসা করেছেন অর্থাৎ পরবর্তী এনকোয়ারি হবার আগ পর্যন্ত ওটা নৃ কাছে রাখতে পারে। বাসায় ফিরে নৃ খুব ভালোভাবে খেয়াল করল জিনিসটা, একটা সূক্ষ্ম চিড় পেয়ে গেল গায়ে। তারপর খোঁচাখুঁচি করে খুলে ফেলল। খুলতেই অনেক ক’টা জিনিস দেখা গেল, ইলেক্ট্রনিক সার্কিট, একটা ক্যাপসুল যা সিলিন্ডারটার বেশিরভাগ জায়গা দখল করে ছিল আরও কয়েকটা কিম্ভুত বস্তু যা চিনলাম না।

‘এই ক্যাপস্যুলটার ভেতর কিছু একটা আছে, খুব পাওয়ারফুল কিছু, প্রচুর এনার্জি ধারণ করতে পারে এমন কিছু! এটাই ভাইব্রেশন প্রডিউস করে, এটা খোলা বিপদজনক হতে পারে, আমি বরং দেখি এই রেডিও ট্রান্সমিটারের রেঞ্জ কত!’—নৃ কিছু অংশ আলাদা করে নিল।
‘রেঞ্জ বের করবা কিভাবে?’
‘কত কিছুই না বের হয়েছে এখন, খবর রাখ? একটা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস আছে যা যেকোন রেডিও ওয়েভের অ্যানালাইজ করতে পারে। ’—পকেট থেকে মোবাইলটা বের করল নৃ। একটা অ্যাপস চালু করে রেডিওটার সামনে ধরল ওটা। কিছুক্ষণের মধ্যেই কিছু রিডিং দিল ওটা।
‘যে পারমিয়েবিলিটি দেখা যাচ্ছে তাতে এই চিজ তিরিশ মিটারের বেশি দূরত্বে কাজ করবে না, অর্থাৎ কাণ্ডটা ব্রিজের খুব কাছে থেকেই ঘটিয়েছে এবং তা ঘটতে দেখেছে গুরুমশাই!’
‘তাহলে তো ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনও ক্লু পাওয়া যেতে পারে!’—আমি উত্তেজিত হলাম।
‘না পাওয়ার সম্ভবনাই বেশি! গাড়িতে করে এসে আবার গাড়িতেই ফিরে গেছে হয়ত। ঐ সাইজের ব্রিজ আছে মোট কতগুলো?’
‘জেনে বলতে হবে। ’

‘আমাকে খুব দ্রুত কথা বলতে হবে বিভাগীয় কমিশনার স্যারের সাথে, এমন জিনিস আরও আছে ওই সাইজের সব ব্রিজের নিচে চেক করতে হবে। ’—নৃ ফোন করতে শুরু করল। বান্দরবানের ডিসি স্যারকে জানাল, তারপর ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিল বিভাগীয় কমিশনার স্যারকে। স্যার দ্রুত ব্যবস্থা নিলেন। সেনা আর পুলিশ দুই বাহিনীই লেগে পড়ল ওই সাইজের অন্যান্য ব্রিজের নিচে খুঁজতে। সারা দিনে আর রাতে প্রায় সব ব্রিজ খোঁজা হয়ে গেল কিন্তু কিছুই পাওয়া গেল না। নৃকে একগাদা বকাও শুনতে হলো, ও এককান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দিল। রাতে জিনিসটা ট্রেজারিতে দিয়ে ফুয়েল ফিল্টারটা ফেরত আনল। ল্যাবে টেস্ট করলে জানা যাবে, ক্যাপস্যুলের ভেতর কী ছিল।

‘একবার কুন্টিংছড়ি যাওয়া দরকার’—গম্ভীর কণ্ঠে বলল নৃ।
‘যেতে পার, তবে আমি আর সময় পাব না মনে হয়, অনেক কাজ জমে আছে, দ্রুত সারতে হবে। ’
‘ঠিক আছে, আমি একটা জীপ ভাড়া করে ফেলছি। একটা ট্রান্সপোর্ট সাথে রাখতে হবে। অনেক ঘোরাঘুরি করতে হতে পারে। ’
‘লাইসেন্স এনেছো?’
ব্যাগ থেকে লাইসেন্স বের করল নৃ, ‘এটা আমি কখনওই ভুল করিনা!’

