ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আট প্রহর | সৈয়দ তারিক

কবিতা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১২ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৫
আট প্রহর | সৈয়দ তারিক


      কিছু নিজস্বতা ছিল ঢেউয়ের গভীর বুকে—তবু
      মনে হলো সব উদ্ভাসনা
      তোমার আদিম হাতে থরথর কম্পমান, প্রভু—
      নিষিক্ত সকল সম্ভাবনা।
     
      তবে কি এ-উঞ্ছজীবিতারও শেষ হলো?
      ঘিরেছে কি নগ্ন সীমারেখা?
      খঞ্জ সেই কবেই তো সুবিশাল পাহাড় ডিঙালো,
      অন্ধ তার পেত যদি দেখা!


      দাঁড়িয়ে রয়েছে ওটা পেঁপে গাছ, পাশে পুঁই-লতা
      শ্লথ শব্দে চালাচ্ছে এঞ্জিন,
      যন্ত্রের হাতলে যত মগ্ন আকুলতা
      টাল সামলায় প্রতিদিন।


     
      প্রবল সাম্রাজ্যে চুপে বেড়ে-ওঠা পুদিনার পাতা
      স্বভাবী শিল্পীর শ্রমে ছড়াচ্ছে সুঘ্রাণ;
      সে কবে গা ঢাকা দিয়ে বাঁচিয়েছে নিজেকে বিধাতা—
      নটে শাক করে আত্মদান।
     

      মিকিমাউসের খোঁজে তুমি যাও বিপনীবিতানে,
      আর আমি চুপচাপ ক্যানাবিস ফুঁকে
      মাসির গোঁফের কথা ভাবি। শহরের মাঝখানে
      হরিণ দাঁড়িয়ে থাকে মসৃণ কৌতুকে।
     
      হাতব্যাগ খুলে তুমি তুলে আনো রেশমি রুমাল,
      রাখো ফের থলের ভিতরে,
      তারপর চলে যাও; পড়ে থাকা সুচারু বিকাল
      ডোনাল্ড ডাকের মতো হেসে ওঠে প্যাঁকপ্যাঁক করে।
     

      টবের বেগুন গাছ বড় হয়ে ওঠে ক্রমে ক্রমে,
      তার গায়ে রোদ-জল, তাকে দ্যাখে মুগ্ধ অভিজিৎ;
      আয়ত চোখের পাতা নিমীলিত মোহন শরমে,
      কেঁপে ওঠে ঘিরে-ধরা শীত।
     
      ভাঙে তার সহজিয়া বুকের গভীরে
      পলকা রেশমি চুড়ি, ছিঁড়ে যায় বাঁধনের খেই,
      কুঁড়ির কাঁপন তার কুমারী শরীরে—
      এ-শহরে বুঝি আজ টুনটুনি নেই।
     

      শবেবরাতের ওই মোমবাতি জ্বলেছিল দীপালির রাতে,
      জমাট গন্ধের ঘোরে সম্মোহিত রক্তিম ফানুস
      লিপ্ত হয়ে আছে কোনও বিস্ফোরিত জ্যোতিষ্কের সাথে;
      আকাশপ্রদীপ জ্বলে, মোনাজাতে উদ্ভাসিত ক্রুশ।
     
      বড়ো বেশি ঋণ এই পিছুটানে। চার্বাকসভায়
      বিশেষ অধিবেশন শেষ হলে তবু অপারগ
      মনে হয় নিজেকে শিশুর কাছ হতে টেনে নিতে; দিব্য বিভায়
      ভরে থাকে ক্যাথিড্রাল, প্যাগোডা, মন্দির, সিনাগগ।
     

      কবরের পাশ দিয়ে যেতে হয়েছিল। কবরের পরিপাটি
      মাঝখান দিয়ে হয় যেতে;
      ডানায় ঝাপট মেরে দ্রুত উড়ে গেল যে পাখিটি—
      যেন বেঁচেছিল কোনও বিমুগ্ধ অতীতে।
     
      ঝোপের আড়াল হতে মিশরীয় লোলুপ দেবতা
      জুলজুল চোখে চেয়ে থাকে;
      শুনেছি অনেক সেই সম্রাজ্ঞী বিষয়ে উপকথা:
      চাঁদ চোখ গোল করে দেখে যায় কেবল আমাকে।
     

      আমার শরীরে ওরা ঠেসে দিতে অ্যাট্রোপিন তেড়ে বেড়াচ্ছিল জৈববোধে ছুটে গেছি
      ঊর্ধ্বশ্বাসে—পাগলা কুকুর;
      পৌর সভ্যতার যত দেয়ালে দেয়ালে সেঁটে ছিল
      আলখাল্লাপরা কুলপুরোহিত শ্রীযুক্ত ঠাকুর।
     
      তার চোখে বইছিল সুদূর পাড়ের গাঢ় নদী;
      জ্যোৎস্নাময় হাত তুলে বরাভয় মুদ্রা আঁকলেন;
      আমি ফের দৌড়ালাম: ওরা এসে ধরে ফ্যালে যদি!
      গুরুদেব ফ্যালফ্যাল চেয়ে থাকলেন।



বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।