ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৬৮) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৬৮) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ৬৭তম কিস্তি
__________________________________


অতীতের সকল গোষ্ঠী শাসনের পতন হয়েছে হয় তাদের অতি কঠোর নীতির কারণে নয়ত ধীরে ধীরে নিজেই নাজুক হয়ে পড়ায়। হয় তারা নির্বোধ আক্রোশি হয়ে উঠে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাল হারিয়ে ফেলে নিক্ষিপ্ত হয়েছে; নয়ত নিজেরাই ধীরে ধীরে এমনই উদার এবং ভীত হয়ে উঠেছে যে যখন সৈন্য চালনা দরকার ছিল তখন সন্ধি করে বসেছে; আর অতঃপর কোনো এক নাজুক পরিস্থিতিতে নিক্ষিপ্ত হয়েছে ক্ষমতার বাইরে। তাদের এসব পতন বলা যায়, হয় সচেতনতায় নয়ত অসচেতনতায়। আর পার্টির সাফল্য হচ্ছে তারা চিন্তার এমন এক পদ্ধতি বানিয়েছে যাতে উভয় অবস্থাই একইসঙ্গে বিরাজ করতে পারে। এইটি ছাড়া আর কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক ভিতই পার্টির আধিপত্যকে স্থায়ী করতে পারেনি। কেউ যখন শাসন করতে চায়, আর সে শাসন অক্ষুণ্ণ রাখতে চায়, তাকে তখন বাস্তবতার ধারণাটিকেই বিক্ষিপ্ত করে দিতে হবে। শাসকের গোপন শক্তিই হচ্ছে, সে সকল ভুলের উর্ধ্বে এমন বিশ্বাস তৈরি করা এবং অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া।



দ্বৈতচিন্তার যারা উদ্ভাবক, আর যারা জানে মানসিক প্রতারণার এ এক ব্যাপৃত ব্যবস্থা, তারাই যে দ্বৈতচিন্তার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম চর্চাকারী তেমনটা বলা যাবে না। আমাদের সমাজে যারা কোথায় কী ঘটছে তা নিয়ে সবচেয়ে বেশি জ্ঞান রাখেন তারা আসলে বিশ্বটি ঠিক যেমন, তেমনটি করে দেখেন না। সাধারণভাবে যে যত বেশি বুঝদার, মতিভ্রমও তার তত বেশি, যে যত বেশি বুদ্ধিমান, সে ততই কম প্রকৃতিস্থ। এই বাস্তবতার একটি স্পষ্ট উদাহরণ হচ্ছে—কেউ যখন সামাজিক মাপকাঠিতে উপরে ওঠে তার মধ্যে যুদ্ধের বাতিকও ততবেশি ভর করে। যুদ্ধের প্রতি যাদের মনোভাব যৌক্তিকতার অনেকটা কাছাকাছি তারা বিতর্কিত সীমান্ত এলাকার সাধারণ মানুষ। এই মানুষগুলোর কাছে যুদ্ধ স্রেফ এক অশেষ দুর্যোগ যা প্রায়শই তাদের শরীরের ওপর দিয়ে জলোচ্ছ্বাসের মতো বয়ে যায়। কোন দল জয়ী হলো তা তাদের কাছে পুরোপুরিই অপ্রয়োজনীয় একটি বিষয়। এরা সচেতনভাবেই জানে প্রভুত্বের পরিবর্তন মানেই হচ্ছে নতুন প্রভুর জন্য তাই করতে হবে যা আগের প্রভুর জন্যও তারা করেছে।