পরদিন সকালে বেরিয়ে গেল ও, সারাদিন আর পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যায় ফিরে এলো। ডিনার দিয়ে দিল পার্সি। ও ব্যাপারটায় বেশ কৌতূহলী, প্রায় প্রতিদিনের খুঁটিনাটি আপডেট নিচ্ছিল। নৃ আসার পর আমরা দুজনেই হামলে পড়লাম। ও জানাল, কুন্টিংছড়ির বেইলি ব্রিজ হবার পর সেখানে আর কোনও ফোর্স নেই, বেশ ফাঁকা এখন আশপাশটা। জায়গাটার ডেফিনিশন প্রায় মোহাইলঙের মতোই। সারাদিন অনেক পর্যবেক্ষণ করেছে নৃ, তেমন কিছু পায়নি। তবে ওর বারবার মনে হচ্ছিল ব্রিজের কাছেই রহস্যটার কোনও সূত্র আছে। আরেকটা ব্যাপার জানাল ও, অঘটনগুলো বেশ কয়েকদিন পর পর ঘটেছে অর্থাৎ একসাথে সবকটা ঘটনা ঘটানোর প্ল্যান করা হয় নি, বরং একে একে করা হয়েছে। এই সামান্য ব্যাপারটা আরেকটু আগে ধরতে পারলে অত্তগুলা ঝাড়ি খেতে হতো না নৃর। তবে সারাদিন ধরে পাহাড়ে ঘুরতে নাকি ওর দারুণ লেগেছে।

পরদিন বান্দরবানের আর কোথায় কোথায় ওই মাপের ব্রিজ আছে তার একটা তালিকা আর ম্যাপ দিলাম ওকে। ওর ধারণা ক্যাপস্যুলগুলোর একটা নির্দিষ্ট মাপের শক্তি আছে আর তা ওই ধরনের ব্রিজই ধ্বংস করতে পারবে, ওর থেকে বড় ব্রিজে কাজ নাও হতে পারে। নৃ একটা ভাড়া করা জীপ নিয়ে বেরিয়ে পড়ল আবার।

সারাদিন অফিসি ব্যাস্ততায় কেটে গেল। লাঞ্চের পর ফোন করল নৃ। বলল, আমি যেন আমার পিস্তলটা নিয়ে সিংহলছড়ির একটা ব্রিজের কাছে চলে আসি। কিছু একটা দেখতে পেয়েছে সে। জায়গাটা প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টার পথ তবে মেইন রোডের ওপর না, একটা প্রত্যন্ত ইউনিয়নের দিকে চলে গেছে, বেশ নির্জন বলা চলে। আমি ওকে বললাম পুলিশ ফোর্স আনব কি না; ও মানা করল। এই ফাঁকে বলে রাখি, আমার একটা লাইসেন্স করা পিস্তল আছে, কিছুদিন আগেই নেওয়া।

রওনা দিয়ে দিলাম। সাথে চলল পার্সি, কিছুতেই থামাতে পারলাম না। বৌটা আমার খুবই লক্ষ্মী তবে মাঝে মাঝে এমন আবদার করে যে, না রাখলে সাতদিন মুখ ভার করে রাখবে। যদিও এ কয়দিন ওকে সাথে নিতে পারিনি, ও আসলে ভীষণ অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়। আমি যে ওকে নিয়ে যাচ্ছি সেটা নৃকে বলতেও দেয়নি। পাশ থেকে ওর ভেতর একটা উত্তেজনা লক্ষ্য করছি। আমি যেতে যেতে ওকে ব্যাপারটার ওপর একটা ব্রিফিং দিয়ে দিলাম। আমার এই অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় বউ একঘেয়ে জার্নিটাকে বেশ উপভোগ্য করে তুলল। বিকেল নামতেই পাহাড়ি এলাকাটা স্বর্গীয় সৌন্দর্যে ভরে গেল। পাহাড়গুলোর একদিকের ঢালে আলো আরেক দিকে ছায়ার অদ্ভুত কনট্রাস্ট মনে রহস্যের একটা অনুভূতি তৈরি করে, সন্ধ্যা নামতে নামতে তা তীব্র হয়। হেমন্তে বিকেল ফুরিয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি, ঝপ করে নামে অন্ধকার।

