ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ৩ কিস্তি ৯) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ৩ কিস্তি ৯) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

তৃতীয় খণ্ডের ৮ম কিস্তি
___________________________________


লোকটিকে বাইরে নেওয়া হলো। মাথা হেট করে, জখম হাতটি ডলতে ডলতে অবিন্যস্ত পায়ে নিজেই এগিয়ে গেলেন, সংগ্রামের সকল শক্তিই তখন শেষ তার।

এরপরও কেটে গেল দীর্ঘ সময়। খুলিমুখো মানুষটিকে যখন নিয়ে যাওয়া হয়, তখন যদি মধ্যরাত হয়ে থাকে তাহলে এখন সকাল। আর যদি তখন সকাল হয়ে থাকে, তাহলে এখন বিকেল। উইনস্টন এখন একা। কয়েক ঘণ্টা ধরেই সে একা। সরু বেঞ্চিতে বসে থাকতে থাকতে যখন পশ্চাৎদেশে ব্যথা ধরে যায় তখন মাঝে মধ্যে সে উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করে। তাতে অবশ্য টেলিস্ক্রিনের কটুকাটব্য শুনতে হয় না। রুটির টুকরোটি চোয়ালহীন ব্যক্তি মেঝের ঠিক যেখানটায় ফেলেছিলেন সেখানেই পড়ে আছে। শুরুতে ওটির দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখা কঠিন হলেও এখন পারছে। এখন তার ক্ষুধার চেয়ে পানির তেষ্টাটাই বেশি অনুভব হচ্ছে। মুখের ভেতরটায় কেমন চটচটে আর বিস্বাদ ঠেকছে। ঝিম ধরা শব্দটি আর একই সাদাটে আলো তার মাথার ভেতরে এক ধরনের অচেতনতা ও শূন্যতাবোধ তৈরি করেছে।



আরো ক্ষীণভাবে তার ভাবনায় আসে জুলিয়া। কোথাও বা অন্যত্র সে হয়ত তার চেয়েও চরম ভোগান্তিতে সময় কাটাচ্ছে। এখনই হয়ত প্রচণ্ড ব্যথায় সে কাতরাচ্ছে, চিৎকার পাড়ছে।
‘যদি নিজের কষ্টকে দ্বিগুণ করে নিয়ে জুলিয়াকে বাঁচানোর সুযোগ পাই, তাহলে কি তা করব? হ্যাঁ, করব’—ভাবল সে।
কিন্তু সেতো স্রেফ এক বুদ্ধিবৃত্তিক সিদ্ধান্ত, সে নিয়েছে কারণ সে ভাবছে তার নেওয়াই উচিৎ। সে তো এটা অনুভব করতে পারছে না। এইখানে আপনি কিছুই অনুভব করতে পারবেন না, স্রেফ ব্যথা ছাড়া, আর ব্যথার ধারণা ছাড়া।



এবার একটু উঠতেই হলো কারণ হাড্ডিতে ধরে যাওয়া ব্যথা আর সহ্য করা যাচ্ছিল না; তবে পরক্ষণেই বসেও পড়তে হলো কারণ পায়ের ওপর দাঁড়িয়েও থাকতে পারছিল না। শরীরের যন্ত্রণা যখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে ঠিক তখনই আতঙ্ক ফিরে এলো। কখনো কখনো আবছা আশায় বুক বেঁধে সে ও’ব্রায়েন আর রেজর ব্লেডের কথা ভাবে। ভাবছে রেজর ব্লেডটি তার কাছে আসবে খাবারের মধ্যে করে, যদি কিনা আদৌ তাকে কখনো খেতে দেওয়া হয়। আরো ক্ষীণভাবে তার ভাবনায় আসে জুলিয়া। কোথাও বা অন্যত্র সে হয়ত তার চেয়েও চরম ভোগান্তিতে সময় কাটাচ্ছে। এখনই হয়ত প্রচণ্ড ব্যথায় সে কাতরাচ্ছে, চিৎকার পাড়ছে।