অতীতের প্রভুর আচরণই তারা পাবে নতুন প্রভুর তরফে। খানিকটা বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত, যাদের আমরা ‘প্রোল’ বলি, তারাই হচ্ছে একমাত্র যুদ্ধ সচেতন। প্রয়োজন হলে তারা ভয় আর ঘৃণার উন্মত্ততায় সামিল হতে পারে, আবার যখন তাদের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন যুদ্ধ যে চলছে সে কথাটিই তারা দীর্ঘসময় ধরে ভুলে বসে থাকতে পারে। পার্টির উচ্চ পর্যায়ে, সর্বপোরি ইনার পার্টিতেই বাস্তব যুদ্ধ নিয়ে উৎসাহটা দেখা যায়। বিশ্বজয় কথাটিতে বিশ্বাস তাদের মধ্যেই সবচেয়ে দৃঢ়, আবার তারাই জানে এই জয় অসম্ভব। বৈপরীত্যের এই অদ্ভুত একীকরণ—জ্ঞানের সঙ্গে অবজ্ঞার, হতাশাবাদের সঙ্গে উগ্রবাদের—এটাই ওশেনীয় সমাজের অন্যতম প্রধান সাতন্ত্র্যচিহ্ন। আনুষ্ঠানিক আদর্শ অজস্র স্ববিরোধীতায় পূর্ণ, এমনকি যখন কোনো বাস্তবিক কারণ থাকে না তখনও। এভাবেই, পার্টি সমাজবাদী আন্দোলনের প্রতিটি নীতিকে প্রত্যাখ্যান ও পরিবাদ করে চলে, আর তা করে সমাজতন্ত্রেরই নামে। পার্টি শ্রমজীবী শ্রেণির বিরুদ্ধে এক ঘৃণার প্রচার ঘটিয়ে চলে যার উদাহরণ কয়েক শতক আগে মিলবেই না, আর এর সদস্যদের গায়ে চড়িয়ে দেয় বিশেষ উর্দি যা এক সময় গতরখাটা শ্রমিকদের কাছেও অদ্ভুত ঠেকত আর সে কারণেই ছিল এর পরিগ্রহণ।

প্রক্রিয়াগতভাবে পার্টি পরিবারের সৌহার্দ্যের ভিতকে দুর্বল করে দেয় আর এর প্রধানকে একটি নামে ডাকে যা পারিবারিক আনুগত্যের মনোভাবকেই সরাসরি তুলে ধরে। এমনকি আমাদের যে চারটি মন্ত্রণালয়, যার হাতে আমরা পরিচালিত,  তার নামগুলোও কিন্তু বাস্তবের প্রতি তাদের ইচ্ছাকৃত উল্টোনীতি গ্রহণের ধৃষ্টতাকেই তুলে ধরে। শান্তি মন্ত্রণালয়ের কাজ যুদ্ধ নিয়ে, সত্য মন্ত্রণালয় মিথ্যাচারে সামিল, ভালোবাসা মন্ত্রণালয় চালাচ্ছে দমন-নির্যাতন আর প্রাচুর্য মন্ত্রণালয় ক্ষুধামন্দা টিকিয়ে রাখতে ব্যস্ত। এসব স্ব-বিরোধিতা দ্বৈবাৎ ঘটে যাওয়া কিছু নয়, নয় তা সাধারণ কিছু কপটতার ফলও, এসবই স্রেফ দ্বৈতচিন্তার ইচ্ছাচর্চা। আর এই যে স্ববিরোধিতার সামঞ্জস্যতা বিধান কেবল এই ভেবে যে, এতেই ক্ষমতা টিকে থাকবে অনির্দিষ্টকাল। আর কোনো পথে প্রাচীন চক্র ভাঙ্গা যাবে না। মানব সাম্য যদি চিরতরে ব্যাহত করতে হয়—যদি উচ্চশ্রেণিকে, যে নামে আমরা তাদের ডাকি, তাদের নিজ স্থানে স্থায়ী করতে হয়—তার জন্য বিরাজমান মননশীলতাকে বুদ্ধিভ্রংশে নিয়ন্ত্রণ করাই হবে সেরা কার্যকর পথ।

দ্বিতীয় খণ্ডের ৬৯তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।