কিন্তু আজ দেখলাম চাঁদ উঠেছে, তাও আবার ভরা পূর্ণিমা! পূর্ণিমায় পাহাড়ের মতো ভয়ঙ্কর সুন্দর আর কিছু নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে প্রচুর সাপের আনাগোনা তবে নৃ জানিয়েছিল, হেমন্তের শুরুতেই সাপেরা হাইবারনেশানের প্রস্তুতি শুরু করে, লম্বা ঘুমের শুরুতে নির্জীব হয়ে লুকিয়ে পড়ে গর্তে বা আড়ালে, সুতরাং ভয় নেই। বাংলাদেশের এই পাহাড়ি এলাকাটা প্রাণী বৈচিত্র্যের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ। এখানে এক সময় দশমণ ওজনের গয়াল জাতীয় বন্যগরু পর্যন্ত পাওয়া যেত! হাতি তো এখনও মাঝে মাঝে মিয়ানমার থেকে চলে আসে।

যখন নৃর দেখা পেলাম তখন সূর্যের শেষ রেশটুকু মিলিয়ে গেছে, পাহাড়ের কোলে জমাট বাঁধতে শুরু করেছে কুয়াশা, চাঁদের আলোয় মিশে তৈরি করছে মোম জোছনা। পাহাড়ি রাস্তার পাশে ওর গাড়ি দাঁড়ানো, শুধু ওর একহারা অবয়বটার দেখা পেলাম।

‘ভাবিকে নিয়ে আসা একেবারেই ঠিক হয়নি’—একটু থেমে যোগ করল নৃ, ‘এই স্টেটমেন্টটা এখন আর আমি ডেলিভারি করছি না, বরং বলছি, নিয়ে এসে ঠিকই করেছ’—কৌতুক করল নৃ, চাঁদের আলোয় পরিষ্কার ওর দাঁত দেখতে পেলাম! ওর রহস্যমাখা কণ্ঠে কেমন যেন শিরশির করে উঠল আমাদের শরীর।

‘পরিস্থিতি একেবারেই স্বাভাবিক, ওই ঘটনা আর ঘটবে না। ’—শান্ত গলায় বলল নৃ, ‘সব শেষ। ’
‘শেষ? কিভাবে?’—আকাশ থেকে পড়লাম আমি।
কাছে এসে মোবাইল বের করল নৃ, একটা অ্যাপস চালু করা ছিল। ‘এটা একটা রেডিওওয়েভ ডিটেক্টর, একরকমের রেডিও সিগন্যাল রিসিভার বলতে পার, ওই ভাইব্রেশন ডিভাইসটা থেকে বেরুনো কন্ট্রোল ওয়েভের ফ্রিকোয়েন্সিটা এখানে সেভ করে রেখেছিলাম। অ্যাপসটা চালু রেখেই আমি এলাকাটা চষে বেড়াচ্ছিলাম যেন ওই ফ্রিকোয়েন্সির কোনও ওয়েভ রেঞ্জে  আসলেই ধরা পড়ে, ঠিক যেভাবে এফএম রেডিওতে বিভিন্ন মেগাহার্জের ফ্রিকোয়েন্সি ধরা পড়ে। এই পাহাড়ের কাছাকাছি আসতেই বিপ করতে শুরু করে। ’
‘অর্থাৎ এখানকার কাছেই ওই রেডিও কন্ট্রোলারটা আছে?’—পাহাড়ের আশপাশটায় তাকাতে তাকাতে পার্সি জানতে চাইল।
পার্সির চোখের দিকে চাইল নৃ, শীতল গলায় বোমা ফাটাল, ‘শুধু তাই না, যে মানুষটা অঘটনগুলো ঘটাচ্ছিল সেও আছে একেবারেই কাছে!’
ভয় পেয়ে গেলাম আমরা দুজনেই! নৃ এমনভাবে বলল কথাগুলো যেন ও কোনও হরর মুভির ভিলেন ভ্যাম্পায়ার!
এবার হো হো করে হেসে ফেলল নৃ, ‘আরে ধুর ভয় পেও না, ফাজলামি করলাম’—একটু থেমে যোগ করল ও, ‘তবে হ্যাঁ, ভয় এজন্যই পেয়ো না যে এখন আর ভয়ের কিছু নাই, এসো, এদিক দিয়ে’—বলে মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইটটা অন করল ও।