‘যদি নিজের কষ্টকে দ্বিগুণ করে নিয়ে জুলিয়াকে বাঁচানোর সুযোগ পাই, তাহলে কি তা করব? হ্যাঁ, করব’—ভাবল সে।

কিন্তু সেতো স্রেফ এক বুদ্ধিবৃত্তিক সিদ্ধান্ত, সে নিয়েছে কারণ সে ভাবছে তার নেওয়াই উচিৎ। সে তো এটা অনুভব করতে পারছে না। এইখানে আপনি কিছুই অনুভব করতে পারবেন না, স্রেফ ব্যথা ছাড়া, আর ব্যথার ধারণা ছাড়া। এছাড়াও, এও কি সম্ভব, ঠিক যখন আপনি কষ্টে ভুগছেন তখন এমন একটি কারণও কি থাকতে পারে যার জন্য আপনি চাইবেন এই কষ্ট বেড়ে যাক? সে প্রশ্নের জবাব দেওয়ারও সুযোগ এখন নেই।

বুটের ভারী শব্দ আসছে। দরজা খুলে গেল। ও’ব্রায়েন ঢুকলেন।

উইনস্টনের চোখ তার পায়ের দিকে। এই দৃশ্য দেখার পর তার সতর্কতার সকল শক্তিই উবে গেছে। অনেক অনেক বছরে এই প্রথম টেলিস্ক্রিনের উপস্থিতির কথা ভুলে গেছে সে।

‘ওরা আপনাকেও ধরে ফেলেছে!’—চিৎকার করে বলল সে।
‘ওরা আমাকে অনেক আগেই ধরে ফেলেছে’—ক্ষীণ অথচ দুঃখিত স্বরে উচ্চারণ ও’ব্রায়েনের। পা ফেলে একদিকে সরলেন তিনি। তার পেছন থেকে চওড়া বুকের এক রক্ষী লম্বা কালো লাঠি হাতে ঢুকলেন।

‘তুমিও জানো, উইনস্টন’—বললেন ও’ব্রায়েন। ‘নিজেকে ধোঁকা দিও না। তুমি জানতে, তুমি বরাবরই সব জানতে। ’

হ্যাঁ, এখন সে দেখছে, সে তো বরাবরই সব জানত। কিন্তু তা নিয়ে ভাবার সময় এখন নয়। এখন তার চোখ আটকে আছে রক্ষীর হাতের লাঠির ওপর। এখানে সেখানে আঘাত পড়ছে। মাথা, কানের লতিতে, বাহুতে, কনুইয়ে—
কনুই! হাঁটুর ওপর ধপ করে নিজেকে ছেড়ে দিল সে। জরাগ্রস্ত প্রায়, আঘাতপ্রাপ্ত কনুই ডলছে অন্য হাতে। সবকিছুই এক হলুদ আলোয় বিস্ফোরিত হয়ে গেল। অসহনীয়, একটি ঘুষিতেই এত অসহনীয় ব্যথা! এরপর আলো পরিষ্কার হয়ে এলো, তখন সে দেখতে পাচ্ছে অন্য দুজন তার দিকে তাকিয়ে।

রক্ষীটি তার মুষড়ে পড়া দেখে হাসছে। যেভাবেই হোক একটি প্রশ্নের উত্তর মিলেছে। কখনো, পার্থিব কোনো কারণেই, আপনি আপনার ব্যথা বা কষ্ট বাড়াতে চাইবেন না। ব্যথার বিষয়ে আপনার একটিই প্রত্যাশা থাকবে তা হচ্ছে ব্যথা বন্ধ হওয়া। শারীরিক কষ্টের কিংবা ব্যথার চেয়ে খারাপ কিছু এই পৃথিবীতে আর নেই। ব্যথার সামনে কোনো বীরত্ব চলে না, থাকে না বীরের সাহস, মেঝেতে কুঁকড়ে পড়ে থেকে, অকেজো বাম বাহুটি অকারণ চেপে ধরে রেখে সেসবই ভাবতে থাকল সে।

তৃতীয় খণ্ডের ১০ম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।