খানিকটা হেঁটে ও বাঁদিকের পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে পড়তে শুরু করল। দেখলাম ঘাসে ছাওয়া ঢালে একটা সরু মেটে পথ, অর্থাৎ এদিক দিয়ে মানুষের যাতায়াত আছে। প্রায় তিরিশ ফুট নেমে গেলাম, ঢালটা তেমন খাড়া না, পার্সিও দেখলাম অনায়াসে নেমে এলো, আমার ধারণা এসব কাজ ও আমার থেকে ঢের ভালো পারবে। একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে গেল নৃ, আস্তে করে বলে উঠল, ‘চিচিং ফাঁক!’

বলেই ঘাসের ভেতর লুকানো একটা হাতল ধরে মারল টান। আমার ঘাড়ের কাছটায় শিরশির করে উঠল, পার্সি আমার হাত চেপে ধরল। ভেতরে খুব উজ্জ্বল একটা আলোকিত ঘরের মতো, আমি আশ্চর্য হয়ে উঠলাম, আলো আসছে কোত্থেকে? আমরা পা টিপে টিপে ঘরে ঢুকলাম। দেওয়ালে লাইট ইমিটিং ডায়োডের মতো অনেক ছোট ছোট বাতি বসানো, সেগুলো থেকে ঝাঁক ঝাঁক সাদা আলো ঠিকরে বেরুচ্ছে। ‘সোলার সিস্টেমে চলছে এসব, খুব পাওয়ারফুল ব্যাটারি আছে অনেকগুলা। এখানে ওই রেডিও কন্ট্রোলারের টেস্ট করা হতো, তবে ডিভাসইসটা বিভিন্ন অংশ তৈরি হয়েছে দেশের বাইরে, কিন্তু ওটার আবিষ্কারক একটা বাংলাদেশি!’
‘হোয়াট! কিন্তু কোনওদিনও শুনলাম না যে!’
‘আবিষ্কারক ব্যাপারটা গোপন রেখেছিলেন, সম্ভবত সারা পৃথিবীর কাছেই, শুধু অ্যাপ্লাই করতে চেয়েছেন এই এলাকাতেই। অবশ্য উনি এখন এই গুহাতেই অবস্থান করছেন!’
‘কী বলছো আবার উল্টা পাল্টা!’—ধমক দিলাম নৃকে, একটু আতঙ্কিত বোধ করছিলাম।
‘ভয় নাই, একটা মানুষের পক্ষে সর্বোচ্চ যতটা নিরীহ থাকা সম্ভব, উনি এখন ততটাই শান্ত’—বলে পাশের একটা দরজায় ঠেলা দিল নৃ, খুলে গেল আরেকটা ঘর। ওর পেছন পেছন ঢুকলাম আমরা। একটা ছোটখাট ল্যাব বলা চলে, অনেক ইলেক্ট্রনিকস জিনিসপত্রের আড়ালে একটা টেবিল দেখা গেল, আমরা ওটার কাছে যেতেই পার্সির গলায় ভয়ার্ত একটা আওয়াজ শুনলাম।

একটা মানুষ চেয়ারে বসে আছে, মাথাটা টেবিলে শোয়ানো। বাঁ হাতটা ঝুলছে, ডান হাতটা টেবিলের ওপর। চেহারাটায় অসংখ্য ভাঁজ, হাতের শিরাগুলো কুঁচকানো চামড়ার ওপর দিয়ে বোঝা যাচ্ছে। প্রচণ্ড ফর্সা, মুখের আদলটা আদিবাসীয় মনে হলো।

‘লোকটার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে, বয়স হয়েছিল সাতানব্বুই বছর আট মাস, হার্ট অ্যাটাকই হবে সম্ভবত। লাশে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখিনি’—একটা পাসপোর্ট হাতে নিয়ে দেখাল নৃ, ‘প্রায় পঞ্চাশ বছর পর ফিরেছে দেশে, জাপানে পাকিস্তান আমলে গেছিল পড়াশোনা করতে, ষাটের দশকে, সেখানেই ছিল এতদিন, তবে আমেরিকায় নয়েজ অ্যান্ড ভাইব্রেশনের ওপর পোস্ট ডক্টোরাল রিসার্চ করা আছে এমআইটিতে। আর ভদ্রলোক এক ফর্মার আদিবাসী রাজার ভাই, সেই রাজা মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলেন, মারাও গেছিলেন পাকিস্তানে। তার ভাই যে ঘটনাটা ঘটাচ্ছিলেন তা সম্ভবত তার ব্যাক্তিগত ভেন্ডাটা, তবে সহযোগী আছে নিঃসন্দেহে যারা এই আস্তানা তৈরি করতে হেল্প করেছে, আরও অনেকের মতোই এলাকাটায় এরা বাঙালির পদচারণা সীমিত করতে চেয়েছে। ’

ঘরে  অনেক কাগজপত্র ছিল, বুঝলাম নৃ ব্যাপক ঘাঁটাঘাঁটি করেছে।

‘এখানে গুহাগৃহ বানালেন কী করে?’—আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, লোকটার দিকে পার্সিও হতবাক হয়ে চেয়ে আছে। ‘থাকতেন কিভাবে? খাওয়া দাওয়া?’
‘ওসব এখানে করতেন না, এটা ছিল শুধুই গোপন ল্যাব, তবে কিছু জিনিসপত্র এখানে রাখতেন, প্রচুর খাতা পত্র দেখতেই পাচ্ছো। তবে থাকার মতো তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। ভেন্টিলেশন ব্যাবস্থা চমৎকার, এয়ার কন্ডিশনার পর্যন্ত আছে! বোঝা যায় ভদ্রলোক প্রচুর কারিগরি দক্ষতা রাখেন, ঘরটার বেশ কিছু ড্রইং দেখলাম খাতাপত্রে, বুঝলাম এটা উনার নিজেরই ডিজাইন। সোলার প্যানেলগুলা পাহাড়ের ওপর কোথাও। ’
‘তাহলে থাকত কোথায়?’—পার্সি জিজ্ঞেস করল।
‘এখনও জানি না, সম্ভবত কাছের কোথাও, কোনও স্বজাতির বাসায় হবে হয়ত, চিটাগাঙের কোনও  হোটেলেও হতে পারে, পকেটে একটা রেস্টুরেন্টের বিল পেলাম। ’—নৃ বলল।
পার্সি একটু এগিয়ে গেল লোকটার দিকে, ‘কখন মারা গেছে?’
‘রিগর মর্টিস শুরু হয়নি এখনও, সেহেতু সম্ভবত কালকে, এয়ার কন্ডিশনারও চালু আছে, বেশ ঠাণ্ডাই বলা চলে। ’—নৃ ভ্রূ তাকাল পার্সির পায়ের দিকে, পার্সি একটা শক্ত সোলের জুতো পরেছে, টক টক শব্দ হচ্ছে।
ও হঠাৎ বলে উঠল, ‘মনে হয় আমার ভুল হচ্ছে, নিচে একটা সেলার আছে সম্ভবত!’—উত্তেজিত হলো নৃ!

একটা টর্চ নিয়ে ভালো করে মেঝেতে খুঁজতে শুরু করল ও। একেবারে একটা দেয়ালের নিচের ধারে একটা হ্যান্ডেল পেয়ে গেল অবশেষে। টান মারতেই একটা ঢাকনা সরে গেল। নৃ নেমে গেল নিচে। আমরাও একটা মই বেয়ে নামলাম। নিচেও বাতি জ্বলছে। বিছানা, ডাইনিং টেবিল, সব কিছু আছে।
‘গুরু তাহলে এখানেই থাকতেন, মাঝে মাঝে খাবার আনতে যেতেন বাইরে। ’
‘কিন্তু কিভাবে? কোনও ট্রান্সপোর্ট তো নেই। ’
‘আমার ধারণা পাহাড়টার ওপারেই লোকালয় আছে!’—পার্সি বলল।
‘ব্রিলিয়ান্ট, ভাবী, ব্রিলিয়ান্ট! পুরাপুরি সত্য! পাহাড়টার ওপর দিয়ে ওপারে একটা ছোট লোকালয় আছে, খানিকটা দূরে অবশ্য। গুরুমশাই খুব ফিট ছিলেন, অন্তত মারা যাবার আগ পর্যন্ত! উনি মনে হয় নিজেই ওখান থেকে কিছু এনে খেতেন। কেউ আসত বলে মনে হয়নি, বাইরে কেবল এক রকমের পায়ের ছাপ দেখেছিলাম। এই আস্তানাটা বানাতে কেউ হেল্প করলেও এখন আর কেউ আসে না সম্ভবত। হয়ত উনিই চাননি, নিভৃতে জমাতে চেয়েছিলেন গবেষণা আর তার প্রয়োগ। ’—একটু থেমে বলে চলল নৃ, ‘ডিজাইনে এই সেলারটার ছবি ছিল কিন্তু কিছুতেই ধরতে পারছিলাম না কোথায় ঘরটা। ছবিগুলোর লেবেলিং সব জাপানি কিনা!’
‘কিন্তু ব্রিজের কাছে গিয়ে সেই জিনিস পুঁতে আসত কিভাবে?’—আমি প্রশ্ন করলাম।
‘পাহাড়ের ওপার থেকে মনে হয় ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজ করত। ’
‘চলো এবার যাওয়া যাক, রাত অনেক হয়ে যাচ্ছে’—প্রস্তাব দিলাম আমি।
‘হ্যাঁ, কাল আবার আসা যাবে না হয়। ’—নৃ সায় দিল।
উঠতে উঠতে বললাম, ‘আচ্ছা নৃ, তুমি এই এলাকাতেই ঘোরাঘুরি করছিলা কেন?’

জবাবে নৃ জানাল, অনেক দূর থেকেই আসলে রেডিও ওয়েভ ধরা যায়, কিন্তু খুব দুর্বল থাকে সিগন্যাল। ওই ফ্রিকোয়েন্সির ওয়েভ একটাই ছিল বাতাসে। ওটা সে অনেক দূর থেকেই পাচ্ছিল। যত এই জায়গাটার দিকে এগিয়েছে ততই স্ট্রেংথ বেড়ে যাচ্ছিল। পরে আরও জানিয়েছিল নৃ, ও বম্বটার ভেতর কোন অ্যামপ্লিফায়ার পায়নি যা দিয়ে ক্ষীণ তরঙ্গ বিবর্ধিত করা যায়। তাই সেটা ফাটানোর জন্য ঠিকই কাছ থেকে রিমোট চাপতে হতো।

উপরে উঠে এলাম আমরা। মৃত মানুষটার দিকে এগিয়ে গেল নৃ। টেবিল একটা চৌকোনা ছোট যন্ত্র তুলে নিল। ‘চলো যাওয়া  যাক’। আমরা বেরিয়ে এলাম, এবার উঠতে শুরু করলাম, কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়ির কাছে পৌঁছে গেলাম।

‘বিদায়, গুরুমশাই, আপনাকে সশ্রদ্ধ সেলাম এই নাচিজ নৈর্ঋত আহমেদের!’—বলে আচমকা হাতের ওই ছোট্ট যন্ত্রটার একটা বোতাম টিপল নৃ, সাথে সাথে যেন মেঘ গুড়গুড় করে উঠল কোথাও! পায়ের নিচে কেঁপে উঠল মাটি। পার্সি আমাকে আবার চেপে ধরল। বুঝলাম নৃর হাতে ছিল ওই ভাইব্রেশন বম্বের রিমোট কন্ট্রোল, ও গুহাটা পুরো চূর্ণ করে দিয়েছে, ওই ধরনের বম্ব নিশ্চয় ছিল ওই গুহায়।

‘কিছু জিনিস মানুষের হাতে পড়তে নেই, তা হোক না মানুষেরই তৈরি। ’—গাড়িতে উঠে ইঞ্জিন স্টার্ট দিতে দিতে শান্ত কণ্ঠে বলল নৃ।



বাংলাদেশ সময়: ১৪১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।